কাতারি ভাইদের কখনও পরিত্যাগ করবে না তুরস্ক: এরদোয়ান


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ১০, ২০১৭, ১০:১৪ এএম
কাতারি ভাইদের কখনও পরিত্যাগ করবে না তুরস্ক: এরদোয়ান

কাতারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নিতে সৌদি আরবের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। কাতারি ঘাঁটিতে তুর্কি সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দেয়ার পরই তিনি এই অনুরোধ করেন। ছোট এই উপসাগরীয় দেশটির প্রতি রিয়াদের শত্রুতার পরিবর্তে ভ্রাতৃত্ব দেখানো দরকার বলেও মন্তব্য করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

এরদোয়ান বলেন, কাতারকে বিচ্ছিন্ন করা আঞ্চলিক সমস্যার কোনও সমাধান না। এই সংকট নিরসনে নিজের ক্ষমতার মধ্যে সবকিছু করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি।

শুক্রবার তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) এক ইফতার উপলক্ষে রাজধানী ইস্তাম্বুলে দেয়া ওই বক্তব্যে তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের কাতারি ভাইদের পরিত্যাগ করবো না। সৌদি প্রশাসনের কাছে আমার একটি বিশেষ অনুরোধ আছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে আপনারা সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী রাষ্ট্র। আমরা আপনাদের পবিত্র স্থানগুলোর খাদেম বলি। আপনাদের বিশেষভাবে ভ্রাতৃত্বের জন্য কাজ করা উচিৎ, শত্রুতার জন্য নয়। ভাইদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কাজ করতে হবে আপনাদের। দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম সৌদির কাছে আমরা এটাই প্রত্যাশা করি।’

কাতারের ওপর সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার দিকে ইঙ্গিত করে এরদোয়ান বলেন, ‘আমি বলি এটা পুরোপুরি তুলে নেয়া উচিৎ।’ বৃহস্পতিবার ওই চার দেশের এক যৌথ বিবৃতিতে কাতার সংশ্লিষ্ট ৫৯ ব্যক্তি ও ১২ দাতব্য সংস্থাকে ‘সন্ত্রাসী’ তালিকাভুক্ত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আছেন খ্যাতনামা আলেম ও মুসলিম ব্রাদারহুডের আধ্যাত্মিক নেতা ইউসুফ আল কারজাভি।

দেশটির প্রতি অভিযোগ সম্পর্কে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন, ‘এ ধরনের কিছুই হয়নি। আমি এর ভিত্তি সম্পর্কে জানি।’

গত ৫ জুন ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেয়ার অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব এবং তার মিত্র মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় মালদ্বীপ এবং লিবিয়া ও ইয়েমেনের পশ্চিমা সমর্থিত সরকার। ওই অভিযোগকে শুরু থেকেই ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে আসছে কাতারি প্রশাসন।

উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো কাতারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে তুরস্কের। ২০১১ সালে মিসরে আরব বসন্তের সময় এই দুই দেশই মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিয়েছিল। এছাড়া সিরিয়ায় বাশার-বিরোধী লড়াইয়েও তারা বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে। এরদোয়ান বলেন, তিনি কখনোই কাতারকে ‘সন্ত্রাসবাদে’ সমর্থন দিতে দেখেননি।

তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় যারা আমাদের মতো কাতারি ভাইদের পাশে দাঁড়াতে চান, তারা তাদের জন্য খাদ্য যোগান দেন। আমি দুঃখিত, কাতারকে সব ধরনের সমর্থন দেয়া আমরা অব্যাহত রাখবো।’

গত বুধবার কাতারে তুর্কি সেনা মোতায়েন এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে দুই দেশের যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ বিষয়ক একটি বিলে অনুমোদন দেয় তুর্কি পার্লামেন্ট। ২০১৬ সালের এপ্রিলে তুরস্ক এবং কাতারের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বর্তমানে দেশটির রাজধানী দোহার ওই ঘাঁটিতে তুর্কি সেনা মোতায়েনের কাজ চলছে। মোতায়েন শেষ হলে সেখানে যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধজাহাজ পাঠাবে তুরস্ক।

প্রসঙ্গত, এর আগে কাতারের সঙ্গে প্রতেবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্নকে কেন্দ্র করে এরদোয়ান বলেন, কাতারের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদে’ সমর্থন দেয়ার অভিযোগ যদি সত্যিই হতো, তবে তিনি তাতে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করতেন। নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার কথাও জানান তিনি।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় দেয়া ওই বক্তব্যে এরদোয়ান আরও বলেন, ‘শুরুতেই আমি বলছি, কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা মোটেও কোনও ভালো কাজ না। তুরস্ক কাতারের সঙ্গে তার সম্পর্কোন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে। সংকটপূর্ণ সময়ে যারা আমাদের সমর্থন দিয়েছিল, তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন অব্যাহত রাখবে তুরস্ক।’

আরব দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, কাতার ইসলামপন্থিদের সহায়তার দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখিয়ে আসছে দেশগুলো। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। ব্রাদারহুড রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাদের এই আদর্শকে হুমকি হিসেবে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো।

২০১২ সালে মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রাদারহুড নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলেও এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এছাড়া ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন হামাসসহ কয়েকটি শিয়া সংগঠনকে কাতার সহায়তা করে বলেও অভিযোগ আছে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে। যদিও কোনো চরমপন্থি সংগঠনকে সহায়তা দেয়ার অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছে কাতার সরকার।

গো নিউজ২৪/ আরএস

এ সম্পর্কিত আরও সংবাদ


আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর