আরব রাষ্ট্রগুলোর চাপের কাছে কাতার কখনোই নতি স্বীকার করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি। এছাড়া সংকট নিরসনে কাতারের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিতেও কোনও পরিবর্তন আনা হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানী দোহায় এই মন্তব্য করেন মোহাম্মদ বিল আবদুলরহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা আত্মসমর্পণ করতে রাজি নই এবং আমাদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে কখনোই এই কাজে রাজি হবো না।’
কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তার দেশের ওপর প্রতিবেশী দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না। এমনকী মধ্যস্থতার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে হোয়াইট হাউসে যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাতেও তিনি যাবেন না।
উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কাতার তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারবে বলেও জোর দিয়ে বলেন মোহাম্মদ বিল আবদুলরহমান। তিনি বলেন, কাতারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আছে। সংকট নিরসনে তারাই কাজ করবে। এক্ষেত্রে সামরিক সমাধানের কোনও সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেন তিনি।
গত ২৩ মে কাতারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের কিছু তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যাওয়ার পর এ নিয়ে দেশটির সঙ্গে অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর বিরোধ শুরু হয়। ৫ জুন ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেয়ার অভিযোগ তুলে ছোট্ট এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব এবং তার মিত্র মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় মালদ্বীপ এবং লিবিয়া ও ইয়েমেনের পশ্চিমা সমর্থিত সরকার।
এদিকে এই বিরোধে কাতারের পাশে দাঁড়িয়েছে কুয়েত, ওমান, তুরস্ক এবং জার্মানি। মঙ্গলবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, কাতারের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদে’ সমর্থন দেয়ার অভিযোগ যদি সত্যিই হতো তবে তিনি তাতে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করতেন। সৌদি আরব এবং তার মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় দেয়া এক বক্তব্যে এরদোয়ান আরও বলেন, ‘শুরুতেই আমি বলছি, কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা মোটেও কোনও ভালো কাজ না। তুরস্ক কাতারের সঙ্গে তার সম্পর্কোন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে। সংকটপূর্ণ সময়ে যারা আমাদের সমর্থন দিয়েছিল, তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন অব্যাহত রাখবে তুরস্ক।’
বুধবার মধ্যপ্রাচ্যে সংকট উস্কে দেয়া এবং ওই অঞ্চলে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরুর অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল। জার্মান গণমাধ্যম হ্যান্ডেলসব্লাট’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কাতারকে বিচ্ছিন্ন করার বিরুদ্ধে সতর্কতা দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ আরব উপসাগরীয় এই রাষ্ট্রটির অস্তিত্বের ওপর আক্রমণ।
প্রসঙ্গত, আরব দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, কাতার ইসলামপন্থিদের সহায়তার দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখিয়ে আসছে দেশগুলো। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। ব্রাদারহুড রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাদের এই আদর্শকে হুমকি হিসেবে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো।
২০১২ সালে মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রাদারহুড নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলেও এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এছাড়া ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন হামাসসহ কয়েকটি শিয়া সংগঠনকে কাতার সহায়তা করে বলেও অভিযোগ আছে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে। যদিও তা বারবার অস্বীকার করে আসছে কাতার সরকার।
গো নিউজ২৪/ আরএস