ঢাকা শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

হামাস ব্রাদারহুডকে কাতারের সহায়তা দেয়া বন্ধ করতে হবে: সৌদি


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ৭, ২০১৭, ১২:২৫ পিএম
হামাস ব্রাদারহুডকে কাতারের সহায়তা দেয়া বন্ধ করতে হবে: সৌদি

আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চাইলে কাতারের অবশ্যই ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন হামাস এবং আরব অঞ্চলের ইসলামি আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুডকে সহায়তা দেয়া বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের।

গত ২৩ মে কাতারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের কিছু তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যাওয়ার পর এ নিয়ে দেশটির সঙ্গে অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর বিরোধ শুরু হয়। ৫ জুন ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেয়ার অভিযোগ তুলে ছোট্ট এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব এবং তার মিত্র মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় মালদ্বীপ এবং লিবিয়া ও ইয়েমেনের পশ্চিমা সমর্থিত সরকার।

এ প্রসঙ্গে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েক বছর আগে চরমপন্থি গোষ্ঠিগুলোকে সহায়তা, বৈরি গণমাধ্যম এবং অন্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বিষয়ে কাতার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই আমরা।’ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জুবায়ের আরও বলেন, ‘কেউ কাতারকে আঘাত করতে চায় না। সে কোন দিকে যাবে- সেটা তার সিদ্ধান্ত। আমরা অনেক ব্যথা নিয়েই এই পদক্ষেপ নিয়েছি, যাতে এই দেশটি বোঝে যে তাদের নীতিগুলো স্থায়ী না এবং এটা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।’

হামাস এবং মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিয়ে কাতার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং মিসরকে ছোট করছে বলেও অভিযোগ করেন এই সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার ভাষায়, ‘আমরা এটাকে ভালো মনে করি না। মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে হলে তাকে এই নীতি বন্ধ করতে হবে।’

তবে এই মুহূর্তে কাতারের কী করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন, সে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি জুবায়ের। তিনি বলেন, ‘সাধারণ জ্ঞান এবং যুক্তি কাতারকে সঠিক পথে চালিত করবে। কাতারের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত কঠোর এবং দেশটিকে এর বড় মূল্য দিতে হবে। আমরা মনে করি না, কাতারের জনগণ এটা মেনে নেবে।’

এদিকে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বর্তমানে ফিলিস্তিনের গাজা শাসনকারী দল হামাস। বুধবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জুবায়েরের বক্তব্যে ফিলিস্তিন, আরব এবং মুসলিম বিশ্বের জনগণ বিস্মিত। এই সুযোগ ব্যবহার করে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর আরও বেশি সহিংসতা করবে বলেও অভিযোগ করেছে হামাস।

আরব দেশগুলোর মধ্যে এই সংকট নিরসনে মঙ্গলবার সৌদি আরব সফর করে দেশটির বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে কথা বলেছেন কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমাদ আল জাবের। তবে তাদের আলোচনার কোনও বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

ট্রাম্পের সৌদি আরব সফর এবং সেখানে মুসলিম দেশগুলোকে ‘চরমপন্থাবিরোধী’ লড়াইয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানের এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ওই অঞ্চলে এই সংকট শুরু হলো। ওই সফরে সৌদি প্রশাসনের সঙ্গে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি চুক্তি করেছেন ট্রাম্প। কাতারের ওপর আরব দেশগুলোর অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব এবং তার মিত্রদের পক্ষে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।

এদিকে এই বিরোধে কাতারের পাশে দাঁড়িয়েছে কুয়েত, পাকিস্তান, ওমান, তুরস্ক এবং জার্মানি। মঙ্গলবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, কাতারের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদে’ সমর্থন দেয়ার অভিযোগ যদি সত্যিই হতো তবে তিনি তাতে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করতেন। সৌদি আরব এবং তার মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় দেয়া এক বক্তব্যে এরদোয়ান আরও বলেন, ‘শুরুতেই আমি বলছি, কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা মোটেও কোনও ভালো কাজ না। তুরস্ক কাতারের সঙ্গে তার সম্পর্কোন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে। সংকটপূর্ণ সময়ে যারা আমাদের সমর্থন দিয়েছিল, তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন অব্যাহত রাখবে তুরস্ক।’

বুধবার মধ্যপ্রাচ্যে সংকট উস্কে দেয়া এবং ওই অঞ্চলে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরুর অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল। জার্মান গণমাধ্যম হ্যান্ডেলসব্লাট’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কাতারকে বিচ্ছিন্ন করার বিরুদ্ধে সতর্কতা দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ আরব উপসাগরীয় এই রাষ্ট্রটির অস্তিত্বের ওপর আক্রমণ।

এছাড়া পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বলেছেন, কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না ইসলামাবাদ। মধ্যপ্রাচ্যের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ কুয়েত ও ওমান কাতারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করছে না। কাতার ইস্যুতে চলমান সংকট অব্যাহত থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া ও জিসিসির ভবিষ্যত শঙ্কায় ফেলবে বলে মনে করে কুয়েত ও ওমান।

প্রসঙ্গত, আরব দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, কাতার ইসলামপন্থিদের সহায়তার দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখিয়ে আসছে দেশগুলো। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। ব্রাদারহুড রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাদের এই আদর্শকে হুমকি হিসেবে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো।

২০১২ সালে মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রাদারহুড নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলেও এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এছাড়া ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন হামাসসহ কয়েকটি শিয়া সংগঠনকে কাতার সহায়তা করে বলেও অভিযোগ আছে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে। যদিও তা বারবার অস্বীকার করে আসছে কাতার সরকার।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও