ঢাকা শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

উপসাগরীয় সংকট: কাতারের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ৭, ২০১৭, ০৯:৪৯ এএম
উপসাগরীয় সংকট: কাতারের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক

কাতারের সঙ্গে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের ছয়টি দেশ সম্পর্কচ্ছেদ করলেও ছোট্ট এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। কাতারের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও গভীর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

মঙ্গলবার তিনি বলেন, কাতারের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদে’ সমর্থন দেয়ার অভিযোগ যদি সত্যিই হতো তবে তিনি তাতে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করতেন। সৌদি আরব এবং তার মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার কথাও জানিয়েছেন এরদোয়ান।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় দেয়া এক বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতেই আমি বলছি, কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা মোটেও কোনও ভালো কাজ না। তুরস্ক কাতারের সঙ্গে তার সম্পর্কোন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে। সংকটপূর্ণ সময়ে যারা আমাদের সমর্থন দিয়েছিল, তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন অব্যাহত রাখবে তুরস্ক।’

কাতারের সঙ্গে তুরস্কের গভীর সম্পর্ক থাকলেও সৌদি আরবসহ আরব উপসাগরীয় অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। মঙ্গলবারের বক্তব্যে রিয়াদের কোনও সমালোচনা করেননি এরদোয়ান। উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) রাষ্ট্রগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে দোহার শান্ত এবং গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করে এই তুর্কি নেতা বলেন, ‘কাতারকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা কোনও সমস্যার সমাধান না। কাতারকে সন্ত্রাসবাদে সমর্থনকারী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা খুব মারাত্মক কাজ। আমি কাতারি নেতাদের ভালো করেই চিনি। তারা যদি এমন কোনও কাজে সম্পৃক্ত থাকতেন, তবে কোনও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আমিই প্রথম এর বিরোধিতা করতাম।’

এর আগে কাতারের প্রতি সমর্থন জানায়, ওমান, কুয়েত এবং পাকিস্তান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বলেছেন, কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না ইসলামাবাদ। মধ্যপ্রাচ্যের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ কুয়েত ও ওমান কাতারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করছে না। কাতার ইস্যুতে চলমান সংকট অব্যাহত থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া ও জিসিসির ভবিষ্যত শঙ্কায় ফেলবে বলে মনে করে কুয়েত ও ওমান।

সোমবার (৫ জুন) কথিত ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেয়ার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মালদ্বীপ এবং ইয়েমেন ও লিবিয়ার পশ্চিমা সমর্থিত সরকার।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সৌদি প্রেস এজেন্সিতে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিঘ্ন করার লক্ষ্যে মুসলিম ব্রাদারহুড, আইএস এবং আল-কায়েদাসহ বেশকিছু সন্ত্রাসী সংগঠন ও বিভক্ত গোষ্ঠির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কাতার এবং তারা তাদের গণমাধ্যমের মাধ্যমে এসব গোষ্ঠির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।’

এছাড়া ইরান সমর্থিত শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোকে সমর্থনের অভিযোগও তোলা হয় ওই বিবৃতিতে। এপ্রিলে সৌদি আরব সফরের সময় ইরানকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী অর্থায়নের দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য এরই মধ্যে এই সংকটের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দায়ী করেছে ইরান।

কাতারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের কিছু তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যাওয়ার পর এ নিয়ে দেশটির সঙ্গে অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর বিরোধ শুরু হয়। কাতারি কর্তৃপক্ষের দাবি, হ্যাকাররা ইরান ও ইসরায়েল সম্পর্কে তাদের আমিরের ভুয়া কিছু মন্তব্য প্রকাশ করেছে। তবে এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে উপসাগরীয় দেশগুলো। আল জাজিরাসহ কাতারভিত্তিক সব গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয় তারা।

সর্বপ্রথম কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয় বাহরাইন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাতারের রাজধানী দোহা থেকে তারা তাদের কূটনৈতিক মিশন প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে এবং একই সময়ের মধ্যে কাতারি কূটনীতিকদেরও বাহরাইন ছাড়তে বলা হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারি নাগরিকদের তাদের দেশে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে এবং সেখানে থাকা কাতারের বাসিন্দাদের দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। এক বিবৃতিতে মিসর জানিয়েছে, কাতার মিসরবিরোধী নীতি গ্রহণ করেছে। কায়রো সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেয় না। তাই দেশটির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে।

এই সংকটে আরব উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। সিডনি থেকে তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সব পক্ষকে আলোচনায় বসে তাদের মতপার্থক্য নিরসনের আহ্বান জানাই। এই সংকট নিরসনে যদি আমাদের করার কিছু থাকে, তবে আমরা করবো। আমরা মনে করি, জিসিসির ঐক্যবদ্ধ থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।’

বর্তমানে কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের সেন্ট্রাল কমান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানে ১০ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, আরব দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, কাতার ইসলামপন্থিদের সহায়তার দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখিয়ে আসছে দেশগুলো। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। ব্রাদারহুড রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাদের এই আদর্শকে হুমকি হিসেবে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো।

২০১২ সালে মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রাদারহুড নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলেও এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এছাড়া ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন হামাসসহ কয়েকটি শিয়া সংগঠনকে কাতার সহায়তা করে বলেও অভিযোগ আছে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে। যদিও তা বারবার অস্বীকার করে আসছে কাতার সরকার।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও