সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা: বিচারের মুখে তুরস্কের ১৭ সাংবাদিক


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০১৭, ০১:১৩ পিএম
সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা: বিচারের মুখে তুরস্কের ১৭ সাংবাদিক

সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা দেয়ার এক মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন তুরস্কের একটি দৈনিক পত্রিকার ১৭ সাংবাদিক। দোষী প্রমাণিত হলে ৪৩ বছর পর্যন্ত সাজা ভোগ করতে হতে পারে তাদের।

জমহুরিয়াত নামের ওই পত্রিকার সাংবাদিকদের নয় মাস আগে গ্রেফতার করে তুর্কি কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে আছেন পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক এলিফ গুনে। তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টার এক বছর পূর্তি উৎসবের এক সপ্তাহের মাথায় তাদের এই বিচারকাজ শুরু হতে যাচ্ছে।

গত বছরের ১৫ জুলাই তুর্কি সেনাদের একটি বিপথগামী দল এরদোয়ান সরকারকে উৎখাত করে দেশটির ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। ওই ঘটনায় নিহত হয় ২৬০ জন মানুষ। আহত হয় ২ হাজার ১৯৬ জন। মাঝরাতে রাজপথে নেমে এসে অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় তুর্কি জনগণ। এরদোয়ান সরকারের অভিযোগ, অভ্যুত্থান চেষ্টায় সহায়তা করেছিল নামধারী কিছু সাংবাদিক ও গণমাধ্যম।

ওই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তুরস্কের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসিত আলেম ফেতুল্লাহ গুলেন ওই অভ্যুত্থান চেষ্টার মূলহোতা। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি। গুলেনের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সমালোচকরা মনে করছেন, অভ্যুত্থান চেষ্টার সুযোগ নিয়ে বিরোধীদের দুর্বল করতে চাইছেন এরদোয়ান। তবে তা মানতে নারাজ তুর্কি সরকার।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সম্প্রতি দেশটির প্রধান বিরোধী দল সিএইচপিকে ১৫ দিনব্যাপী সমাবেশ করার সুযোগ দিয়েছে সরকার। তারা রাজধানী আংকারা থেকে ইস্তাম্বুল পর্যন্ত পদযাত্রা করেছেন। এতে কোনও বাধা দেয়া হয়নি। ইস্তাম্বুলের সমাবেশে তাদের ১৫ হাজার পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। সুতরাং বিরোধীদের ওপর নিপীড়নের যে অভিযোগ, তা মোটেও ঠিক নয়।

গণমাধ্যমের ওপর তুর্কি সরকারের দমন-পীড়নের যে অভিযোগ এসেছে, সে সম্পর্কে চলতি মাসে বিবিসির হার্ডটক অনুষ্ঠানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানান, বর্তমানে মাত্র দুইজন প্রকৃত সাংবাদিক জেলে রয়েছেন। তিনি বলেন, বাকি যাদের সাংবাদিক বলা হচ্ছে, তারা সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারা মানবাধিকার সংস্থার কর্মী এবং সাংবাদিক পরিচয়ে তুরস্কবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় খেলাফত পতনের পর মোস্তফা কেমাল আতাতুর্ক সেক্যুলার তুরস্ক প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর বারবার সেনাঅভ্যুত্থানের কাছে হোঁচট খেয়েছে দেশটির গণতন্ত্র। প্রথমবার ১৯৬০ সালে সেনাঅভ্যুত্থান হয় তুরস্কে। বন্দি করা হয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্টকে। দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে ক্ষমতা নেয় সেনাবাহিনী। ১৯৮০ সালে আবারও অভ্যুত্থান হয় তুরস্কে। সর্বশেষ হয় ১৯৯৭ সালে। নিষিদ্ধ করা হয় প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন আরবাকানের ওয়েলফেয়ার পার্টি।

ওই দল থেকে বেরিয়ে এসেই জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি করেন তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসে দলটি। এরপর থেকে কোনও নির্বাচনে হারেনি এরদোয়ানের দল। তুরস্কও পৌঁছেছে স্থিতিশীল অবস্থায়। অর্থনীতি এবং অবকাঠামোতে এসেছে নজিরবিহীন উন্নয়ন। অনেকে একে বলেন, ‘অর্থনীতি ও উন্নয়নের এরদোয়ান মডেল’।

গো নিউজ২৪/ আরএস

এ সম্পর্কিত আরও সংবাদ


আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর