ঢাকা শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
অভ্যুত্থান চেষ্টার ১ বছর

লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে আবেগী এরদোয়ান


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০১৭, ০২:৩৭ পিএম আপডেট: জুলাই ১৬, ২০১৭, ০৮:৩৭ এএম
লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে আবেগী এরদোয়ান

তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টার প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সামনে আবেগময় বক্তব্য দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। বক্তব্যে অভ্যুত্থান প্রতিহতকারীদের প্রশংসা করেছেন তিনি।

স্থানীয় সময় শনিবার তুরস্কের বসফরাস সেতুর ওপর ওই সমাবেশ থেকে অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের ‘মাথা গুড়িয়ে দেয়ার’ হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। গত বছরের ১৫ জুলাই ওই অভ্যুত্থান চেষ্টার পর সেতুটির নাম পাল্টে ‘শহিদ সেতু’ করা হয়েছে। বিপথগামী সেনাদের গুলিতে এই সেতুর ওপর প্রাণ হারায় অনেক অভ্যুত্থান বিরোধী।

এরদোয়ান তার বক্তব্যে তুরস্কে মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। ষড়যন্ত্রকারীদের গুয়ান্তানামো বে কারাগারের মতো পোশাক পরিয়ে বিচার করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘প্রথমেই আমরা চক্রান্তাকারীদের মাথা গুড়িয়ে দেবো। আইনের শাসনের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি সরকার আছে আমাদের।’ মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ‘পার্লামেন্ট যদি এটা আমার কাছে আনে, তবে আমি তাতে স্বাক্ষর করে দেবো।’ এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত হওয়ার আশায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করেছিল তুরস্ক।

বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সরকারি বিমানে চড়ে রাজধানী আংকারায় পৌঁছেন এরদোয়ান। এ সময় তাকে প্রহরা দেয় একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। বিমান থেকে নেমে লক্ষাধিক সমর্থকের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে এরদোয়ান বলেন, ‘ওই রাতে জনতার হাতে কোনও অস্ত্র ছিল না। তাদের হাতে ছিল পতাকা। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের বিশ্বাস। আমি আমার জাতির সেসব সদস্যের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা তাদের দেশকে রক্ষা করেছে।’

সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমও। তিনি বলেন, ‘এক বছর আগের সেই কালো রাত আজ এক মহাকাব্যে পরিণত হয়েছে। একে ‘স্বাধীনতার দ্বিতীয় যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

‘গণতন্ত্র ও ঐক্য’ দিবস হিসেবে ১৫ জুলাইকে বাৎসরিক ছুটি ঘোষণা করেছে তুরস্ক সরকার। ঠিক এক বছর আগে তুরস্কের বিপথগামী সেনারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে গভীর রাতে ট্যাংক নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। বিমান থেকে সরকারি ভবনগুলোতে বোমা বর্ষণ করছিল তারা। পার্লামেন্ট ভবন; এমনকি সাধারণ মানুষের ওপরও। তাদের প্রতিরোধে রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার তুর্কি।

ওই ঘটনায় সকাল পর্যন্ত নিহত হয় ২৬০ জন মানুষ। আহত হয় ২ হাজার ১৯৬ জন। শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয় তুর্কি জনগণ। গণঅভ্যুত্থানের কাছে ব্যর্থ হয় সেনাঅভ্যুত্থান। সেই জয়েরই প্রথম বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে তুরস্কের মানুষ। যদিও এখন পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সরকার।

এরদোয়ানকে গার্ড অব অনার দেয় সেনারা

ওই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তুরস্কের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসিত আলেম ফেতুল্লাহ গুলেন ওই অভ্যুত্থান চেষ্টার মূলহোতা। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি। গুলেনের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তুরস্কের বিভিন্ন পর্যায়ে- ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি চাকরি, গণমাধ্যম এবং সামরিক বাহিনীতে আছে গুলেনের প্রচুর অনুসারী। সমালোচকরা মনে করছেন, অভ্যুত্থান চেষ্টার সুযোগ নিয়ে বিরোধীদের দুর্বল করতে চাইছেন এরদোয়ান। তবে তা মানতে নারাজ তুর্কি সরকার।

এরদোয়ান সমর্থক ও অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সম্প্রতি দেশটির প্রধান বিরোধী দল সিএইচপিকে ১৫ দিনব্যাপী সমাবেশ করার সুযোগ দিয়েছে সরকার। তারা রাজধানী আংকারা থেকে ইস্তাম্বুল পর্যন্ত পদযাত্রা করেছেন। এতে কোনও বাধা দেয়া হয়নি। ইস্তাম্বুলের সমাবেশে তাদের ১৫ হাজার পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। সুতরাং বিরোধীদের ওপর নিপীড়নের যে অভিযোগ, তা মোটেও ঠিক নয়।

তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী মেহমেদ সিমসেক বলেন, ‘অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট সব বিষয় দেখার জন্য স্বাধীন কমিশন করা হয়েছে। যদি কোনও ভুল হয়ে যায়, তবে তা তারা খতিয়ে দেখবে। আমার ইতোমধ্যে কয়েক হাজার সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে তাদের চাকরিতে ফিরিয়ে দিয়েছি।’

চলতি সপ্তাহে বিবিসির হার্ডটক অনুষ্ঠানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানান, বর্তমানে মাত্র দুইজন প্রকৃত সাংবাদিক জেলে রয়েছেন। তিনি বলেন, বাকি যাদের সাংবাদিক বলা হচ্ছে, তারা সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারা মানবাধিকার সংস্থার কর্মী এবং সাংবাদিক পরিচয়ে তুরস্কবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় খেলাফত পতনের পর মোস্তফা কেমাল আতাতুর্ক সেক্যুলার তুরস্ক প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর বারবার সেনাঅভ্যুত্থানের কাছে হোঁচট খেয়েছে দেশটির গণতন্ত্র। প্রথমবার ১৯৬০ সালে সেনাঅভ্যুত্থান হয় তুরস্কে। বন্দি করা হয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্টকে। দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে ক্ষমতা নেয় সেনাবাহিনী। ১৯৮০ সালে আবারও অভ্যুত্থান হয় তুরস্কে। সর্বশেষ হয় ১৯৯৭ সালে। নিষিদ্ধ করা হয় প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন আরবাকানের ওয়েলফেয়ার পার্টি।

ওই দল থেকে বেরিয়ে এসেই জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি করেন তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসে দলটি। এরপর থেকে কোনও নির্বাচনে হারেনি এরদোয়ানের দল। তুরস্কও পৌঁছেছে স্থিতিশীল অবস্থায়। অর্থনীতি এবং অবকাঠামোতে এসেছে নজিরবিহীন উন্নয়ন। অনেকে একে বলেন, ‘অর্থনীতি ও উন্নয়নের এরদোয়ান মডেল’।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও