শিশুর হার্টে ছিদ্র কেন হয়, লক্ষণ কী?


নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০১৮, ১০:৩০ পিএম
শিশুর হার্টে ছিদ্র কেন হয়, লক্ষণ কী?

ঢাকা :শিশুদের হার্ট হৃদযন্ত্রে জন্মগতভাবে অনেক সময় ছিদ্র থাকে। এ সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশুদের নিয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হয় বাবা-মাকে। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় শিশুর হৃদযন্ত্র তৈরি ও বিকশিত হবার প্রাক্কালেই যদি কোনো প্রকার ত্রুটি হয় এবং শিশু যে হৃদযন্ত্র নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয় তবে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলে।  অনেক সময় একে শিশুর হার্ট এ ফুটা বা ছিদ্র আছে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ডা. খলিফা মাহমুদ তারিক। 

প্রশ্ন : হৃদযন্ত্রের ছিদ্রের সমস্যার কারণ কী? এটি কেন হয়?

উত্তর : হৃদযন্ত্রের চারটি চেম্বার থাকে। দুটো এট্রিয়াম, দুটো ভিট্রিক্যাল। দুটো এট্রিয়ামের মাঝে একে বলা হয় ইন্টারেট্রিয়াল সেপট্রাম। দুটো ভেন্টিকুলারের মাঝে একে বলা হয় ইন্টারভেন্টিকুলার সেপট্রাম। সাধারণত ছিদ্র বলতে যাকে বোঝায় বা এই সেপট্রামের দুটো ছিদ্র হতে পারে। কেননা এরা সম্পূর্ণ পর্দা হিসেবে তৈরি হয় না। এটা বিভিন্ন জায়গা থেকে তৈরি হয়ে পর্দাকে সম্পূর্ণ করে। এটি একটি জন্মগত ত্রুটি। সুতরাং এই সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া যদি বাধাগ্রস্ত হয়, কোনোটাতে ত্রুটি হয়—এই পর্দাটা ছিদ্র হিসেবে জন্মের পর আবির্ভূত হয়। জন্মের পরও হার্টের মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়। অনেক সময় পর্দা যদি ছোট থাকে, তাহলে জন্মের পরও এই ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে অনেক সময় ফুটোকে আমরা এএসডি বলি। আরেকটি হয় ভিএসডি।

প্রশ্ন : লক্ষণ প্রকাশের ক্ষেত্রে এএসডি ও ভিএসডির কি কোনো তারতম্য রয়েছে? নাকি একই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পাবে?

উত্তর : এএসডি একটি লো প্রেশার জোন, যার জন্য এখানে লক্ষণগুলোর প্রকাশ কম থাকে। ভিএসডি হাই প্রেশার জোন, সে জন্য এদের লক্ষণটি প্রকট হয়।  এই অসুখগুলো যে কেবল এককভাবে থাকে, সেটি নয়। কেবল অন্যান্য হার্টের অসুখ যুক্ত থাকলে ৭০/৮০ ভাগ হয়ে যায়। অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে এটি থাকতে পারে। 

প্রশ্ন : এর ব্যাপ্তি যে এত বাড়ছে দিন দিন, এর পেছনে কি কোনো কারণ আছে?

উত্তর : যেসব মায়ের আগে রিবুলা ইনফেকশন হয়, তাদের হয়। যাদের বিভিন্ন ওষুধ বা কেমিক্যালের এক্সপোজার বেশি হয়, তাদের হয়। গরিব শ্রেণির মানুষের বাচ্চাদের বেশি হয়। ওয়ার্কার (কর্মী) যারা, তাদের এগুলো বেশি হচ্ছে। এগুলোর সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে। এগুলোর সঙ্গে কিছু কনজেনিটাল ডিজিজ যেগুলো থাকে, যেমন—ডাউন সিনড্রোম, কোমোজোমাল ডিজঅর্ডার, এগুলোর সঙ্গে হৃদযন্ত্রের ছিদ্রের সম্পর্ক থাকে। কোনো কারণ ছাড়াও সাধারণভাবে এই অসুখগুলো হতে পারে। 

প্রশ্ন : ভিএসডির লক্ষণগুলো কী দেখে প্রকাশ পাবে?

উত্তর : আমি প্রথমে এএসডি থেকে আসি। এএসডি অনেক সময় ছোট বয়সে প্রকাশিত হয় না। তেমন কোনো সমস্যা করে না। বাচ্চা যখন বড় হতে থাকে, তখনই সমস্যাগুলো হতে থাকে। বাচ্চা বড় হলে তখন শান্টিং বেশি হচ্ছে। হার্টের যে কার্যকারিতা, সেটি বেড়ে যাচ্ছে। তখন বাচ্চার কাশি হয়, ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, ঘন ঘন কাশি হচ্ছে। বাচ্চা ঠিকমতো খেতে পারে না। তার বৃদ্ধি হয় না। বাচ্চা যদি একটু বড় হয়, বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়ে পারে না। খেলার সাথি হতে পারে না। তার বুক ধড়ফড় করে। একটি পর্যায় গিয়ে দেখা যায়, তার অল্প কিছুক্ষণ পরিশ্রম করলেই শ্বাসকষ্ট হয়ে যায়। সে জন্য তাদের স্বাস্থ্য ভালো হয় না। পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ থাকে না। এই অসুখগুলো যদি নিয়মিত চলতে থাকে, আরো বেশি জটিলতা তৈরি হয়। 

ভিএসডির ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলোই দ্রুত আসে। তাড়াতাড়ি আসে। ভিএসডি বড়, মাঝারি বা ছোট হয়। ছোট ভিএসডিগুলো অনেক সময় জন্মের পরপরই বোঝা যায় না। কিন্তু মাঝারি বা বড় যেগুলো হয়, সে ক্ষেত্রে জন্মের পরপরই শিশুর শ্বাসকষ্ট হয়। শিশু শ্বাস নিতে পারে না। তার বুকের খাঁচা বসে যায় এবং প্রায়ই তার শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ হয়। তাকে ঘন ঘন হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় অথবা ওষুধ খেতে হয়।

অনেক সময় চিকিৎসকরা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা মনে করেন। হার্টের সমস্যা বোঝেন না। তখন চিকিৎসা দেরি হয়ে যায়। জটিলতা বাড়তে থাকে, যার জন্য শিশুর ক্ষয়টা বেশি হচ্ছে। এই অসুখের জন্য শিশু খেতে চায় না। শিশু বড় হতে চায় না। যারা বড় হতে থাকে, তাদের শ্বাসকষ্ট, হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি সমস্যা হতে থাকে। সুতরাং তারা তাড়াতাড়ি মৃত্যুর দিকে চলে যায়। 

প্রশ্ন : তাহলে মা-বাবার এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?

উত্তর : এর আগে আমি বলব, এই হৃদযন্ত্রের ত্রুটিগুলোর যদি আমি না চিকিৎসা করি, তাহলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে। মূলত তখন আর সেটি ফুটার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তখন হার্টের আরো কিছু পরিবর্তন ঘটে। হার্ট বড় হয়ে যায়। হার্টে এরিদমিয়া তৈরি হয়। ভালভ নষ্ট হয়ে যায়। পালমোনারি হাইপারটেনশন বৃদ্ধি পায়। ফুসফুস একটি পর্যায়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তার মানে যেই জিনিস সহজেই সেরে যেত, সেটি ধীরে ধীরে দেরি হওয়ার কারণে জটিল রূপ ধারণ করে এবং ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। সেটা চিকিৎসা করা যায় না।

সে জন্য আমি বলব, যেসব বাচ্চার এ রকম ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বা তারা দুর্বল অনুভব করে, স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে না। তাদের ঘন ঘন কাশি হচ্ছে, পরিশ্রম করতে পারে না, তাদের একবার শিশু হৃদরোগ সার্জনদের কাছে যাওয়া উচিত। এই সঙ্গে চিকিৎসকদেরও এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

গো নিউজ২৪/আই

স্বাস্থ্য বিভাগের আরো খবর