ফিরে আসুক টিসা বেঁচে থাকুক ভালবাসা


প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০১৭, ১১:২৭ পিএম
ফিরে আসুক টিসা বেঁচে থাকুক ভালবাসা

অদ্ভুত এক টিউমারের নাম ক্রুকেনবার্গ। আর এই অদ্ভুত টিউমারের প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাউনন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী টিসা। সে আজ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। 

টিসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাউনন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিবিএ ১৬তম ব্যাচের ছাত্রী ছিল। সে ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি এবং ২০০৯ সালে এইচএসসি পাশ করে। তারপর অনেক বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ভর্তী হয় দেশে অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংসারের হাল ধরার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে সবেমাত্র যোগ দিয়েছিল একটি বেসরকারী ব্যাংকে। কিন্তু ৪ মাস যেতে না যেতেই তাঁর সকল স্বপ্ন ধুসর হয়ে গেছে।

অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান টিসার পরিবারের নির্ভরতা ছিল একমাত্র সেই। টিসা ছিল তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য। টিসার বাবা বার্ধক্যের কারণে বর্তমানে কিছুই করছেন না, আর টিসার মা গৃহিনী। একমাত্র ছোটবোন সপ্তম শ্রেনীতে পড়ে। তাই টিসা চেয়েছিল চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে দক্ষ নাবিকের মত। কিন্তু ভয়ঙ্কর ক্যান্সারে আক্রান্ত টিসার পরিবার আজ মহাসমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। তার পরিবার তাদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে এতদিন টিসার চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু এখন আর তাদের পক্ষে এর ব্য্য়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছেনা।

এই রমজান মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই পেটে ব্যথা অনুভব করে টিসা। অফিস থেকে সেদিন সিনিয়র আপুকে বলে একটু তাড়াতাড়ি-ই বের হয় সে। ধরে নিয়েছিলো রোজা রাখায় হয়তো গ্যাস্ট্রিকের অসুবিধা হচ্ছে, সে তো হতেই পারে, রোজার প্রথম দিকে সবারই একটু অসুবিধা হয় বলে শুনেছে। কিন্তু সে কি জানতো, ক্যান্সার এমন হুট্ করে আসার জন্য জানান দিচ্ছে? এরপর আর একদিনের জন্যেও অফিসে যেতে পারেনি টিসা। মাঝ রাত থেকেই পেট ফুলতে শুরু করে, সাথে কিছুটা ব্যথা। পরের দিন পেট এতো ফুলে যায় যে বাসার সবাই বুঝতে পারে এটা আর যা-ই হোক, গ্যাস্ট্রিক না।

এরপর টিসাকে জরুরি ভিত্তিতে নিয়ে যাওয়া হয় ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে প্রথমেই টিসার পরিবারে দুঃসংবাদ পায় যে তাঁর ডান ডিম্বাশয়ে (Right Ovary) বিশালাকার এক টিউমার ধরা পড়েছে, আর পেটের ভিতর জমা হয়েছে পানি। জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করে প্রায় ৩.৫ লিটার পানি বের করেন ডাক্তাররা। এরপর টিসার শরীর প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিলে শুরু হয় টিউমারের অপসারণের কাজ। অপারেশনের সময় আরো প্রায় ২.৫ লিটার এবং পরে আরো প্রায় ১ লিটার পানি বের করা হয় পেট থেকে। এরপর যখন পরীক্ষা করা হয়, বড় নিষ্ঠুরের মতো রিপোর্ট আসে, ক্যান্সারে আক্রান্ত দরিদ্র পরিবারের দায়িত্ব নেয়া এই জীবন সৈনিকের।

ক্রুকেনবার্গ টিউমার, নামের মতোই বড় অদ্ভুত এর আচরণ। ক্যান্সারের চিকিৎসা যেখানে শুরু হয় এর উৎপত্তিস্থল নির্ণয়ের মাধ্যমে, সেখানে আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞান বলছে, এই ক্যান্সারের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো উৎপত্তিস্থল নির্ণয় করতে পারার অনিশ্চয়তা। বড় বেপরোয়া এর আচরণ, তেমন কোন সংকেত না দিয়েই একের পর এক ক্ষতি করে যাচ্ছে টিসার।

আর তাই পরবর্তী চিকিৎসা হিসেবে চিকিৎসকরা একুশ দিনের মধ্যে কেমোথেরাপি নেবার পরামর্শ দেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এধরণের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল এবং শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্যই চালিয়ে যেতে হয় দীর্ঘদিন ধরে।প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য টিসাকে নিয়ে যেতে হবে দেশের বাইরে; আর সব দেশে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভবও নয়। মুম্বাইয়ের টাটা হাসপাতালে সবচেয়ে কম খরচে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব কিন্তু তার জন্যও প্রয়োজন হবে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার।

টিসার পরিবার তাঁর চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন এবং করছেন, এখন বাকিটা কি আমরা করতে পারি না? দরিদ্র এই পরিবারের জন্য মানবিক সাহায্য হিসাবে আমরা কি পারি না, টিসার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে? টিসাকে আমরা ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হতে দিতে পারি না কারণ টিসার হেরে যাওয়া মানে ওর একার পরাজয় নয়, আমাদের সবার পরাজয়, মানবতার পরাজয়। আপনার একটু সহযোগিতায় হয়তো টিসা সুস্থ হয়ে আবার সবার মাঝে আবারো ফিরে আসবে।

টিসাকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানাঃ

মুক্তা হোসেন (টিসার মা), হিসাব নম্বরঃ ০০০০২৩৪০৯৬৪৮২, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, লোকাল অফিস শাখা।

মোঃ নজিব উল্লাহ (টিসার বন্ধু), হিসাব নম্বরঃ ৪০১১-৫৩২২৮১-৩০০, এবি ব্যাংক লিমিটেড, মহাখালী শাখা।

বিকাশঃ ০১৬৭২৭২৯৯৯০ এবং ০১৭২২০০৯৮৩২ (পারসোনাল)

ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবঃ ০১৬৭২৭২৯৯৯০৭

 

গো-নিউজ২৪/বিএস

স্বাস্থ্য বিভাগের আরো খবর