চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে কী করবেন


নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ২১, ২০১৭, ০৪:২৮ পিএম
চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে কী করবেন

মশাবাহিত জ্বর ডেঙ্গু আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই আবার শুরু হয়েছে নতুন উপদ্রব। এটাও এক ধরনের জ্বর, যার বাহক সেই এডিস মশাই। এই জ্বরের নাম চিকুনগুনিয়া। ব্যাপকভাগে ছড়ানো জ্বরের কারণে এই শব্দটি ব্যাপক পরিচিতি পেতে শুরু করেছে।

বিষয়টি নিয়ে এখন কমবেশি উদ্বেগ স্পষ্ট। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুর মত চিকুনগুনিয়া প্রাণঘাতি নয়। কাজেই এ নিয়ে ভীতির চেয়ে বেশি দরকার সচেতনতা। আর জ্বর হলে তা তা যথাযথ সময়ে শনাক্ত এবং চিকিৎসা জরুরি। এর পাশাপাশি রোগীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি এই রোগ হলে যেন রোগীকে কোনোভাবে এন্টিবায়োটিক না দেয়া হয়, তার ওপর জোর দিয়েছেন একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক।

১৯৫৩ সালে তানজানিয়ায় চিকনগুনিয়া জ্বরের ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে। চিকনগুনিয়া জ্বরের ভাইরাস একটি আলফা ভাইরাস, গোত্র টোগা ভাইরাস। এটি মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গুর বাহক এডিস Adese aegypti মশা চিকনগুনিয়া জ্বরের ভাইরাসেরও বাহক। 

অন্যান্য মশার কামড়েও এ রোগের বিস্তার হতে পারে তবে তা সীমিত আকারে। এডিস মশা সাধারনত দিনের বেলা কামড়ায়। এ রোগের লক্ষন গুলো হচ্ছে জ্বর , মাথা ব্যাথা , দূর্বলতা , বমি বমি ভাব , মাংশপেশীতে ব্যাথা , হাড়ের জোড় গুলিতে ব্যাথা, শরীরে র্যাশ , হাড়ের জোড় গুলি ফুলে যাওয়া এবং বমি। হাড়ের জোড় গুলি ফুলে যাওয়া এই লক্ষন চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর মধ্যের প্রধান পার্থক্য । 

ডেঙ্গু জ্বরে হাড়ের জোড় গুলি ফুলে যাওয়া থাকে না। চিকনগুনিয়া জ্বরের বাহক এডিস Adese Aegypti মশা কামড়ানোর ৩ থেকে ৭ দিনের ভেতর চিকনগুনিয়া জ্বরের আক্রমন হয়। চিকনগুনিয়া জ্বর কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ ব্যাপি হতে পারে। 

অল্প কিছু ক্ষেত্রে হাড়ের জোড় গুলিতে ব্যাথা কয়েক মাস থাকতে পারে। একবার চিকনগুনিয়া জ্বর হয়ে গেলে সারা জীবনে আর চিকনগুনিয়া জ্বর হয় না। চিকনগুনিয়া জ্বরের চিকিৎসায় কোন এন্টিবায়টিক প্রয়োজন হয় না। চিকনগুনিয়া জ্বরের কোন টিকা নাই। জ্বরের চিকিৎসায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ এবং প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। 

এসপিরিন জাতীয় ওষুধ থেকে বিরত থাকতে হবে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে চিকনগুনিয়া জ্বর নিশ্চত ভাবে সনাক্ত করা যায় তবে সাধারনত রক্ত পরীক্ষা ছাড়া রোগের লক্ষন দেখেই চিকনগুনিয়া সনাক্ত করা হয়। চিকনগুনিয়া জ্বরের কারনে মৃত্যুর সম্ভাবনা খুবই কম বা অতি বিরল।

মেজাম্বিক এর ভাষায় চিকনগুনিয়া অর্থ “ বাঁকা হয়ে যাওয়া ” জ্বরে হাড়ের জোড় গুলি ফুলে যাওয়ার জন্য এই নামকরন।

এদিকে, শুরু হয়েছে চিকনগুনিয়া ভাইরাস প্রতিরোধে সপ্তাহব্যাপী ‘ক্রাশ কর্মসূচি’। এ কর্মসূচির আওতায় ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকনগুনিয়া ভাইরাসের বাহক এডিস মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বটতলায় এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

অনুষ্ঠানে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, চিকনগুনিয়া ভাইরাস নিয়ে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ সময় সপ্তাহব্যাপী ক্রাশ কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার জন্য নগরবাসীকে আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, সারা দেশে এই মৌসুমে মাত্র ১৫০ জন চিকনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এই সংখ্যা যাতে না বাড়ে, সেই বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

এই কর্মসূচির পর ‘এ ব্লক মিলনায়তনে’ বিজ্ঞানভিত্তিক সেমিনারের আয়োজন করে বিএসএমএমইউ। বেলা সাড়ে ১১টায় বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য কামরুল হাসান খানের সভাপতিত্বে এই সেমিনার শুরু হয়।

সেমিনারে বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, চিকনগুনিয়া অসুখে মানুষ মারা যায় না। কিন্তু এ জ্বর যার একবার হয়, সে কখনো ভুলতে পারে না। তাই মশা নিধন অভিযান খুবই জরুরি।

সেমিনারে বক্তব্য দেন অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুনশি, সহযোগী অধ্যাপক তানভির ইসলাম, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. কামাল, সহযোগী অধ্যাপক আবু শাহিন।

অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুনশি বলেন, ‘আমাদের এখানে সাধারণত সেপ্টেম্বরের দিকে এই ভাইরাসটা দেখা যায়। তবে এ বছর মে মাসেই ৪৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে মে মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন। এর মধ্যে ঢাকাতে ২ শতাংশ ও সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে খুলনায়, সাড়ে ৭ শতাংশ।’

চিকনগুনিয়া জ্বর সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত থাকে। তবে তিন-চার দিন পর আবারও হতে পারে। এই জ্বরের উপসর্গগুলো জানিয়ে তানভির ইসলাম বলেন, এই জ্বরে গিরাব্যথা হয়, শরীরে র‍্যাশ দেখা দেয়, পা ফুলে যায়। এই জ্বরে ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল খাওয়াই যথেষ্ট। অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

মো. কামাল বলেন, জ্বর হওয়ার পর চিকনগুনিয়া কি না, তা অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে জ্বরের পাঁচ থেকে সাত দিন পর শনাক্ত করা যায়।

এ ছাড়া সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক এ এ জহির, সানিয়া তাহমিনা, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল।

খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, মশা নিধনে যথেষ্ট পরিমাণ ওষুধ ছিটানো হবে ক্রাশ প্রোগ্রামে। এটা পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা নির্ণয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি করা উচিত। ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে ঢাকার ১৫ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে।


গো নিউজ২৪/এএইচ

স্বাস্থ্য বিভাগের আরো খবর