ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুরুষের পাশবিকতাই নারীকে হিংস্র বানায়!


গো নিউজ২৪ প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০১৭, ০৭:১৮ পিএম
পুরুষের পাশবিকতাই নারীকে হিংস্র বানায়!

বগুড়ার নাম যখন মাথায় আসে বা কারো মুখ থেকে শোনেন তখন আপনার চোখের সামনে কী ভেসে উঠে? নিশ্চয় দই। বগুড়ার বিখ্যাত দই। তাই না? যদি নতুন কারো সঙ্গে পরিচিত হই আর তার বাড়ি যদি হয় বগুড়ায়, সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফসকে দুটো কথা বের হয়ে আসে। প্রথমে, কবে দই খাওয়াচ্ছেন? এরপর, বগুড়ার মানুষ তো খুব ভালো হয়।

আমার অফিসের বস বগুড়ার মানুষ। বইয়ের ভাষায় মানুষ বলতে যেমনটা বুঝায়,  তিনি ঠিক তাই। আমার দেখা ভালো মানুষদের মধ্যে একজন। বগুড়ার আরো একজন আছেন আমার অফিসে। সিনিয়র সাংবাদিক। অভিজ্ঞতার ঝুলি যার পরিপূর্ণ। এতো বড় একজন মানুষ কিন্ত মনে-মুখে কোথাও সেই ভাবের কোনো চিহ্ন নেই। আমরা যারা ‘আন্ডাবাচ্চা’ আছি তাদের পরম যত্নে হাতে-কলমে নিজের মধ্যে থাকা জ্ঞানটুকু বিলিয়ে দিচ্ছেন।

শুধু সিনিয়র এই দুই ব্যক্তিই নন, আমার ভার্সিটিবন্ধুও আছে দুটো। তাদের বাড়িও বগুড়ায়। ওরা খুব ভালো বন্ধু আমার। তাদের সঙ্গে মিশেই বগুড়া সম্পর্কে আমার ভালো একটা ধারণা এসেছে। তারাই আমার দেখা বগুড়ার প্রথম মানুষ, যাদের সঙ্গে মিশেছি।

বগুড়া আর বগুড়ার মানুষ নিয়ে এতো কথা কেন বললাম? এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমাকে একটু বলেন তো, এখন বগুড়ার নাম শুনলে আপনার চোখের সামনে কী ভেসে উঠছে? দই নাকি তুফান ও তার সহযোগীরা? নাকি তুফানের স্ত্রী আশা ও কাউন্সিলর রুমকি? নাকি সেই অত্যাচারিত মা-মেয়ে?

এতোদিনের বগুড়ার ঐতিহ্য যে দই মানুষের চোখের সামনে লোভনীয় হয়ে ভেসে উঠতো, সেই বগুড়াতে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা ও তার কলঙ্কিত পরিবার।

অবশই তুফানের পরিবার কলঙ্কিত, তবে সেটা কখনই বগুড়া শহরকে প্রতিনিধিত্ব করে না বা করছে না। শুধু তা মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। এতো এতো ভালো মানুষের শহরে কীভাবে এমন ‘আবর্জনা’ তৈরি হলো সেটা আমার মতো যাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন।

নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকির কথা না বললেই নয়। ক্ষমতাধর নারী তিনি। একজন কাউন্সিলর হবেন মানুষের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ। সে কারণেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে জনগণ। একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়েকে সহযোগিতা করার কথা না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু একজন কাউন্সিলর হয়ে একটা অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো তো তার উচিত ছিল। সেটা তো তার দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। কিন্তু তা না করে কী করেছেন?

সালিশের নামে ধর্ষণের শিকার সেই ছাত্রী ও তার মায়ের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতিন চালিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন। এরপর হুমকি দিয়েছেন, তোদের মারলে আমার কিছু হবে না। আমি তিনটি ওয়ার্ডের কমিশনার। পুলিশকে টাকা খাওয়াইলেই মামলা ডিসমিস হয়ে যাবে।’

একজন নারী জনপ্রতিনিধি যে এমন দানবীয় হতে পারেন- তা কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না। এতোদিন ধরে ভাবছিলাম, পুরুষের হাতে নির্যাতনের শিকার নারীর পাশে গিয়ে সহানুভূতির স্পর্শ দিতে পারেন একমাত্র নারীই। কোনো নারীর কান্না দেখলে অন্য নারীর চোখও ভিজে ওঠে। কিন্তু রুমকি আমাদের সে ধারণা পাল্টে দিয়েছে। আজ গোটা সমাজ জুড়েই বাঙালি নারীদের ‘হিংস্রতা’ বিষয়ে আলোচনা চলছে।

সারাজীবন শুনে এলাম “নারীরা নাকি নারীদের প্রধান শত্রু”- এ কথাটা কখনোই উড়িয়ে দেই নি। আজকাল কিছু পুরুষ নামের পশুর জন্য এমনিই আমরা নারীরা প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে আছি। সেই জায়গায় যদি আবার নিজ গোত্রীয় আশা-রুমকি-রুমী বেগমের (রুমকির মা) মতো হিংস্র মানুষ যুক্ত হয় তাহলে আমাদের অবস্থা কেমন দাঁড়ালো? ঠিক তেমনটা যেমনটা “ডাঙায় বাঘ পানিতে কুমির”।

গোনিউজ/এন

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ