ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধিক্ রাজীব মীর


গো নিউজ২৪ | নিয়ন মতিয়ুল প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০১৭, ১০:০৮ পিএম আপডেট: জুলাই ১২, ২০১৭, ০৬:২৫ পিএম
ধিক্ রাজীব মীর

প্রমাণিত হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মীর মোশারেফ হোসেন ওরফে রাজীব মীর নিজ বিভাগের একাধিক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করেছেন। আর সে কারণেই তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতও করা হয়েছে।

খবরটা পড়ার পর আজ (১০ জুলাই, ২০১৭) সকালে চমকে গেলাম। মনে পড়লো প্রথম যখন রাজীব মীরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কানে আসে তখন জনপ্রিয় নিউজপোর্টাল বাংলামেইলে ছিলাম। ঘটনার শিকার ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথম নিউজটি তখন বাংলামেইলই করেছিল। তবে নিউজটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই রাজীব মীরের শুভাকাঙ্ক্ষিদের যে ফোনের ঝড় সামলাতে হয়েছিল সে কথা স্মরণ করেই আজ এমন চমকে যাওয়া।

শিক্ষকতার বাইরে রাজীব মীর লেখালেখি করতেন। নারী নিপীড়ন আর যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অনেক সভা সেমিনারে তাকে গলা ফাটাতেও দেখা গেছে। ‘নারীবান্ধব ভাষ্যকার’ হিসেবে সুশীল সমাজে আলাদা একটা ভাবমূর্তিও গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। সে কারণেই হয়তো গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল অনেকের সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন ‘অন্যরকম’ সখ্যতা। 

তাই যৌক্তিকভাবেই রাজীব মীরের মতো একজন ‘নারীবান্ধব শিক্ষক’ ও লেখকের বিরুদ্ধে যখন নিজ বিভাগের কোনো ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন তখন বিষয়টা স্পর্শকাতরই হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে তাই দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হতেই পারে।

সেদিন রাজীব মীরের পক্ষে বাংলামেইলে ফোন দেয়ার তালিকায় ছিলেন টিভি মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পদের এক নারীও। তার ফোনটি আমাকেই ধরতে হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ঘটনার শিকার ছাত্রীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই নিউজটা করা হয়েছে। এরপরও উনি গলা চড়িয়ে বলতে চেষ্টা করছিলেন, কোথাকার কোন এক নগণ্য ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজীব মীরের মতো ‘সম্মানিত শিক্ষকের’ সম্মান নষ্ট করার অধিকার কোনো নিউজ পোর্টালের নেই।

সেদিন এতো ফোন ঝড়ের মুখেও নিউজটি কিন্তু সরিয়ে নেয়া হয়নি। আজ মনে হচ্ছে সেদিনের সিদ্ধান্তটা সাহসী ছিল। তবে প্রশ্ন জাগছে, রাজীব মীরের আগের কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও (চবি) তার বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রী একই অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই ২০০৪ সালের ২৯ মার্চ চবির শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরা শিক্ষক রাজীবকে অবরুদ্ধ করেও রেখেছিলেন। যে ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচারও হয়েছিল।

এরপর জবিতে এসে যখন একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল তখন কারা যেন তার পক্ষে সাফাই গাইতে শুরুও করলেন! খোদ গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও (তাও আবার নারী!) তার পক্ষ নিলেন? কি অবাক কাণ্ড!

বিষয়টি নিয়ে সিনিয়র এক নারী গণমাধ্যমকর্মীর মন্তব্য, চবি থেকে জবিতে বদলির পর বদলে গিয়েছিলেন রাজীব মীর। স্বেচ্ছায় বিভিন্ন সভা সেমিনারে গিয়ে নারীর যৌন হয়রানি আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। এসবের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানান। যৌন নিপীড়নকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও তুলতেন। অথচ তিনি নিজেই দীর্ঘদিন ধরে নিজ বিভাগের ছাত্রীদের সঙ্গে যৌনপ্রতারণা থেকে শুরু করে যৌনসন্ত্রাস পর্যন্ত করে গেছেন। এরচেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে? 

ওই নারী সাংবাদিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, এখন থেকে কোনো সভা সেমিনারে নারীর যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কোনো পুরুষকে উচ্চকণ্ঠ হতে দেখলে খুশি হওয়ার বদলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হতে পারে।

ধিক্ রাজীব মীর, আপনি শুধু নিজের ছাত্রীদের কাছেই কলঙ্কিত নন, সুশীল সমাজের নারীদের মনেও ঢুকিয়ে দিয়েছেন সন্দেহ। নারীদের পক্ষে উদার দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পুরুষ এখন থেকে উচ্চকণ্ঠ হলেও আগের মতো আবেগ ছড়াতে পারবেন না। কারণ, বলা তো যায় না, রাজীব মীরের মতো তিনিও হয়তো মোটাদাগের হিপোক্রেট!

লেখক: সাংবাদিক

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ