ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঐশীর বিচারক আমরা সবাই!


গো নিউজ২৪ | ফারজানা আক্তার প্রকাশিত: জুন ৬, ২০১৭, ১২:৩৪ পিএম
ঐশীর বিচারক আমরা সবাই!

আমরা যারা ঢাকায় হোস্টেলে বা মেসে থেকে  পড়াশোনা করেছি, তাদের মাসের শুরুতে হাত খরচ দেয়া হতো। একটা নিদিষ্ট পরিমান ছিলো সে হাত খরচের। তো প্রতিবার ঢাকায় আসার সময় মা চুপিচুপি ৫০০টাকা বেশি দিয়ে বলতো, "এটা রেখে দে, কখন কোথায় লাগবে কার কাছে পাবি !" এইদিকে আবার আব্বুও ৫০০টাকা বেশি দিয়ে বলতো, "রেখে দাও তোমার কাছে "।  ভাবটা এমন যেনো আব্বু ৫০০টাকা আমার কাছে জমা রাখছে। তারা দুইজন যখন আমার সাথে দেখা করতে আসতো তখনও দুইজন দুইভাবে ৫০০, ১০০০টাকা বেশি দিয়ে যেতো।  এই টাকা দিয়ে প্রেম করেছি, প্রেমিককে উপহার দিয়েছি, বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি করেছি, টুকটাক কেনাকাটা করেছি, ছোটো ভাইবোনকে উপহার দিয়েছি।

পরিমান থেকে একটু বেশি পেতে সবারই ভালো লাগে।  সেটা যদি টাকা হয় তাহলে অনেক পরিকল্পনাও করা যায়। আমার যখন খুব খারাপ লাগে কখনো আব্বুকে ফোন দিয়ে বলি, আবার কখনো মাকে ফোন দিয়ে বলি। যখন যাকে বললে আমার ভালো লাগবে তখন তাকেই বলি। আমার বাবা - মায়ের যে দিকটা সবথেকে ভালো তা হলো বাবাকে যখন মন খারাপের কথা বলি বাবা তখন বলে, "এই কথাটা তোমার মাকে বলবা না, তাহলে তোমার মা কষ্ট পাবে "।   আবার মাকে যখন মন খারাপের কথা বলি তখন মাও আব্বুকে বলতে নিষেধ করে।  আব্বু নাকি কষ্ট পাবে।  আহারে কি ভালবাসা দুইজন দুইজনার প্রতি।  এমন দেখলে কি মন খারাপ থাকে আর !

আমি জানি এমনটা অনেক বাবা - মাই করে থাকে।  কারো একটু বেশি কারো একটু কম। এমন বাবা - মায়ের প্রতি কি  কখনো কোনো রাগ বা বিরক্ত আসতে পারে ? আমি যখন হোস্টেলে থাকতাম, হোস্টেল থেকে বের হবার পর থেকে বাসায় আসার আগ পর্যন্ত আমার মাকে সব আপডেট দিতে হতো। হোস্টেলে আসার পরই তার শান্তি।  এখন আমি বিবাহিত, চাকুরীজীবি তাতেও এই নিয়ম আগের মতোই রয়ে গেছে। আমি আরো অনেকের কাছে এমন কথা শুনি। এমন মা'র প্রতি কি ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছু থাকতে পারে !

আমি, আপনি বা আমরা বাবা - মা'র কাছ থেকে যা পেয়েছি ঐশী কি তা পেয়েছিলো ? নাকি আমি, আপনি বা আমরাই শিশু হয়ে জন্মেছি আর ঐশী এমন বখাটে হয়েই জন্মেছিলো।  বলা হয় শিশুরা নাকি কাদামাটির মতো, ওদের তুমি যেমন করে গড়ে তুলবা ওরা তেমনই হবে ! ঐশীকে বর্তমান ঐশী করে কে গড়ে তুলে ছিলো ? ঐশী নিজেই কি ওকে গড়ে তুললো নাকি ওর বাবা - মা ? আচ্ছা ঐশীর হাতে কে ইয়াবা তুলে দিয়েছিলো ? এই ইয়াবা সাপ্লাইকারী কে বা কারা ? কি চায় ওরা ?ঐশীর হাত খরচ কত ছিলো ? ঐশী ঠিকমতো টিওশনে গেলো কিনা, আসলো কিনা, ঠিকমতো বাসায় ফিরলো কিনা, কাদের সাথে মিশলো এইগুলো দেখার দায়িত্ব কার ছিলো ?

এমন হাজারটা প্রশ্ন সামনে চলে আসবে, যার দ্বায়ভার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঐশীর বাবা - মায়ের ঘাড়েই চলে যাবে। মেয়েটার মা'র প্রতি রাগ ছিলো বেশি।  কি পোড়া কপাল এই মায়ের আর মেয়ের।  যে শব্দটাতে শান্তি দুনিয়ার সবথেকে বেশি,  সেই শব্দের মানুষটার প্রতি তার রাগ বেশি।   

মেয়েটা ঠিকমতো ভালোবাসা না পেলেও নিজের ভিতর একটা ভালোবাসার মন ছিলো।  মেয়েটা কিন্ত ছোটভাইকে কিছু করে নাই , উল্টা নিজের দায়িত্ববোধ থেকে ভাইকে সাথে করেই নিয়ে বেরিয়েছিলো। সেই ঐশীর প্রথম ফাঁসির রায় হয়েছিলো, এখন সেটা কমিয়ে যাবৎজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।  এই জন্য অনেকের রাগ প্রকাশ করতে দেখলাম। কেনো ঐশীর শাস্তি কমানো হলো, একটা বাচ্চা মেয়ের যাবৎজীবন কারাদণ্ড হচ্ছে এটা কম শাস্তি ! যে মেয়েটার এখন ফুলের মতো সুবাস ছড়িয়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা, যার আমার আপনার মতো সুন্দর একটা পরিবারে থাকার কথা, এসব কিছুই নেই এই মেয়েটার, এই শাস্তিই বা মৃত্যর থেকে কম কিসের ?

ঐশীর ফাঁসি হয়ে গেলেই কি সব হয়ে  গেলো।  তাতে কি আমাদের সমাজ ঐশীমুক্ত হয়ে যাবে ? তাতে কি ইয়াবা'র বাবারা ইয়াবা বিক্রি করা বন্ধ করে দিবে ? তাতে কি সব বাবা - মা'রা সন্তানের প্রতি যত্নশীল হয়ে যাবে ?  ঐশী তার পাপের শাস্তি ঠিক পাচ্ছে।  এবার আপনি আপনার ঘর সামলান, পরে না আপনাকেও আবার কি হতে কি হতে হয় !!!!!

 

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ