আইপিএল: ফাইনাল হারলেও ট্রফি যাবে তাদের ঘরে


স্পোর্টস ডেস্ক প্রকাশিত: মে ১২, ২০১৯, ০৪:৪৬ পিএম
আইপিএল: ফাইনাল হারলেও ট্রফি যাবে তাদের ঘরে

একই বাড়িতে থাকা, নামের পরে একই পদবি। তাদের বাবা-রা দুই ভাই, মায়েরা দুই বোন। রোববার আইপিএলের তাজ দখলের লড়াইয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে নামবেন এই দুই ভাই— চেন্নাই সুপার কিংসের দীপক চাহার এবং মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের রাহুল চাহার।

তার আগে কী অবস্থা চাহার পরিবারের? আগ্রায় ফোনে ধরা গেল পরিবারের দুই মাথাকে-দীপকের বাবা লোকেন্দ্র সিং এবং রাহুলের বাবা দেশরাজকে। ‘ দুই ভাইয়ের সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। দুজনকেই বলে দিয়েছি, মাঠে নেমে ২০০ শতাংশ দেবে, না হলে কিন্তু যে-ই ট্রফি জেতো, আমরা খুশি হব না। আমি কিন্তু শরীরী ভাষা দেখে বুঝে যাব, কেউ মাঠে ঢিলেমি দিয়েছে কি না,’ পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন লোকেন্দ্র। 

আর দুই ক্রিকেটারের মায়েরা কি নিজেদের ছেলের নামে পুজো-প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছেন? উত্তরে লোকেন্দ্রই দিলেন তথ্যটা। ‘‘আপনি বোধ হয় জানেন না, আমরা বাবারা যেমন দুই ভাই, ওদের মায়েরা আবার দুই বোন। তাই দুই ছেলের নামেই পুজো দেওয়া হয় এক সঙ্গে।’’

আগ্রায় পুরো যৌথ পরিবার একই বাড়িতে থাকে। আইপিএল ফাইনাল দেখতে পুরো চাহার পরিবারই রবিবার হাজির থাকছে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। রাহুলের বাবা দেশরাজ বলছিলেন, ‘‘আমরা দুই ভাই আর দীপক-রাহুলের মায়েরা তো যাচ্ছেই। আমাদের আরও অনেক আত্মীয়স্বজনও স্টেডিয়ামে থাকবে। কারণ আমরা জানি, চেন্নাই জিতুক কী মুম্বই, আইপিএল ট্রফি আগ্রার চাহার পরিবারেই আসছে।’’ কিন্তু আপনারা তো নিজের নিজের ছেলের দলকেই সমথর্ন করবেন? দেশরাজের জবাব, ‘‘সে রকম কিছু নয়। আমরা চাই ছেলেরা সেরাটা দিক।’’

লোকেন্দ্র সিং আরো বেশি গর্বিত, কারণ শুধু তার এবং তার ভাইয়ের ছেলে আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলছে বলেই নয়। ফাইনালে মুখোমুখি তার দুই ছাত্রও। ‘ আমি একেবারে ছোটবেলা থেকে হাতে করে ওদের দুই ভাইকে ক্রিকেট খেলা শিখিয়েছি। আর এখন তার ফল পাচ্ছি। আইপিএলকে ধন্যবাদ, দুই ভাইকে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য এ রকম একটা মঞ্চ দিয়েছে,’ শনিবার ফোনে বলছিলেন তিনি।

এবারের আইপিএলে পাওয়ার প্লে-র সেরা বোলার বলা হচ্ছে দীপককে। এখনও পর্যন্ত ১৬ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়েছেন। ইকোনমি রেট ৭.৫৩। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, ৭৯ শতাংশ বল তিনি পাওয়ার প্লে-তে করেছেন। পাওয়ার প্লে-তে দীপকের এই সাফল্যের রহস্য কী? বাবা তথা কোচ লোকেন্দ্র বলছেন, ‘‘আমি ছোটবেলা থেকে ওকে দিয়ে নেটে একটা জিনিস করাতাম। নতুন বলে বোলিং। নেটে ও যতটা সময় বোলিং করত, নতুন বলেই করত। বলের পালিশ সামান্য উঠে গেলেই আবার নতুন বল এনে দিতাম। খরচের ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। কখনও পুরনো বলে ওকে বল করতে দিতাম না।’’ একটু থেমে যোগ করলেন, ‘‘এতে করে দীপক যেমন নতুন বলে সুইং করাতে শিখেছে, সে রকমই ওর নিয়ন্ত্রণটাও খুব ভাল হয়েছে। অনেক বোলার আছে, যারা সুইং করাতে পারে, কিন্তু সুইংটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দীপকের এই সমস্যাটা নেই।’’ 

পাশাপাশি মুম্বাইয়ের লেগস্পিনার রাহুলকেও এখনও পরামর্শ দিয়ে চলেছেন তিনি। এবারের আইপিএলে ১২ ম্যাচে ১২ উইকেট, ইকোনমি রেট ৬.৮৩, মুম্বাইয়ের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন এই তরুণ লেগস্পিনার। লোকেন্দ্রর মন্তব্য, ‘‘রাহুলের অন্যতম অস্ত্র হল ওর নিখুঁত লাইন-লেংথ এব‌ং বৈচিত্র। কোচিং করানোর সময় খাতা-পেন নিয়ে নেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম। দেখতাম, ছ’টা বল কী রকম ভাবে করে। রাহুলকে বলতাম, কতটা গতিতে কী রকম ভাবে বল করতে হবে। এক ওভারে অন্তত চার ধরনের বল করতে পারলে খুশি হতাম।’’

প্রথম কোয়ালিফায়ারে রাহুলের মুম্বাইয়ের হাতেই হারতে হয়েছে দীপকের চেন্নাইকে। কিন্তু তাতে অখুশি হওয়ার বদলে খুশিই হয়েছেন দীপকের বাবা। লোকেন্দ্র বলছিলেন, ‘‘সব চেয়ে ভাল লেগেছে ধোনিকে যেভাবে আটকে রেখেছিল রাহুল। ওর হাতে এখন অনেক বৈচিত্র। যার ফলে ওকে খেলতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। ধোনিকেও হল।’’ ওই ম্যাচে চার ওভারে ১৪ রান দিয়ে দু’উইকেট নেন রাহুল। 

আইপিএল চলাকালীন দুই ভাইই নিয়মিত ফোন করেন ‘কোচ’ লোকেন্দ্রকে। কী পরামর্শ দিয়েছেন আপনি? ‘‘রাহুলকে আমি একটা কথা বলেছিলাম। বলের গতি একটু বাড়াতে হবে। আগে ও ঘণ্টায় ৮৫-৮৬ কিলোমিটার গতিতে বল করত। ওকে বলি, গতিটা বাড়াও, তা হলে সাফল্য আসবে। এখন ও ৯০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করছে। আপনারা সবাই দেখছেন, রাহুলকে খেলা এখন কতটা কঠিন হয়ে গিয়েছে।’’ 

আইপিএল ফাইনাল নিয়ে মুম্বাই-চেন্নাই ভক্তদের মধ্যে চূড়ান্ত রেষারেষি, স্নায়ুর চাপ থাকতে পারে, কিন্তু চাহার পরিবারে তার আঁচ নেই। কারণ তারা জানেন, যে-ই জিতুক, আইপিএল আগ্রাতেই আসছে। চাহারদের বাড়িতেই আসছে।

গোনিউজ২৪/এএটি

খেলা বিভাগের আরো খবর