আইপিএল নিলামে বাজিমাত করা কে এই বরুণ?


স্পোর্টস ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮, ১০:৫৩ এএম
আইপিএল নিলামে বাজিমাত করা কে এই বরুণ?

আইপিএল নিলাম এমন এক অনুষ্ঠান যেখানে অচেনা-অজানা প্লেয়ার মুহুর্তেই কোটিপতি বনে যান। অন্যদিকে বিশ্বসেরা হয়েও আনসোল্ড থেকে যান নামি তারকা। এককথায় বৈচিত্রময় আইপিএল নিলাম বাজার।

আইপিএলের নিলামে প্রধানত দুই-তিনটি বিষয়ে নজর দেন দল মালিকেরা। এক সম্প্রতি পারফর্ম, দুই দলের চাহিদা। অর্থাৎ একজন খেলোয়াড় সম্প্রতি কি পরিমাণ পারফর্ম করলো সে বিবেচনায় তার দাম নির্ধারণ হয়। অন্যদিকে দলের কম্বিনেশন ঠিক রাখতে এবং দর কষাকষিতেও এই দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে।

এবার আইপিএলেও সেটির ব্যতিক্রময় হয়নি। যেমনটা নেট বোলার হয়েও রেকর্ড ৮.৪ কোটি রুপী পেলেন বরুণ চক্রবর্তী। তামিলনাড়ু লিগের এই প্লেয়ারকে এতদিন কেউই ভালোভাবে চিনতো না। চিনবেন কি করে, লাইমলাইটে আসার মতো তার আহামরী কীর্তিও ছিল না। তবে হ্যাঁ, সাত রকমের ভ্যারিয়েশন দিয়ে বল করার সক্ষমতা রাখেন বরুণ। আর সে কারণে তাকে দলে ভিড়িয়েছে কিংস ইলেভেন পাঞ্চাব। 

আসন্ন আইপিএল নিলামে ভারুনের বেইস প্রাইজ ছিল ২০ লাখ। তবে দল মালিকদের দর কষাকষিতে ঠিকই তার দাম উঠে চূড়ায়।

এখন ভক্তমনে বরুণ সম্পর্কে নানা প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। তাদের মনের সকল জিঙ্গাসা এবং ধোঁয়াশা দূর করতে ভারতীয় তরুণ সম্পর্কে কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো আমরা।  বরুণের ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিল বল ধরতে ধরতে। শৈশবে বল করার চাইতে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে বল ধরাতেই বেশি আগ্রহ ছিল তার। ১৩ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট মাঠে আসা-যাওয়া বরুণের। তখন উইকেটকিপারই হতে চাইতেন এবং ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত খেলেছেন কিপিং গ্লাভস হাতে। কিন্তু দলে খুব একটা সুযোগ পেতেন না। বয়সভিত্তিক দলগুলো থেকে বেশ কয়েকবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় বরুণ রাগে ক্রিকেটই ছেড়ে দিয়েছিলেন!

মা–বাবার বাধ্য সন্তানের মতোই বরুণ ক্রিকেট ছেড়ে মনোযোগ দিয়েছিলেন পড়াশোনায়। লেখাপড়ায় তার মাথাও ছিল খুব ভালো। চেন্নাইয়ে এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যকলায় ডিগ্রিও নিয়েছেন। খেলাধুলার সঙ্গে তত দিনে সম্পর্ক শেষ বললেই চলে। কিন্তু মনে মনে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দাবিয়ে রাখতে পারেননি। স্থাপত্যকলায় পড়াশোনার পাশাপাশি পাড়ার টেপ টেনিসে সুনাম কুড়িয়েছিলেন ভালোই।

পাঁচ বছরের পড়াশোনা শেষে স্থাপত্যবিদ হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করছিলেন বরুণ। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে বরুণ বুঝতে পেরেছিলেন, এই জায়গা আসলে তাঁর জন্য নয়। এই স্থাপত্যকলায় বন্দী থাকা তার পক্ষে সম্ভব না। তাঁর ধ্যানজ্ঞান আসলে ক্রিকেট মাঠ। বরুণ বুঝে ফেলেছিলেন ২২ গজেই তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটবে, স্থাপত্যকলায় নয়। তাই স্থাপত্যকলার কাজ পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দিলেন ক্রমবেস্ট ক্রিকেট ক্লাবে। তবে বরুণ এবার আর আগের পথে হাঁটেননি, উইকেটরক্ষক থেকে হয়ে যান সিমার অলরাউন্ডার।

কিন্তু বরুণকে আবারও হতাশ হতে হয়। সিমার হিসেবে মাত্র দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল, আসলে তা এক ম্যাচ। দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে গিয়েই হাঁটুর চোটে ছিটকে পড়তে হয় মাঠের বাইরে, সেটি ছয় মাসের জন্য। বরুণের মনে তখনো একটা ভাবনা এসেছিল, সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হলো না তো?

বরুণ ভাবনাটা নিজের মাঝেই ধরে রেখেছিলেন। এরপরই আসে পরিবর্তন। পেসার থেকে স্পিনার। চোট থেকে ফেরার পর তিনি নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে ফেললেন। চেন্নাই লিগের চতুর্থ ডিভিশনে জুবিলি ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দিলেন স্পিনার হিসেবে। এবার সাফল্য ধরা দিল। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৮.২৬ গড়ে, ৩.০৬ রান রেটে তুলে নিলেন ৩১ উইকেট। রান পেলেন ব্যাটিংয়েও। সেই মৌসুমে জুবিলি ক্রিকেট ক্লাবের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও বরুণ!

সেই মৌসুমেই সবার নজর কেড়ে নেন বরুণ। এতে ডাক পান আইপিএলের নেটে। চেন্নাই সুপার কিংসের নেটে ছিলেন চার দিন। তখন তাঁকে পছন্দ করে ফেলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যান মাইক হাসি। বরুণের বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে কলকাতার অধিনায়কও তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজেদের নেটে। এরপর শুরু হয় তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ, মাদুরাই প্যান্থার্স বরুণকে দলে ভেড়ায়। সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ৪ ওভারে ৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে মাদুরাইয়ের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন বরুণ। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর বিজয় হাজারে ট্রফিতেও নিজের প্রতিভা দেখান তিনি। গ্রুপ পর্বে ২২ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।-তথ্যসূত্র প্রথম আলো/ইন্টারনেট

গোনিউজ২৪/এআর

খেলা বিভাগের আরো খবর