টেস্ট ক্যাপকে সস্তা করেছে বাংলাদেশ!


আরিফুর রাজু প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০১৮, ০৪:২২ পিএম
টেস্ট ক্যাপকে সস্তা করেছে বাংলাদেশ!

মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বাংলাদেশ টেস্ট-ওয়ানডের পারফর্ম। একদিনের ফরম্যাটে মোটামুটি ধারাবাহিক হলেও টেস্টে একেবারে নবীন ২০০০ সালে আইসিসি স্বীকৃতি প্রাপ্ত দলটি। পরিসংখ্যান বলছে, টেস্ট আঙিনায় পা ফেলার পর থেকে আজ অবধি মোট ১১০টি টেস্টে অংশ নিয়ে ১১টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ ১০০ শতাংশের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ ফল এসেছে তাদের পক্ষে।

টেস্ট খেলার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাদ বাকি ১১ দল যেখানে দুর্বার গতিতে ছুটছে সেখানে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে? উত্তর পেতে খুব বেশি ভাবতে হবে না। প্রয়োজন নেই গভেষণারও। বরং ছোট্ট একটি বিষয়ে নজর দিলেই সহজ সমাধান মিলবে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অভিজ্ঞদের বসিয়ে প্রতিটি সিরিজেই নতুনদের মাথায় ক্যাপ তুলে দিচ্ছে বিসিবি। টেস্টে যেখানে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন, অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের প্রয়োজেন, সেখানে উল্টো পথে হাঁটছে বিসিবি। 

ইতিহাস ঘাটলে প্রত্যক্ষ হবে, ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড এখন পর্যন্ত ১০০৬টি টেস্ট ম্যাচে অংশ নিয়েও অভিষেক করিয়েছেন ৬৮৩ জনকে। অন্যদিকে দ্বিতীয়স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ার ৮১৪ ম্যাচ খেলে অভিষেক করিয়েছেন ৪৫১ জন প্লেয়ারকে। তৃতীয়স্থানে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫৩৭ ম্যাচের জন্য ৩১৬ জনকে অভিষিক করিয়েছেন। চতুর্থ শীর্ষ দল ইন্ডিয়া ৫২৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। যাতে ২৯৩ জনকে টেস্ট ক্যাপ তুলে দিয়েছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা ৪২৭টি টেস্ট খেলে ৩৩৩ জনের মাথায় ক্যাপ তুলে দিয়েছে।

লিস্টটি একনজরে দেখে নিন।

পঞ্চম নম্বরে যাওয়ার আগে এবার একটু বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে চাই।  লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ১০০টি টেস্টের জন্য বাংলাদেশ দল ৯২ জনকে টেস্ট ক্যাপ পরিয়েছেন। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার বয়স ১৮ পার হওয়ার আগেই সেঞ্চুরির পথে বাংলাদেশ। হিসাব মতে, বছরে ৫ জন করে প্লেয়ারকে টেস্ট ক্যাপ তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ। আর এ সংখ্যাটা টেস্ট খেলুড়ে দলের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অর্থাৎ এক নম্বরে থাকা জিম্বাবুয়ের পরের অবস্থান বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে ১০৭টি টেস্টের জন্য ১০৭ জনকে অভিষেক করিয়েছেন। 

টেস্ট ক্যাপকে ‘স্বস্তা’ করে দেয়া বাংলাদেশ শুধু প্লেয়ারদের অভিষেক করিয়ে ক্ষান্ত হননি। বরং দ্রুত ছেঁটে ফেলতেও সাহায্য করেছে। প্রতিটি ম্যাচে তরুণ নবীনদের সুযোগ করে দেয়ার কারণে ধ্বংস হচ্ছে আলোচিত অনেক সিনিয়রের ক্যারিয়ার। বিশেষ করে অভিজ্ঞ তুষার ইমরান, এনামুল হক জুনিয়র, আব্দুর রাজ্জাক ও শাহরিয়ার নাফিসদের ক্যারিয়ার প্রায়ই মৃত্যুর পথে। 

আরো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল নাগাদ মোট ১৯ জন প্লেয়ারাদের মাথায় টেস্ট ক্যাপ পরিয়েছে বিসিবি। যাদের মধ্যে দলে নিয়মিত সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী মিরাজ ও লিটন দাস ছাড়া বাদ বাকি ১৫ জনই অনিয়মিত। যাদের অনেকে আবার ২/৩ বছরে খেলেছেন মাত্র ৩/৪টি টেস্ট। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য জুবায়ের লিখন-নুরুল হাসান ও শুভাশিষ রায়। যারা ঝড়ের বেগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে আবার টর্নেডো বেগে হারিয়ে গেছেন। ছিটকে পড়েছেন আলোচনার বাইরে। 

হারিয়ে নিজেকে খুঁজছেন লিখন।

কেন তাদের এমন ছিটকে পড়া? কেন প্রদীপের নিচের আলোতে হারিয়ে যাওয়া? এসবের উত্তরে খামখেয়ালিপনা এবং পরিচর্চার অভাবটাই ফুটে উঠে। যে জুবায়ের লিখনকে বলা হয়েছিল ভবিষ্যতের নায়ক, যে শান্তকে বলা হয়েছিল স্মার্ট উইকেটরক্ষক, অভিষেকে রেকর্ড গড়া রাজুরা আজ নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন। কূল কিনারা পাচ্ছেনা নতুনদের আগমনে। বরং ধ্বংসের পথে তাদের ক্যারিয়ার। একই সঙ্গে হতাশায় ফার্স্ট ক্লাসে ৩৭ সেঞ্চুরি হাঁকানো তুষার ইমরান কিংবা তামিমের অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ের নায়ক শাহরিয়ারদের ক্যারিয়ার তো প্রায়ই মৃত।

এমতবস্থায়, বিসিবির উচিত অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের দিকে নজর দেয়া। তাদের পথ অনুসরণ করা। কিংবা অভিজ্ঞদের কাজে লাগিয়ে জুনিয়রদের মানসিকভাবে আরো শক্তিশালীরুপে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। তবেই দ্রুত সুদিন ফিরে আসবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে।-তথ্যসূত্র- ‘হাউস্টাট,ক্রিকইনফো’

গোনিউজ২৪/এআর  

খেলা বিভাগের আরো খবর