ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে যে ৬ সমস্যায় পড়তে পারে বাংলাদেশ


আরিফুর রাজু প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০১৮, ০৬:১২ পিএম
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে যে ৬ সমস্যায় পড়তে পারে বাংলাদেশ

ঢাকা টেস্টে ২১৮ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। খোলা চোখে এটি বড় জয়ের কাতারে পড়লেও আপতদৃষ্টিতে ম্যাচটিতে জিতেও হেরেছে বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টের আগে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যখন সাড়ে তিন দিনে হেরে বসে স্বাগতিকরা তখন অনেকটা তুচ্ছ হয়ে পড়ে ডাবল সেঞ্চুরি কিংবা ঘূর্ণি জাদু। 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ ধুঁকতে থাকার কারণগুলো মোটেও নতুন নয়। বরং দীর্ঘদিন ধরে এসব ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে বেড়াচ্ছে টাইগাররা। যা সমস্যায় ফেলতে পারে আসন্ন সিরিজেও। 

ওপেনিং ব্যর্থতা

তামিম আছে তো খই ভাজ, নেই তো বসে থাক। চুপসে থাক। ব্যর্থ হয়ে মাঠ ছাড়। এশিয়া কাপে ইনজুরিতে পড়ে এই মুহুর্তে মাঠের বাইরে তামিম ইকবাল। দেশ সেরা এই ওপেনারের অনুপস্থিতি বাংলাদেশ ওয়ানডেতে ভালো করলেও ফরম্যাট চেঞ্জের সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থতার পরিচয় দিতে থাকে। তার অনুপস্থিতি লিটন ও ইমরুল কায়েস ওপেনিং সামলানোর দায়িত্ব পান। কিন্তু দুইজনই ছিলেন ব্যর্থ। ২২ গজ যেন রানের মরভূমিতে রুপ নিয়েছিল তাদের কাছে।

টাইগারদের টপঅর্ডারে এমন ব্যর্থতার কারণ হিসেবে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন মানসিক সংর্কীণতাকে।  

সেরা একাদশ নির্বাচনে খামখেয়ালিপনা 

বেশ কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ইউটিউবে একটি বাক্য ভাইরাল হয়। এক লোককে সরকারের কর্তা ব্যক্তির বিরুদ্ধাচরণ করে বলতে শোনা যায়, ‘হাইস্যকর, ব্যাপারটা ‘হাইস্যকর।’’ ঠিক তেমনই টেস্ট স্কোয়াডে চার পেসার থাকা সত্ত্বেও একাদশে একজনকে সুযোগ দেয়াকে যে কেউই হাস্যকর বলে অভিহত করবে। যদিও এ ব্যাপারটি ঢাকা টেস্টে এসে শুধরে নিয়েছে বাংলাদেশ। এক পেসারের পরিবর্তে তিনি ঢাকা টেস্টে দুই পেসার খেলিয়েছেন। সাফল্য না পেলেও ঠিকই ওয়েল ব্যালেন্সড ছিল একাদশটি।

ফিল্ডিংয়ে অমনোযোগীতা :

জন্টি রোডস মাস্টার পিস। তার আগে-পরে ক্রিকেটবিশ্বে আর কোন ফিল্ডারকে এতবেশি ক্ষিপ্রতা সম্পন্ন হতে দেখা যায়নি। কিন্তু তারপরও বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে গুড ফিল্ডিংটা অনেকটা প্যাশনে পরিণত হয়েছে। রান-উইকেট লাভে ব্যর্থ হলেও একজন ফিল্ডার ঠিকই ক্যাচ কিংবা রান চেক দিয়ে দলকে জয় এনে দিতে পারেন। কারণ দিন শেষে একরানও অনেক ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়।

কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন যে টেস্টে আমাদের ফিল্ডারদের প্রায়ই অমনোযোগী থাকতে দেখা যায়। অবশ্য এটিকে অমনোযোগী বললে ভুল হবে, বলতে হবে ক্যাচ লুফে নেয়ার ব্যর্থতা। ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে অভিষিক্তর খালেদের পর পর তিনটি ক্যাচ হাতছাড়া করে তার সতীর্থরা। অথচ এই ক্যাচগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হলে লাভবান হতো খালিদ এবং দলের।  

ক্রিকেটারদের কেন এমন পরিণতি। এ ব্যাপারে অনেকে অনেক মত দিলেও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ গুরুত্ব দিয়েছেন অমনোযোগীতা এবং দায়িত্ব অবহেলাকেই। 

সিনিয়রদের ওপর অতি নির্ভরতা

সাকিব-তামিমকে ছাড়া বাংলাদেশ ভালো করলেও এখনো সিনিয়রদের ছায়া থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। সেরা একাদশে সুযোগ পাওয়ার পরও জুনিয়ররা সিনিয়রদের দিকে চেয়ে থাকেন। দেশের মাটিতে গত কিছুদিনে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে যে দুই টেস্টে হারিয়েছে, তাতে সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবাল পথ দেখিয়েছেন সামনে থেকেই। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের শততম টেস্টে জয়টাও এসেছে দুজনের হাত ধরেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দুজনের অভাবটা টের পেতে দেয়নি দল। কিন্তু সিলেট টেস্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, অন্তত লম্বা দৈর্ঘ্যে এই দুজনের ওপর এখনও কতটা নির্ভর করে বাংলাদেশ।

এদিকে পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে মাশরাফি টেস্টে নেই অনেক দিন থেকে, মাহমুদউল্লাহ থাকলেও নিজেকে সাদা পোশাকে এখনও অপরিহার্য করতে পারেননি/ তার বাইরে এই টেস্টে ছিলেন মুশফিকই, কিন্তু সাকিব-তামিমের না থাকার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি শান্ত-লিটনরা। এক আরিফুল হকই যা একটু চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বাকিদের আর কারও ব্যাটিংয়ে উইকেট না দিয়ে আসার মানসিকতা দেখা যায়নি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সাকিব-তামিমের অভাবটা টের পাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বড় একটা অশনী সংকেতই।

ধৈর্যের অভাব যখন জাতিগত

পরপর উইকেট পড়ার পর একজন ব্যাটসম্যানের গুরু দায়িত্ব পার্টনারশীপ গড়ে তোলা। কিন্তু সিলেট-ঢাকা টেস্টে তার ছিটেফোঁটাও লক্ষ্য করা যায়নি বেশিরভাগ প্লেয়ারের। হাতে গোনা সেই মুশফিক-মুমিনুল-রিয়াদই হাল ধরেছেন দলের। 

গতিতে ভয় :

সাধারণত আমাদের দেশের বোলাররা ১৩০-১৩৫ গতিতে বল করতে সক্ষম। আর ব্যাটসম্যানরাও ঘরোয়াতে কিংবা প্যাকটিস সেশনে তাই মোকাবেলা করে থাকেন। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ-জিম্বাবুয়ে-আফ্রিকান বোলাররা অধিক উচ্চতাসম্পন্ন হওয়াতে তাদের বলের গতিও হয় অনেক বেশি। আর নিয়মিত ফার্স্ট বল মোকাবেলা না করার কারণে আমাদের ব্যাটসম্যানদের কাছে এটি অনেকটা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয় নিয়ে ঢাকা টেস্ট চলাকালীন টাইগার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার নিজেদের ব্যর্থতার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন। যদিও তিনি বলেছেন, এ থেকে পরিত্রানের জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার দল।

গোনিউজ২৪/এআর

খেলা বিভাগের আরো খবর