‘আপনি ১০ বার বলেছেন আমাকে’


স্পোর্টস ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০১৮, ১২:৫৩ পিএম
‘আপনি ১০ বার বলেছেন আমাকে’

বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও শেষ হচ্ছে না আর্জেন্টিনা দল নিয়ে বিতর্ক। অবশেষে বেরিয়ে পড়েছে যে, লিওনেল মেসিদের দুঃস্বপ্নের রাশিয়া সফরের পিছনে ছিল দলের মধ্যে অন্তঃকলহই। গ্রুপ পর্বে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি আর্জেন্টিনার জন্য বাঁচা–মরার ম্যাচ হয়ে উঠেছিল। সে ম্যাচের আগেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল, মেসিরা সবাই বিদ্রোহ করেছেন। সাম্পাওলির অধীনে আর খেলবেন না তারা। তখন এমন খবরকে উড়িয়ে দিয়েছিল এএফএ। 

কিন্তু আর্জেন্টিনার এক সাংবাদিক আরিয়েল সেনোসিয়াইন বলছেন, এমন সব ঘটনার সবই সত্য!

টিওয়াইসি স্পোর্টসের এই সাংবাদিক ও ওলে পত্রিকার কলামিস্ট সেনোসিয়াইন নতুন এক বই প্রকাশ করেছেন। মুন্দিয়াল এস হিস্তোরিয়াস নামের সে বইয়েই বিশ্বকাপের সে টালমাটাল সময়ের কথা উঠে এসেছে।বইয়ে রয়েছে, ক্রোয়েশিয়ার কাছে ০-৩ হারের পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল মেসিদের শিবির।

লুকা মডরিচদের কাছে বড় ব্যবধানে হারের পরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার আতঙ্ক তাড়া করছিল আর্জেন্টিনাকে। সেই ম্যাচের পরেই নাকি মেসি এবং হাভিয়ের মাসচেরানো মিলে কোচ এবং তার দুই সহকারীকে নিয়ে বৈঠক করার ডাক দেন। মেসিদের ডাকা বৈঠকে  সাম্পাওলি খুব মন থেকে বসতে চেয়েছিলেন, বলা যাচ্ছে না। আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থার প্রধান ক্লদিয়ো তাপিয়া ফুটবলারদের এই বিদ্রোহের কথা জানতেন। তাকে জানিয়েই মেসি এবং মাসচেরানো কোচকে নিয়ে বৈঠক করতে যান বলে বইয়ে দাবি করা হয়েছে। এবং, ক্লদিয়ো নাকি সাম্পাওলিকে বলেই দেন, ফুটবলারদের কথা শুনতে হবে। তার পরেই আর বৈঠকে আসা ছাড়া উপায় ছিল না কোচের। 

আর্জেন্টিনা শিবিরের পরিস্থিতি তখন ভয়ানক বলে বইয়ে দাবি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে কোচ এবং ফুটবলারদের সম্পর্ক। মেসি এবং মাচেরানো বৈঠকে কোচের সামনে তাদের বিরক্তি প্রকাশ করতে বাকি রাখেননি বলে বইয়ে লেখা হয়েছে।

মেসি নাকি এমনো বলে দেন কোচের মুখের উপরে যে, ‘আমরা যা বলছি, তার উল্টোটাই তো হচ্ছে। দলের মধ্যে কেউ খুশি নয়। আপনার বক্তব্য জানান।’ বইয়ের বয়ান অনুযায়ী, সাম্পাওলি তখন মেসির কাছে জানতে চান, ‘কোন ব্যাপারে আমি বক্তব্য দেব?’ মেসি এবং মাচেরানোর তখন পাল্টা জবাব, ‘সব ব্যাপারেই দিতে হবে। কেন এমন হচ্ছে? দলে কেউ আপনাকে আর বিশ্বাস করছে না।’

বইয়ে বর্ণনা করা ঘটনা সত্যি হলে সেই জরুরি বৈঠকে তুমুল বাগযুদ্ধই হয় কোচ সাম্পাওলির সঙ্গে মেসিদের। দলের প্রতিনিধি হিসেবেই এরা দু’জনে গিয়েছিলেন কোচের সঙ্গে দেখা করতে এবং সরাসরি বলতে দ্বিধা করেননি যে, কেউ আর তাকে পছন্দ করছে না।

সাম্পাওলিকে আরো একটি ব্যাপারে কড়া কথা শুনিয়েছিলেন মেসি বলে বইয়ে দাবি করা হয়েছে। দেখা গিয়েছিল, সাইডলাইনের ধারে আসা মেসির কাছে পরিবর্ত হিসেবে কাকে নামাবেন, তা জানতে চাইছেন সাম্পাওলি। এটা নিয়েও ক্ষুব্ধ ছিলেন মেসি। বইয়ে লেখা হয়েছে, এই প্রসঙ্গ টেনে মেসি কোচকে বলেন, ‘আমার কাছে দশ বার করে জানতে চাইছিলেন কেন যে, কোন খেলোয়াড়কে আমি চাই আর কাকে চাই না? কখরনা কোনো খেলোয়াড়ের নাম বলিনি আপনাকে। তা হলে কেন এই প্রশ্ন?’

উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের জেরে সাম্পাওলির এক সহকারী তৎক্ষণাৎ পদত্যাগ করতে চান। কিন্তু কোচ সাম্পাওলিই তাকে থামান। সতীর্থকে বলেন যে, আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। এখন এ সব করতে গেলে বিতর্ক আরও বেড়ে যাবে।

রাশিয়ায় ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পরে ফুটবলারদের সঙ্গে সাম্পাওলির একটি জরুরি বৈঠকের খবর নিয়ে ফুটবল বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তখন ফুটবলাররা এবং আর্জেন্টিনা ফুটবল স‌ংস্থা জানিয়েছিল, পুরোটাই মিডিয়ার ফাঁদা গল্প। এর মধ্যে কোনও সত্যতা নেই। এখন আর্জেন্টিনার প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকের বই বাজারে চলে আসার পরে কী ভাবে বিতর্ককে ধামাচাপা দেওয়া সম্ভব হবে, সেটাই প্রশ্ন।

গোনিউজ২৪/এএস

খেলা বিভাগের আরো খবর