বাংলাদেশের ‘ভরাডুবি’র মূলে যা


আরিফুর রাজু প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮, ০৯:৪৫ পিএম
বাংলাদেশের ‘ভরাডুবি’র মূলে যা

একবিংশ শতাব্দিতে এসে যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট কতদূর এগিয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে খোঁজ নেয়া আবশ্যক, কতদূর এগিয়েছে বিশ্বক্রিকেট। কিংবা কতটা ভালো করছে উন্নয়নশীল (ক্রিকেট) দেশগুলো। তবে হ্যাঁ, প্রশ্নের সাদা-মাটা উত্তর: এ দীর্ঘসময়ে আমরা মাশরাফির মতো একজন নেতা কিংবা সাকিব আল হাসানের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার পেয়েছি।  ও হ্যাঁ, আরেকটিতে সাফল্য এসেছে। সেটি হল, ওয়ানডে ও টেস্টে আমাদের হারের মাত্রাটা কিছুটা কমেছে।

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিনে দিনে বিশ্বক্রিকেট উন্নতি করছে, পিছিয়ে নেই আমরাও। কিন্তু  এমন উন্নতির জোয়ারে কেবল মানসিকতার দিক থেকেই আমরা পিছিয়ে। যা অন্যদের চেয়ে আমাদের পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। হাইভোল্টেজ ম্যাচের উত্তেজনায় অন্যরা পুলকিত হলেও মন ঝলসে যায় আমাদের।  সেই আকরাম-নান্নু-হাবিবুল বাশার থেকে এ যুগের মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহ’রা পর্যন্ত ব্যর্থ এখানে। সবাই সেই দূর্বলতার বৃত্তে বন্দি। বের হতে চেয়েও পারেননি অথবা চেষ্টাও করেননি। সেই আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রপির কোয়ার্টারে গিয়ে নির্বিষ হয়ে পড়া। ভারতের মতো দলের ভয়ে নুইয়ে পড়া, সবই দূর্বল মানসিকতার ফল।   

চাপ নিতে ব্যর্থ, তাই তো প্রতিবারই কূলে এসে তরী ডুবাই আমরা। সর্বশেষ ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাইগারদের হার ছিল বেদনার। ম্যাচটিতে আমরা হীনমানসিকতার জোরে হেরেছি তা যে কেউই বলে দেবে। সাকিবের ইনজুরির পর সেদিন টিমের অবস্থা দেখে মনে হল গোটা টিমই যেনো ইনজুরির ব্যাথায় ভুগছে।  তা না হয় দেখুন, সেদিনকার শ্রীলঙ্কার ২২১ রানের বিপরীতে কেন আমাদের এমন হার?  বলবেন, মিরপুরের উইকেট স্লো স্কোরিং, মরা ইত্যাদি ইত্যাদি।  কিন্তু আপনাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে একদিনের লড়াইয়ে এই সংগ্রহ নিতান্তই কম। তারপরও আমাদের এমন পরাজয়।চতুর্থবারের মতো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠে ট্রপি হাতছাড়া হওয়ার পরও তৃপ্তির ঢেকুর তোলা।

শুরুতেই পথচলা অশুভ করেন সৌম্য সরকার।

যাই হোক, হোম ক্রিকেটে স্বাগতিকদের সুযোগ পাওয়ার বিপরীতে মিরপুরকে কলম্বো বানিয়ে উলটো বাংলাদেশকে খেলা শিখিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রপি চিনিয়ে নেয় শ্রীলঙ্কা। সহজ ম্যাচও বাংলাদেশ নিজেদের করে নিতে পারেনি। কেন পারেনি? উত্তর একটাই, আমরা মানসিকভাবে দূর্বল। কেনইবা পারবো আমরা, আমাদের উত্তরসূরীরা পেরেছিল? মনে এমন প্রশ্ন বাজলেও বাজতে পারে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের। মোদ্দকথা, সেদিন সাকিবের ইনজুরি ধুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিল গোটা টিমকে। তাই তো ২২১ রানের বিপরীতে ৭৯ রানে পরাজয়। 

ত্রিদেশীয় সিরিজের পর দ্বিপাক্ষিক লড়াইয়ে দুটি টেস্ট খেলেছে দুই পক্ষ। প্রথমটিতে ড্র, দ্বিতীয়টিতে তিনদিনেই প্যাকেট বাংলাদেশ।  

ওয়ানডে-টেস্ট গেল। স্বল্প ওভারের টি-টোয়েন্টির লাড়াইয়েও সেই আগের রুপ। প্রথমটিতে রেকর্ডময় রান করেও ব্যর্থ। দ্বিতীয়টিতে এসে যেন অন্য বাংলাদেশকে দেখল বিশ্ব। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সিলেটে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাটিং করে ২১০ রান সংগ্রহ করে সফরকারী শ্রীলঙ্কা। ঝড়ের পর টর্নেডো হবে এটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু না, বিপদ সংকেতও মাঝে মাঝে ভুল প্রমাণ হয় তা আরেকবার প্রমাণ করলেন তামিম-মুশফিকরা। 

নতুন মুখেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

লঙ্কানদের ঝড়ের পর খেলতে নেমে নির্বিষ হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। খেলতে নেমেই ২২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে টপঅর্ডার লণ্ডভণ্ড! প্রথমে সৌম্যের বাজেভাবে ফেরা। তিনটি ডট বলের পর হিট করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশকে যে বার্তা দিলেন তার জন্য ইনিংসের ১৮.৪ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি দর্শকদের।  কারণ মানুষ সকাল দেখেই বুঝতে পারে দিনটা কেমন যাবে। তেমনটাই হল আমাদের বেলায়ও। 

এদিকে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠে সেই ভাঙ্গা ক্যাসেটের সুর। ব্যাটিং ব্যর্থতা-বোলারদের দূর্বলতা, ভালো করবো ভবিষ্যতে।  কত কি। 

যাই হোক,আমাদের এই সমস্যা কোনদিনই সমাধান হবে না যদি না আমার মানসিকভাবে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারি।তা না হয় ফিনিশিংয়ের অভাবে আমাদের বড় টূর্নামেন্টগুলোর শেষের আগেই খালি হাতে ফিরতে হবে। এরজন্য নিজেদের আগে থেকেই প্রস্তুত করতে হবে। তাই সতর্কতার সঙ্গে প্রদক্ষেপ নেয়া চাই বিসিবির ।
গোনিউজ২৪/এআর

খেলা বিভাগের আরো খবর