ফুটবলের টানে বিশ্ব ভ্রমণ!


স্পোর্টস ডেস্ক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০১৮, ০৭:৫৬ পিএম
ফুটবলের টানে বিশ্ব ভ্রমণ!

কত রেকর্ডই তো করেন ক্রীয়াবিদরা। মেসি, নেইমার, রোনালদো সারা বিশ্বে কতো জনপ্রিয় কিন্তু তাদের জনপ্রিয়তার পিছনে যারা তাদের সাপোর্ট দিয়ে যান তাদের খবর হয়তো কেউ রাখে না। কিন্তু কিছু পাগলাটে ফুটবল প্রেমি আছে যারা ফুটবলের জন্য নিজের দশে পরিবার ছেড়ে ঘুড়ে বেড়ান বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে। ফুটবলের আসল রসদ নিতে ছুটে আসেন বাংলাদেশ-ভুটানের মতো দেশ গুলোতে।

এমনি একব্যাক্তি হচ্ছে ব্রিটিশ লিও হোয়েনিগ। ফুটবলের টানে টানা ৩০ বছর যাবত একপ্রকার ‘ভবঘুরে’ জীবন কাটাচ্ছেন হোয়েনিগ। তার  পায়ের ছোঁয়া পাওয়া ৬৯তম দেশ হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী লিমিটেড ও চট্টগ্রাম আবাহনী এবং শেখ জামাল ও ফরাশগঞ্জের ম্যাচ দেখে বাংলাদেশের ফুটবলকে অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ভরে চলে গেছেন আবার।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে লিও হোয়েনিগ

চীন থেকে তিন দিনের ছোট এক সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন ব্রিটিশ এই ফুটবল পরিব্রাজক। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসে উপভোগ করেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ দুটি। বুধবার বাংলাদেশে পা রাখা হোয়েনিগ গতকালই ঢাকা ত্যাগ করেছেন। তার নতুন গন্তব্য ভারত।

৫৯ বছর বয়সী হোয়েনিগ পেশায় প্রকৌশলী। কিন্তু বিশ্ব ফুটবল ঘুরে ঘুরে দেখার নেশা ‘ক্যানসারের’ মতো বাসা বেঁধেছে তাঁর হৃদয়ে। তাই পেশাগত কাজকর্ম নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। ফুটবল দেখার ফাঁকে ফাঁকে চাকরি রক্ষা করা মাত্র। না হলে এক বছরের ছুটি নিয়ে পুরোদমে ফুটবল মাঠে ছোটা! পরিবারকেও দেওয়া হয় না তেমন একটা সময়। আট বছরের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী থাকেন চীনে। ফুটবল মাঠের তুলনায় সেখানে তাঁর পদধূলি পড়ে খুব কমই।

২০০২ বিশ্বকাপে বুশান স্টেডিয়ামে ফ্রান্স ও উরুগুয়ের ম্যাচে। সংগৃহীত ছবি২০০২ বিশ্বকাপে বুশান স্টেডিয়ামে ফ্রান্স ও উরুগুয়ের ম্যাচে। সংগৃহীত ছবিঅলিম্পিক মার্শেই-সমর্থক হওয়ায় ১৯৮৯ সালে ফ্রান্স সফর দিয়ে শুরু হয়েছিল হোয়েনিগের ফুটবল অভিযান। প্রায় ৩০ বছর পরে এসে এখনো ক্লাবটির সাফল্য মুখস্থ বলেন ক্লাসের পড়ার মতো, ‘কী দলটাই না ছিল অলিম্পিক মার্শেই। ক্রিস ওয়াডেল, জিন পিয়েরা ও এরিক ক্যান্টোনাকে নিয়ে নিয়মিত জিতত ফ্রেঞ্চ লিগের শিরোপা।’

এর পরে দীর্ঘ পথপরিক্রমায় জার্মানি, ইতালি হয়ে এশিয়ায় পা রাখা। ২০০২ সালের জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপে। কিন্তু প্রিয় দল ফ্রান্স বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। এ নিয়ে আফসোসটা এখনো আছে। তবে ব্রাজিলের ওই দুর্দান্ত প্রজন্মকে স্বচক্ষে দেখার গর্বটাও কম নয়, ‘রোনালদো, রিভালদোকে আক্রমণে খেলতে দেখেছি। কাফু ও রকি জুনিয়রকে দেখেছি ফুলব্যাকে। কী দুর্দান্ত একটা দল। থিয়েরি অরি, বার্থেজদের নিয়ে ফ্রান্স দলটাও ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু ভালো করতে পারল না।’

শুধু এক বিশ্বকাপ দেখে বসে থাকার মানুষ তো নন; ২০০৬ বিশ্বকাপ দেখতে ছুটেছিলেন জার্মানিতেও। হেনরিক লারসন ও জ্লাতান ইব্রাহোমিচের সুইডিশ আক্রমণভাগের গল্প এখনো তাঁর মনে লেগে আছে প্রথম পদ্মার ইলিশ মাছ খাওয়ার স্বাদের মতো, ‘লারসন ও ইব্রাহোমিচের কী দুর্দান্ত জুটি। কিন্তু প্যারাগুয়ের বিপক্ষে তারা কেউ গোল করতে পারল না। সুইডেন ১-০ গোলে জিতল ফেডি লুজেনবার্গের গোলে।’

২০০৬ বিশ্বকাপে বায়ান মিউনিখ স্টেডিয়ামের সামনে। সংগৃহীত ছবি২০০৬ বিশ্বকাপে বায়ান মিউনিখ স্টেডিয়ামের সামনে। সংগৃহীত ছবিবিশ্বকাপ দেখার অভিজ্ঞতা এই দুবারই। তবে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ দেখেছেন অগণিত। সে তালিকায় আছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার ম্যাচ। বাদ যায়নি মালদ্বীপ, ভুটান বা মিয়ানমারও। তাই হয়তো আবাহনী লিমিটেড ও চট্টগ্রাম আবাহনী এবং শেখ জামাল ও ফরাশগঞ্জের খেলা ভালোই লেগেছে তাঁর, ‘বাংলাদেশের লিগের মানটা অনেক মিয়ানমারের মতো। তবে পরিষ্কারভাবে ভুটানের চেয়ে এগিয়ে।’

এক দেশের সীমানা পেরিয়ে আরেক দেশ। এ তথ্যগুলো নিয়ে শিগগিরই প্রকাশিত হবে ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন নাইনটি মিনিটস।’ সেখানে খুব ভালোভাবেই জায়গা পাবে বাংলাদেশের গল্প।

বাংলাদেশ পর্বটা শেষ করে গতকালই পাড়ি জমিয়েছে ভারতে। উদ্দেশ্য আইএসএল ও আইলিগের ম্যাচ দেখা। ওখানেও ক্যামেরা ও ডায়েরি হাতে এক ব্রিটিশ ভদ্রলোককে দেখে হয়তো অবাক হবে অনেকেই। শুধু ফুটবলের টানেই ছুটে এসেছেন এখানে, এটা শোনার পর যে গ্যালারিতে বাড়তি আদর-যত্ন জুটবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফুটবলের টানে যে মানুষটি কাঁটাতারের সীমানাকে জয় করছেন একটু খাতির-যত্ন তার জন্য অবশ্যই প্রাপ্য।
গোনিউজ/টিআই
 

খেলা বিভাগের আরো খবর