একজন মাশরাফী আবিষ্কারক বাবুর গল্প


স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট: প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০১৮, ০৭:০৪ পিএম
একজন মাশরাফী আবিষ্কারক বাবুর গল্প

অনেকের কাছেই নামটা পরিচিত আবার অনেকের কাছেই হয়তো নতুন মুখ। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে যে মানুষটি পিচ কিউরেটর হিসেবে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছেন তার নাম জাহিদ রেজা বাবু। অনেকের কাছে সে মাশরাফীর লোকাল অভিভাবক, অবশ্য বলা চলে বাবুর হাত ধরেই দেশের পেশাদার ক্রিকেটে আসা হয়েছে মাশরাফীর। সে প্রসঙ্গে পরেই বলছি।

নিজের কথা: কিউরেটর হিসেবে নয়, ক্রিকেট সংগঠক হিসেবেই বেশি পরিচিত তিনি। ১৯৯৪ সালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একটি ক্লাব করবেন যেটা কোয়ালিফাইং খেলবে এবং এই ক্লাব যদি কোয়ালিফাইং খেলতে পারে তাহলে সে ক্রিকেটের সাথে জড়িত হতে পারবেন। এভাবেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে যান বাবু। ১৯৯৫ সালে ঢুকলেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। কাজ করা শুরু করলেন ‘গেট’ল অর্ডার অ্যান্ড সিকিউরিটি’ কমিটিতে। কিন্তু মাঠেই যার মন, সে কি অন্য কাজ নিয়ে পড়ে থাকতে পারেন?

Jahid reza Babu
ক্রিকেট খেলছেন জাহিদ রেজা বাবু

চেষ্টা শুরু করলেন, কিভাবে মাঠে কাজ করা যায়। জাহিদ রেজা বাবুর ভাষায়, ‘আমার নেশা হল মাঠে কাজ করার।’ কলাবাগানের আলম চৌধুরীর হাত ধরেই পিচ কিউরিটরের কাজ শুরু তার।  প্রথমত শুরুটা হয়েছিলো ঘাস কাটার মধ্য দিয়ে। তখন  পিচ এর দেখাশোনা আলম ভাই করতেন। ১৯৯৮ সালে যখন নাইন নেশন টুর্নামেন্ট হল, তখনই  কিউরেটরের কাজে জড়িত হয়ে পড়েন বাবু। 

নাম: জাহিদ রেজা বাবু
জন্ম:১ জানুয়ারি ১৯৬৪
জন্মস্থান:যশোর,খুলনা 

এরপর ফতুল্লায় কাজ শুরু করেন তিনি। ২০০১ সালে দুবাইতে কিউরেটরের কাজের উপর প্রশিক্ষণ নিতে যান এ পিচ কিউরেটর। কিন্তু ফিরে এসে যেন মুদ্রার ওপিঠ দেখলেন। সব কিছুর পরিবর্তন চলে আসে তখন বিসিবির সভাপতির জায়গায়  থেকে চলে যান সাবের হোসেন চৌধূরি। এমন সময় বাবুকে জানানো হল, কাজ করলেও টাকা পাবেন না তিনি। 

এমন কথা শুনে বোর্ড থেকে রাগ করে চলে যান তিনি। এরপর  আবার আস্তে আস্তে সব কিছু পরিবর্তন চলে আসে। ২০০৬ সালে আবারও বিসিবির কাজে ফেরেন বাবু। কিউরেটর হিসেবে প্রথম কাজ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। এরপর ফিরে দেশের সবগুলো স্টেডিয়াম নিয়ে যেন একসাথে পড়তে হল তাকে। এই ব্যস্ততা উপভোগ করেছেন তিনি। সফলও হয়েছেন। যে কারণে, এখন তিনি দেশসেরা কিউরেটর।

মাশরফীকে প্রথম দেখা: ২০০১ সালের কথা। অনূর্ধ্ব-১৭ খুলনা বিভাগের সঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিসের ম্যাচ। ভেন্যু ঢাকার আবাহনী মাঠ। ম্যাচ দেখার অফিসিয়াল আমন্ত্রন পেয়েছিলেন বাবু। যথারীতি ম্যাচের দিন গিয়ে দেখেন খেলা বন্ধ। ঘটনা কি, খুলনা জানাল তাদের দু’জন প্লেয়ারকে নাকি বাদ দেওয়া হয়েছে।

তাকিয়ে দেখলাম এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে কৌশিক (মাশরাফী বিন মুর্তজা) ও রাসেল (সৈয়দ রাসেল)। দু’জনই প্রায় কেঁদে ফেলবে এমন অবস্থা। রাসেল তখন কেঁদেই ফেলেছিল! তার সহায়তায় সেদিন মাশরাফী ও রাসেল; দু’জনই খেলতে পেরেছিলো। পথটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন যশোরের এই মানুষটা। 

পাশের জেলা নড়াইল থেকে আসা কৌশিককে একবারে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেটে। বাঁ-হাতি পেসার রাসেলকে পাঠালেন সেকেন্ড ডিভিশনে। ফার্স্ট ডিভিশন খেলার ওই বছরই বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে সুযোগ পান মাশরাফী। লোকাল গার্ডিয়ানের কাজ করতে গিয়ে মাশরাফীর জন্য প্রায় সবকিছুই করেছেন। শুধু তাই নয় মাশরাফীর পাশে বসে সাক্ষাৎকারের জবাব থেকে শুরু করে ব্যাংকের চেক বইয়ের হিসেব বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সব কিছু টাইগার কাপ্তানকে শিখিয়েছেন বাবু। আর এতে আস্তে আস্তে খুব গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে দু’জনার মধ্যে। 

২০ বছর ধরে বাংলাদেশের পিচ কিউরিটরের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সর্বশেষ ২০১০ সাল থেকে কাজ করছেন জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। জীবনটা মাঠে থেকেই শেষ করতে চান ক্রিকেটের অন্তপ্রাণ, মাশরাফীর ‘আবিষ্কারক’ জাহিদ রেজা বাবু।

গো নিউজ২৪/এনআরবি/এসএম

খেলা বিভাগের আরো খবর