হঠাৎ কেন হাসপাতালে এরশাদ?


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০১৮, ১১:৫২ এএম
হঠাৎ কেন হাসপাতালে এরশাদ?

ঢাকা: মহাজোট থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে সময় নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। এ পর্যন্ত দলীয় আসন নিয়ে মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেনি জাপা। দলটির নেতারা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করলেও এ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।

এরিলক্ষ্যে শনিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক আলোচনার সময়সূচি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে দলটির তরফে। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আসন নিয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে এ চিঠি দেন। এরশাদের পক্ষে তার রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ চিঠি হস্তান্তর করেন।

এদিকে দলীয় মনোনয়ন ও জোটের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষি চলার মধ্যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বৃহস্পতিবার রাতে অসুস্থবোধ করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

ইতিমধ্যেই এরশাদ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তাকে জোর করে সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এবারও প্রশ্ন উঠেছে তার অসুস্থতা কতটা গুরুতর।

এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। সেখানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, উনি (এরশাদ) রুটিন চেক-আপের জন্য হাসপাতালে গেছেন। উনি নিয়মিতই যান। হাসপাতালের সব বড় বড় কর্মকর্তারা সেখানে উনার দেখাশোনা করছেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, মেজর জেনারেল পদমর্যাদার লোকজন।

বিশেষ কোনো শারীরিক অসুবিধায় ভুগছেন কি না? -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, স্বাভাবিক চেক-আপ। ব্লাড সুগার, হার্ট, প্রেশার এসব। ব্লাড সেলগুলোও দেখা হচ্ছে। উনি প্রায়শই এ রকম গিয়ে এক-আধ দিন থাকেন। উনি তো সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে ক্যান্টনমেন্ট তারও একটা আস্থার জায়গা। বাসার চেয়ে কম না। উনি সেখানে এক-আধ দিন থেকে আবার চলে আসেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও উনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল- এ বিষয়ে হেসে দিয়ে তিনি বলেন, দিন তো এক ভাবে যায় না। সবসময় কি একই রকম যায়? সব সময় তো একই রকম যায় না। উনি একটু গেছেন, ২/১ দিন থাকার পর আবার চলে আসবেন।

এরশাদ নিজে ইচ্ছায় নাকি তাকে জোর করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে? - এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, না, নেয়া (জোর করে নেয়া) হয়নি।

সামরিক হাসপাতালে এরশাদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের যোগাযোগ রয়েছে কি না? -এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নিজেও দুপুরে (শনিবার) আসলাম। আবার একটু আগে কথা বলেছি। কোনো অসুবিধা নেই। আপনাদের যেটা ভাবছেন, তা নয়। যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর।

ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনের প্রসঙ্গে হাওয়লাদার বলেন, আলোচনা (আওয়ামী লীগের সাথে) খুব স্বাভাবিক এবং আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে হচ্ছে। চূড়ান্ত হলে আপনারা জানতে পারবেন। সে রকম কোনো প্রতিকূল অবস্থা নেই। আমরা অনেক দূর এগিয়ে আছি। ২/৪দিনের মধ্যে জানাতে পারব।

যা ঘটেছিল দশম নির্বাচনের আগে

২০১৩ সালে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ব্যাপক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। শুরুতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা থাকলেও ৩রা ডিসেম্বর হঠাৎ করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির এই সিদ্ধান্ত তখন আওয়ামী লীগ সরকারকে ভীষণ বিপাকে ফেলেছিল। তবে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশ নির্বাচন যাচ্ছে বলে ঘোষণা করে।

এরকম এক পটভূমিতে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদকে র‍্যাব আটক করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয় ঢাকার পত্রিকায়। তবে র‍্যাবের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, তিনি আটক হননি, তাকে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে দলের কোন কোন নেতা তখন দাবি করেছিলেন, এরশাদ অসুস্থ নন।

এরপর বেশ কিছুদিন এরশাদকে সামরিক হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল। তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ ছিল। তবে 'অসুস্থ' অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও এরশাদকে গলফ খেলতে দেখা গেছে বলেও সেসময় পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।

গো নিউজ২৪/এমআর

রাজনীতি বিভাগের আরো খবর