জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে নিয়ে যা যা করলো ছাত্রলীগ নেতারা


নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে নিয়ে যা যা করলো ছাত্রলীগ নেতারা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিষয় সোচ্চার, তারা প্রতিবাদ করে। ইতিহাসে এমন একটি প্রতিবাদ হয়েছিলো ১৯৯৮ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিমউদদীন মানিক ওরফে সেঞ্চুরি মানিকের বিরুদ্ধে। বলা হয়ে থাকে তিনি সেসময় দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে ১০০ এরও অধিক নারীকে ধর্ষন করে তা উদযাপন করেছিলেন। এ জন্য তার নাম হয়েছিল ‘সেঞ্চুরি মানিক’। যদিও আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গঠিত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি সংখ্যাটা আরো কম বলে দেখতে পেয়েছিল। সেসময়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সারা দেশের সামনে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিলো, ক্যাম্পাস করেছিলো ‘মানিক গ্রুপ’ তথা ধর্ষক মুক্ত!

এতদিন পরে আবার সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে যে, আসলেই কি ক্যাম্পাস ধর্ষক মুক্ত হয়েছে?

শনিবার মধ্যরাত থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কিছু শব্দ শোনা যাচ্ছে- ‘ক্যাম্পাসে ধর্ষক কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘ধর্ষণমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’; ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগানে আবারও উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হাতে আবারও প্ল্যাকার্ড।

এদিকে শনিবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া চারজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান।

গত নয় বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বহিরাগত নারীকে শারীরিক হেনস্তার ১০টিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। যার সব ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও অধিকাংশই সময়েই পার পেয়ে যায় অভিযুক্তরা। এদের সবাই ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মী। অপরাধীদের অভয়স্থল হচ্ছে হলের ভিআইপি রুমগুলো! তারা একেকজন সিঙ্গেল রুম বা একাধিক রুম নিয়ে থাকেন। হলের বিভিন্ন ইস্যুতে তারাই প্রশাসনের সাথে মিটিং করে বা প্রশাসন হিসাবে ভূমিকা পালন করে! তাদের যদিও হলেই থাকার কথা না। প্রশাসন এসবে কখনো নীরব দর্শক, বা আশকারাদানকারী!

এরকম আশকারা আর সহযোগিতায় ক্যাম্পাস এখন অপরাধের অন্দরমহলে পরিণত হয়েছে! যার চূড়ান্ত পরিনতি দেখা দিয়েছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায়। এক বহিরাগতকে ক্যাম্পাসে ডেকে এনে স্বামীকে রুমে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষন করেছে ছাত্রলীগের নেতা। এই ঘটনার জেরে পুরো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। তারা ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের এই অনাচার থেকে মুক্তি চায়। মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ সাব্বির হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষককে পালিয়ে যেতে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে বলে মনে করেন অংশীজনরা।

যেকোনো ইস্যুতে প্রক্টর দায় এড়িয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাদাবাজি সহ অভিযোগের পাহাড়, কেউ যেন কোথাও কিছু দেখছে না। ১৯৯৭–৯৮ সালের পরিস্থিতি কি ফিরে এসেছে? সেসময়েও মানিক গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টরের ছত্রছায়ায় অপকর্মের তাণ্ডব চালিয়ে গিয়েছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের রাতের অন্ধকারে ক্যাম্পাসের সকল ছাত্র হলে হামলা চালিয়েছিল। সন্ত্রাসের মাধ্যমেই তার উত্থান, ধর্ষণকাণ্ডে যার চূড়ান্ত পরিণতি।

এবারও প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রলীগের একদল কর্মীর সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি যদি নিয়ন্ত্রণ করা হতো, তাহলে হয়তো ধর্ষণের সাহস তারা পেত না। একজন শিক্ষক গোলাম রববানী তাই শিক্ষার্থীদের সমাবেশে সঠিকভাবেই বলেছেন, ‘ক্যাম্পাসে এখন প্রায় আড়াই হাজার অছাত্র রয়েছে। এই ধর্ষণ কোনো বিছিন্ন ঘটনা নয়, যত দিন প্রশাসনের মদদে এই ক্যাম্পাসে অছাত্র, অবৈধ ছাত্র অবস্থান করবে, ছাত্রলীগ নামধারী অছাত্ররা নিয়োগ বাণিজ্য করবে, চাঁদাবাজি করবে, তত দিন এই ক্যাম্পাস থেকে অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়।

রাজনীতি বিভাগের আরো খবর