সারাদেশে সভা-সমাবেশের ঘোষণা জাতীয় ঐক্যের


নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮, ০৬:৫০ পিএম
সারাদেশে সভা-সমাবেশের ঘোষণা জাতীয় ঐক্যের

ঢাকা : আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত নাগরিক সমাবেশের শেষ পর্যায়ে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

ঘোষণাপত্রে নাগরিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের ৫ দফা দাবি ও ৯ দফা লক্ষ্যের সঙ্গে তারা একাত্মতা প্রকাশ করছেন।

ঘোষণাপত্রে ন্যায়বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য, ব্যাহত ও অকার্যকর করে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

আরো বলা হয়, সন্ত্রাস, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা; হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার; শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা এবং নির্বিচারে জেল-জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারসমূহ থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।

এতে বলা হয়, এখন দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করার অধিকার নেই। বাংলাদেশে এ গণতন্ত্রহীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা কার্যত বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং তফসিলের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেবেন।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিনের পরিচালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।  সমাবেশে বিএনপির পক্ষ থেকে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং ড. আব্দুল মঈন খান।

এছাড়া আরো ছিলেন- নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন,  মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টু, আওয়ামী লীগের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর আহমদ, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান নূর হোসেন কাশেমী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ প্রমুখ।

ড. কামাল হোসেন

সমাবেশের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড. কামাল হোসেন। 

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, শান্তির বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা সকলে এখানে উপস্থিত হয়েছি।

তিনি বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করে এখানে হাজির হয়েছেন। এই জন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আমরা এমন এক সময় এখানে উপস্থিত হয়েছি যখন দেশে গণতন্ত্র নেই। জনগণ উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নেই। 

ড. কামাল বলেন, দেশে কার্যকর গণতন্ত্র নেই। দুর্নীতি ও দুঃশাসনে ভরে গেছে দেশ। যখন দেশ থেকে দুর্নীতি ও দুঃশাসন দূর হবে তখন বাংলাদেশে শান্তি দৃশ্যমান হবে।

তিনি বলেন, জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। জনগণের মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। সেই লক্ষ্যে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রণয়ণের জন্য আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্য চান।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এতো কষ্টের মধ্যেও তিনি দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় ঐক্য চান। 

তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত খালেদা জিয়া কারাগার থেকে খবর পাঠিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

ফখরুল বলেন, গত ১৮ দিনে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৩ হাজার ৭৭৬টি মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলার আসামি করা হয়েছে ৬৯ হাজার ব্যক্তিকে। প্রতিদিন রাতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এই সরকারকে সরিয়ে দিতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ঐক্যের প্রধান দাবি সরকারের পতন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন গঠন করতে হবে। ইভিএম দিয়ে নির্বাচন করা যাবে না। 

এসময় জাতীয় ঐক্যের নেতাকর্মীদের কর্মসূচির ভিত্তিতে আন্দোলনের আহবান জানান মির্জা ফখরুল। 

এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একটা মন্ত্রণালয় দেখান, যেটা ঘুষ-দুর্নীতি ছাড়া চলে। 

তিনি বলেন, দেশবাসী আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। আজকে মায়েরা-বোনেরা ঘরে ঘুমাতে পারেন না, আতঙ্কের মধ্যে থাকেন, কখন যে সোনার ছেলেনা ঘরে ঢুকে পড়বে, এই শঙ্কায় থাকেন। 

এসময় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য হবে উল্লেখ করে বি. চৌধুরী বলেন, এখানে স্বাধীনতা বিরোধীদের কোনো স্থান নেই।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানান।

সমাবেশের শুরুতে শ্লোগান ও বসার জায়গা সংকটে কিছুটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অনুষ্ঠান পরিচালক বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাড়িয়ে বলেন - আমরা জাতীয় ঐক্যের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছি। শ্লোগান বন্ধ করে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করে অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সহযোগিতা করবেন। পরে নেতাকর্মীরা শান্ত হয়। 

গো নিউজ২৪/আই


 

রাজনীতি বিভাগের আরো খবর