৭ কারণে কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি!


নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮, ০৭:৫৫ পিএম
৭ কারণে কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি!

ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দি রয়েছেন বিএনপির চেয়াপারসন বেগম খারেদা জিয়া। এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথে হাটছে দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে অনেকে মনে করেন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের পূর্বে তাকে কারাদণ্ড দেয়া হলে দেশ অচল করে দেয়াসহ সরকারকে নানান রকম হুমকি-ধামকি দিলেও রায়ে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাবার পর কঠোর বা শক্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি বা দিতে পারেনি বিএনপি।

রায়ের পূর্বে অবশ্য বেগম জিয়ার নির্দেশনা এবং দলের সিদ্ধান্তও তেমনই ছিল। কিন্তু বিএনপির মতো একটি বড় দলের দলীয় প্রধানকে শুধু রাজনৈতিকভাবে ঘায়েলের উদ্দেশ্যে সাজা দেয়ার মতো ইস্যু হাতে পেয়েও কেনো জনগণকে সাথে নিয়ে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যেতে পারছে না এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণও বিভিন্ন রকম যুক্তি তুলে ধরেছেন।

প্রথমত: 
মামলায় সাজাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা ও জামিন নিয়ে দলীয় আইনজীবীদের ভুল ব্যাখ্যা, পরামর্শ ও আশ্বাসের কারণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ না করা।

দ্বিতীয়ত: 
দলের নেতাকর্মীদের উপর আস্থার অভাব। নেতৃত্ব প্রশ্নে অসন্তোষ, দলীয় কোন্দল ও বিভক্তির কারণে কর্মীরা বিভিন্ন নেতার অনুসারী হয়ে পড়ায় মাঠে একসাথে সবাইকে পাবার নিশ্চয়তা না থাকা এবং নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতা ও সক্ষমতার পরীক্ষিত দুর্বলতা।

তৃতীয়ত: 
একটি দলীয় প্রধানের দুর্নীতি ইস্যুতে কঠোর কর্মসূচিতে মাঠে শক্তি ক্ষয়ে জোটে অনীহা, বিশেষভাবে জোটের প্রধান ও সংগঠিত শক্তি যাদের উপর রাজপথে বিএনপি অনেকটাই নির্ভরশীল সেই জামায়াতে ইসলামীর সাথে দূরত্ব সৃষ্টির কারণে তাদের মাঠে না পাওয়া।

চতুর্থত:
কঠোর আন্দোলন সহিংসতায় গড়ালে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সরকারও কঠোর হলে সেই মুহূর্তে নেতাদের অবিচল থেকে আত্মগোপন না করে, কর্মীদের একা ছেড়ে না দিয়ে মাঠে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবার মতো সাহস ও দক্ষতার অভাব যা ইতিপূর্বে প্রমাণ হয়েছে।

পঞ্চমত: 
খালেদা জিয়া জেলে গেলে তারেকের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকায় সুদূর লন্ডন থেকে দেয়া তারেকের নির্দেশনায় অন্দোলন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে চরম সন্দেহ ও সংশয়।

ষষ্ঠত: 
২০১৪ ও ২০১৫ সালের আন্দোলনের পরিণতি হাড়েহাড়ে টের পাওয়া। সহিংস আন্দোলনের কারণে দেশ-বিদেশে তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষিতে জনসমর্থন না পাওয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন হারানোর ভয়।

সপ্তমত: 
একদিকে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার অক্ষমতা, অন্যদিকে কঠোর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা, এমনকি উক্ত পরিস্থিতিতে নির্বাচনে নিজেদের প্রস্তুতি গ্রহণও সম্ভবপর হয়ে উঠতে না পারার সমূহ শঙ্কা রয়েছে বিএনপিতে। আর পরপর দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণে ব্যর্থ হলে দলের নিবন্ধনও বাতিল হয়ে যেতে পারে।

সব মিলিয়ে বহুমুখী শঙ্কায় জর্জরিত বিএনপির পক্ষে কোনভাবেই খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে বা তাকে মুক্ত করার আন্দোলনে কঠোর বা শক্ত কোনো আন্দোলনে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।

উল্লেখ্য,  জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৫বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এ মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে এ রায় ঘোষণা করেন মামলার বিচারক ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান।

মামলার অন্যান্য ৫ আসামীকেও ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

সাজা প্রাপ্ত অন্য আসামীরা হলেন- সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের বোনের ছেলে মমিনুর রহমান। মামলায় শুরু থেকে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

রায়ে সাজাপ্রাপ্ত প্রত্যেকের ২কোটি ১০লক্ষ ৭১ হাজার টাকা সমপরিমান জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে।

 

গো নিউজ২৪/আই

রাজনীতি বিভাগের আরো খবর