এক নৌকার ১২ মাঝি, সিদ্ধান্ত শনিবার


ফরহাদুজ্জামান ফারুক প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০১৭, ০৪:২৫ পিএম
এক নৌকার ১২ মাঝি, সিদ্ধান্ত শনিবার

রংপুর: রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই মাঠে মেনেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী একডজনের বেশি সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী। এরই মধ্যে নৌকা প্রতীক পেতে লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতারা। দলের অনেকেই কারণে-অকারণে ছুটছেন ঢাকার দিকে। এক নৌকার ১২ মাঝিই ক্ষমতাসীন এই দলের মনোনন পেতে সরব হয়েছে উঠেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কে ধরবে নৌকার হাল, এমন হিসেব কষছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রায় চার লাখ ভোটার।
 
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে দলটি। তবে দেশের বর্তমান প্রধান রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
 
মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে ওঠা অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। শুরুতে আওয়ামী লীগ থেকে একডজনের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী মেয়র পদে প্রার্থী হতে চাইলেও হাল ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে। আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গণভবনে তাঁদের সাক্ষাতকার নেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ থেকে ১১ নভেম্বর দুপুর ১২টার মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল দলটি। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত ও দলীয় পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংযুক্ত করতে বলা হয়। ১১ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা মেয়র পদে মনোনয়ন দেবেন।

বহুল প্রত্যাশিত এই নৌকার মনোননয়প্রত্যাশীরা হলেন- কেন্দ্রী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, বর্তমান মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক বাবু তুষার কান্তি মন্ডল, রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) এলাকার এমপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে টিভি ব্যক্তিত্ব রাশেক রহমান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. জয়নুল আবেদীন, রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবুল কাশেম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিলন, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও স্পেশাল জজ আদালতের পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রংপুর জেলা ইউনিট কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু ও মহানগর স্বেচ্ছসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে মনোনয়নের ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা করছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে সরে আসা সাবেক পৌর মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিক। বর্তমানে তাঁরা সবাই দলীয় মনোনয়ন পেতে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
 
এদিকে আওয়ামী লীগে যোগ না দিয়ে কিভাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হলেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা একেএম আব্দুর রউফ মানিক গোনিউজকে বলেন, লং টাইম রাজনীতির জন্য জাতীয় পার্টি নয়। একারণেই আমি জাতীয় পার্টি থেকে নিজেই পদত্যাগ করে অনেক আগেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। মেয়র পদে এবার আওয়ামী লীগ থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের একডজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্য থেকে ক্লিন ইমেজ, রাজনৈতিক দক্ষতা, আগামী জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার করানোর ক্ষমতা, কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয় ও দলের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ ভালো এমন কাউকেই মেয়র প্রার্থী হিসেবে পেতে চাইছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মুখে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নৌকা প্রতীকের জয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার কথা বললেও বাস্তবে চিত্র একবারেই ভিন্ন। মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে দলটির মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।

রংপুর চেম্বার অফ কর্মাসের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম গোনিউজকে জানান, আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে যদি ক্লিন ইমেজের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তবে সেটি আমিই পাবো ইনশাআল্লাহ।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান গোনিউজকে জানান, রংপুর সদর-৩ আসনে পর পর তিনটি নির্বাচনে তাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল কিন্তু জোটভিত্তিক নির্বাচন করায় প্রতিবারই তিনি দলের নিদের্শে এরশাদকে এ আসনটি ছেড়ে দেন। দলের জন্য তার ত্যাগ ও ব্যক্তিগত ইমেজসহ সব বিষয় বিবেচনা করে দল তাকেই মনোনয়ন দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

রংপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউজ্জামান বাবু নিজেকে মেয়র প্রার্থী দাবি করে গোনিউজকে বলেছেন, ‘বর্তমান মেয়র ঝন্টুকে মনোনয়ন দিলে আমরা কেউ কাজ করবো না। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদের সাথে দেখা করে বিষয়টি তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

মেয়র ঝন্টুর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে দাবি করেন আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ও রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি। তিনি গোনিউজকে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের না হয়েও এখন আওয়ামী লীগের হয়েছেন। তার কারণে বিভিন্ন সময়ে রংপুরে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন অভিযোগের সত্যতা নাকচ করে দিয়ে মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু গোনিউজকে বলেন, দলীয় নেতা শেখ হাসিনা উন্নয়নে বিশ্বাসী। তিনি রংপুরের উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে আমাকে নৌকা প্রতীক দিবেন। আর দলের লোকজন যা ছড়াচ্ছেন এসব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেন তিনি।

গোনিউজ২৪/কেআর

 

রাজনীতি বিভাগের আরো খবর