সেই মোস্তফাই জাপার প্রার্থী তবে...!


ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০১৭, ০৭:২৮ পিএম
সেই মোস্তফাই জাপার প্রার্থী তবে...!

রংপুর: চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নয়তো, আগামী বছরের জানুয়ারীতে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন। এ লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।এই নির্বাচনকে ঘিরে এরশাদের দুর্গে জয়ের ধারা ধরে রাখতে মরিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক ডজনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশীর ভিড়ে এখনো নৌকার মাঝি চূড়ান্ত হয়নি। এপরিস্থিতে বিগত নির্বাচনের মতো এবার ভুল করতে নারাজ জাতীয় পার্টি। তাই আগেভাগেই প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে দলীয় চেয়ারম্যান এরশাদ।

বর্তমানে মেয়র প্রার্থী হিসেবে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকাতে জনসংযোগ করছেন তিনি। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে ভোটও চাইছেন।


 এদিকে, এরশাদ প্রার্থী চূড়ান্তের ঘোষণা দিলেও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত তা ঠিক থাকবে কি না তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। বিশেষ করে মোস্তফাভক্ত সাধারণ ভোটাররাসহ জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা এখনো রয়েছেন দিধাদ্বন্দ্বে। কারণ ২০১২ সালে রংপুর সিটির নির্বাচনে এই মোস্তফার প্রার্থীতা নিয়েই এরশাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ধারাবাহিক নাটক দেখেছেন তারা ।
 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে গঠিত রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থাকলেও ছিলো না দলীয় প্রতীক। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের প্রেসডিয়াম সদস্য ও বর্তমান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও সাবেক পৌর মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিক নাখোশ হলে ভেঙ্গে যায় জাতীয় পার্টি। দলের নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের মুখে রাঙ্গাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেন এরশাদ।

ওই নির্বাচনে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে লাখের ওপর ভোট পেয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। সে সময় জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ৭০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন ঝন্টুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

রাঙ্গা-মোস্তফা অতীতের বিভেদ ভুলে এখন তারা এক কাতারে। রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টিতে নেই তেমন প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব-বিভাজন। একারণে লাঙ্গলের দুর্গখ্যাত গুরুত্বপূর্ণ এই মহানগরীতে মেয়র পদটি পেতে মরিয়া এরশাদ। তাই আগাম মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাঁকে জিতিয়ে আনতে সবাই দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ বলে ঘোষণা করেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

এরশাদের প্রার্থী চূড়ান্তের ঘোষণায় বেঁকে বসেছেন ছোট ভাইয়ের ছেলে ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। সাবেক এই এমপি ক্ষুদ্ধ হয়ে নিজেকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মোস্তফার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। অভিমানী আসিফ ‘বড়আব্বা’ এরশাদের ছবি ছাড়াই মেয়র পদে নগরবাসীর দোয়া চেয়ে ফেস্টুন ও পোস্টার সাঁটিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দল থেকে বহিষ্কারও হয়েছেন।

দলের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিক এবার নির্বাচন করবেন। লাঙ্গল না পাবার আগাম উপলব্ধি থেকে তিনি জাপা ছেড়ে গিয়েছেন আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠীর ছায়াতলে। এখন তিনি নাগরিক কমিটির ব্যানারে নিয়মিত বৈঠক করছেন পেশাভিত্তিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে।

এদিকে, রংপুর সিটির প্রথম নির্বাচনের মতো আবারো এরশাদের নতুন কোন নাটক বা ডিগবাজি দেখতে হবে কিনা; এমন সন্দিহানে অনেকই। তবে দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা আছে দাবি করে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা গোনিউজকে বলেন, স্যার (এরশাদ) আর ভুল করবেন না।

সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে দলের একাধিক প্রার্থী থাকার পরও ৭০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলাম। জনমত আমার পক্ষে আছে। দলের চেয়ারম্যান আমাকে আগাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়ায় মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। এবারে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ’

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর নবগঠিত রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০৩ বর্গমাইল আয়তনে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর সিটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আর ভোটার রয়েছেন প্রায় চার লাখ।
গোনিউজ২৪/কেআর

 

রাজনীতি বিভাগের আরো খবর