হাসিনাকে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন বঙ্গবীর, তবে...


পাপলু রহমান, নিউজরুম এডিটর প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০১৭, ০৯:২৮ পিএম
হাসিনাকে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন বঙ্গবীর, তবে...

ঢাকা: মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। ৭২ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন আগে ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেছিলেন বঙ্গবীর।

প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে নিতে এই আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষার উদ্যোগ নেয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়লেও শেষ অবধি নির্দলীয় সরকার গঠন না করেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। টানা দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

‘অপ্রিয় সত্য বক্তা’ হিসেবে পরিচিত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার নিহত হলে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। পরে ঘটনার প্রতিবাদে তিনি ভারতে চলে যান। দীর্ঘ পনের বছর পর ১৯৯০ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

তবে আওয়ামী লীগের আমলে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে নেতিবাচক সমালোচনা শুরু করেন। এ ঘটনায় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল থেকে বের হয়ে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ গঠন করেন। সে সময় থেকেই তিনি ওই দলের সভাপতি।

মুক্তিযুদ্ধের এই সমরনায়ক ও ‘মুখভাঙা’ রাজনীতিক নানা সময়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ও এর সরকারকে নিয়ে নানা সমালোচনা করতেন।

গেল ২০১১ সালের ১ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যুব ও ছাত্র আন্দোলনের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবীর আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারবে না। কারণ এদের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। সরকারের কিছু লোক আয়-রোজগার করার জন্য এ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

আপন বড় ভাই তৎকালীন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর (পরে বহিষ্কৃত) সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, বড় ভাই পণ্ডিত সেজেছেন। তিনি বলেছেন আমার গায়ে নাকি মুজিব কোট মানায় না। আমার গায়ের কোট খুলে ফেলতে বলেছেন। আমি আমার নেতা বঙ্গবন্ধুর কোট পরি। বড় ভাই হিসেবে এলে কোট খুলে নিতে পারবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মন্ত্রী হয়ে আপনার মতো দশ মন্ত্রী এলেও আমার কোট খুলে নিতে পারবেন না।

এসব ‘মুখভাঙা’ বক্তব্যে বঙ্গবীরকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তারপরেও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক হিসেবে তাকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখেন কেউ কেউ।

দলের অনেকের কাছেই তার সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। তাদের কথা, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার নিয়ে বঙ্গবীর কখনও কখনও কঠোর সমালোচনা ও অপ্রীতিকর কথা বলে সত্য। তবে বিএনপি-জামায়াতের জোটে তিনি কখনও যোগ দেননি। সে কারণেই তাকে নিজ ঘরের লোক মনে করেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। তাই আওয়ামী লীগে ফেরা মানেই বঙ্গবীরের নিজ ঘরে ফেরা- এমনই মনে করেন দলের অনেক নেতা।

বঙ্গবীর সত্যিই ফিরছেন আ.লীগে?

গোনিউজ২৪/এন

রাজনীতি বিভাগের আরো খবর