চাহিদা বাড়ছে তারকাদের মতো করে তৈরি সেক্স রোবটের


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০১৭, ০৬:১৭ পিএম
চাহিদা বাড়ছে তারকাদের মতো করে তৈরি সেক্স রোবটের

আধুনিক এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে অসম্ভব বলে আর কিছু থাকছে না। মানুষের যৌন চাহিদা পূরণের জন্য বাজারে ইতোমধ্যে চলে এসেছে সেক্স রোবট। দেখতে একদমই মানুষের মতো তৈরি এই রোবট। দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আসছে একের পর এক অর্ডার।

অনেকেই তাদের মৃত স্ত্রীদের মতো করে সেক্স রোবট তৈরির অর্ডার দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ট্রু কম্পেনিয়ন জানিয়েছে, বিখ্যাত তারকাদের আকৃতিতে রোবট তৈরি করে দেয়ার অর্ডারও পাচ্ছেন তারা। আর এই তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন প্রয়াত মার্কিন অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো।

ট্রু কম্পেনিয়নের প্রকৌশলী ডগলাস জানান, ক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই চাইছে ওই অভিনেত্রীর মতো করে তাকে যেন একটি সেক্স রোবট তৈরি করে দেয়া হয়। তবে এতে আছে কিছু সমস্যা। এ ধরনের সেক্স রোবট নির্মাণের জন্য নিতে হবে যথার্থ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন। এজন্য ক্রেতাদের অর্ডার প্রত্যাখ্যান করতে হচ্ছে তাদের।

ডগলাস বলেন, ‘মেরিলিন সবচেয়ে এগিয়ে। সমস্যা হচ্ছে, এক্ষেত্রে আমাদের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ, তার পরিবার কিংবা নির্দিষ্ট ব্যক্তির অনুমোদন নিতে হবে। আপনি মেরিলিনের মতো রোবট চাইলে তার উত্তরসূরিদের অনুমতি লাগবে।’

বর্তমানে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ‘অ্যানড্রয়েড লাভ ডল’, ‘সেক্স বোট’ এবং ‘ট্রু কম্পেনিয়ন’ নামে বিভিন্ন ধরনের সেক্স রোবট নির্মাণ করছে। এর আগে এগুলো দেখতে মানুষের মতো করে তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এসব রোবটকে চলাচলযোগ্য ও কথা বলার মতো করে তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে অ্যাবাইস ক্রিয়েশন্স। তারা ইতিমধ্যে ‘রিয়েল ডল’ নামের একটি সেক্স রোবট তৈরি করেছে এবং চলতি বছরের শেষের দিকে ‘হারমোনি’ নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন আরেকটি সেক্স ডল উন্মুক্ত করবে। এটি মাথা এবং চোখ নাড়াতে পারে ও অ্যাপস ব্যবহার করে কথা বলতে পারে।

প্রথম দিকে সেক্স রোবটের ভবিষ্যত অনিশ্চিত মনে করা হয়েছিল। একদিকে তৈরির উচ্চ ব্যয়, অন্যদিকে নানা জটিলতায় এটি বাজারে আসতে পারবে না বলেই ধারণা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। তবে হাল ছাড়েনি অ্যাবাইস ক্রিয়েশনস। তাদের তৈরি হারমনি নাচতে পারে, আবেদময়ী ভঙ্গিতে তাকাতে পারে, এমনকী আপনাকে ভ্রুকুটিও করতে পারবে সে। গল্প করার ক্ষমতাও আছে এই রোবটের। মিউজিক, মুভি এবং বই নিয়ে সে গল্প করবে। কৌতুকও বলতে পারে এই যন্ত্রমানবী। মনে রাখতে পারবে আপনার জন্মদিন। শুধু তাই না, আপনি কী খেতে পছন্দ করেন, আপনার ভাইবোনের নাম- এসবও নখদর্পণে থাকবে হারমনির। আর সঙ্গে যখন খুশি তখন যৌনতা তো থাকছেই। এরপরও এটিকে এখন পর্যন্ত ঠিক ‘সেক্স রোবটে’ রূপ দেয়া যায়নি।

অবশ্য সেক্স রোবট বা সেক্স ডল নিয়ে অনেকদিন ধরেই নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ধরনের জিনিস শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন বাড়াবে।

গবেষক ও অধ্যাপক নোয়েল শার্কি বলেন, সব ধরনের সেক্স রোবটের প্রভাব সম্পর্কে পুরো সমাজকে ভেবে দেখতে হবে। এ বিষয়ে বেশকিছু পরামর্শও দিয়েছে তার ‘ফাউন্ডেশন রেসপন্সিবল ফর রোবটিকস’ নামের প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেক্স রোবট তৈরি করছে। তবে আসন্ন রোবট বিপ্লব এই পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে। ‘আওয়ার সেক্সুয়াল ফিউচার উইদ রোবট’ নামের ওই প্রতিবেদনে সেক্স রোবটের ভবিষ্যৎ সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। তবে ঠিক কত মানুষ বর্তমানে সেক্স রোবট ব্যবহার করছে- সে সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য দিতে পারেননি শার্কি। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই সংখ্যা প্রকাশ করে না।

এই গবেষক বলেন, ভবিষ্যতে মানুষ এবং রোবটের যৌনতার ব্যাপারে সমাজকে জেগে ওঠার এটাই সময়। তার ভাষায়, ‘আমাদের এমন নীতি নির্ধারক দরকার, যারা এটার দেখভাল করতে পারবেন এবং সাধারণ জনগণের জন্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য ও অনুমোদনযোগ্য- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। আমাদের ভেবে দেখতে হবে, আমরা আসলে কী করতে চাইছি। আমি কোনও সমাধান দিচ্ছি না, শুধু প্রশ্ন করছি।’

যুক্তরাজ্যের ডি মন্টফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবট এথিকস বিভাগের ড. ক্যাথলিন রিচার্ডসন শার্কির প্রতিবেদনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, শিশু সেক্স রোবট নিষিদ্ধ করা উচিৎ। তবে সব ধরনের সেক্স রোবট নিষিদ্ধের দাবি তোলা ঠিক না। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে প্রধান সমস্যা রোবটগুলো নয়; সমস্যা যৌন বাণিজ্য। সেক্স রোবট আসলে এক ধরনের পর্নগ্রাফি।’ শিশু সেক্স রোবট দিয়ে শিশু পর্নগ্রাফি তৈরি হবে বলেও আশঙ্কা আছে।

তাছাড়া এ ধরনের রোবট মানুষের মধ্যে ‘সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়াবে’ বলেও মনে করেন এই নারী গবেষক। সেক্স রোবট হচ্ছে এমন রোবট যার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব। এর ভেতর এমন ধরনের ডিভাইস স্থাপন করা আছে যার মাধ্যমে রোবটটি তার সঙ্গীর মধ্যে সত্যিকারের যৌন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন সম্পর্ক বিষয়ক গবেষক শেলি রোনেন জানান, রোবটটি যাতে মানুষের মধ্যে যৌন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে সেজন্য অনেক কিছুই ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে হয়তো তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কও স্থাপন করা যেতে পারে।

কোনও জড়বস্তুর প্রতি দৈহিক আকর্ষণকে স্বাভাবিক মনে করেন না মনোবিজ্ঞানীরা। জড়বস্তুর প্রতি দৈহিক আকর্ষণ বা ভালোবাসা কিংবা অনুরাগকে এক ধরনের অটিজম হিসেবে দেখেন মনোবিজ্ঞানী এবং যৌন বিশেষজ্ঞরা। এই মানসিক সমস্যাকে তারা বলেন, ‘অবজেকটোফিলিয়া’। অনেক গবেষক একে বলেন- ‘অবজেক্ট সেক্সুয়ালিটি’ (Object sexuality)। তাদের মতে, কোনো জড়বস্তু, ভাস্কর্য বা মূর্তির প্রতি প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, অনুরাগ বা শারীরিক আকর্ষণ- এর সবই অবজেকটোফিলিয়া।

গো নিউজ২৪/ আরএস

এ সম্পর্কিত আরও সংবাদ


আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর