শিশুদের আকৃতিতে তৈরি সেক্স ডলকে ‘অশ্লীল’ বলে রায় দিয়েছে ব্রিটেনের একটি আদালত। দেশটির সাবেক এক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকের ওই পুতুল আমদানি প্রসঙ্গে মামলার রায়ে একথা বলা হয়েছে।
অবশ্য আদালতে ডেভিড টার্নার নামের ওই শিক্ষকের আইনজীবীরা বলেন, ওই পুতুল আমদানিকে অশ্লীল জিনিস আমদানি নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আইনের আওতায় ফেলা যায় না। তা সত্ত্বেও আদালতের ভাষ্য, যে কোনো সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই একে অশ্লীল আখ্যা দেবে।
এই মামলায় আগামী নভেম্বরে ৭২ বছর বয়সী শিক্ষক টার্নারের সাজা ঘোষণা করার কথা রয়েছে। সেক্স ডল আমদানির দায়ে আরো একজনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই প্রথম সেক্স ডল বিষয়ে কোনো রায় দিল ব্রিটিশ কোর্ট।
দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি জানিয়েছে, এটাই এ ধরনের প্রথম কোনো রায়। ১৯৭৯ সালের একটি আইনে যে কোনো ধরনের অশ্লীল জিনিস আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ব্রিটেন।
প্রসঙ্গত, শিশুদের মতো করে তৈরি সেক্স রোবট বা সেক্স ডল নিয়ে অনেকদিন ধরেই নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ধরনের জিনিস শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন বাড়াবে।
গবেষক ও অধ্যাপক নোয়েল শার্কি বলেন, সব ধরনের সেক্স রোবটের প্রভাব সম্পর্কে পুরো সমাজকে ভেবে দেখতে হবে। এ বিষয়ে বেশকিছু পরামর্শও দিয়েছে তার ‘ফাউন্ডেশন রেসপন্সিবল ফর রোবটিকস’ নামের প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেক্স রোবট তৈরি করছে। তবে আসন্ন রোবট বিপ্লব এই পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে। ‘আওয়ার সেক্সুয়াল ফিউচার উইদ রোবট’ নামের ওই প্রতিবেদনে সেক্স রোবটের ভবিষ্যৎ সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। তবে ঠিক কত মানুষ বর্তমানে সেক্স রোবট ব্যবহার করছে- সে সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য দিতে পারেননি শার্কি। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই সংখ্যা প্রকাশ করে না।
এই গবেষক বলেন, ভবিষ্যতে মানুষ এবং রোবটের যৌনতার ব্যাপারে সমাজকে জেগে ওঠার এটাই সময়। তার ভাষায়, ‘আমাদের এমন নীতি নির্ধারক দরকার, যারা এটার দেখভাল করতে পারবেন এবং সাধারণ জনগণের জন্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য ও অনুমোদনযোগ্য- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। আমাদের ভেবে দেখতে হবে, আমরা আসলে কী করতে চাইছি। আমি কোনও সমাধান দিচ্ছি না, শুধু প্রশ্ন করছি।’
যুক্তরাজ্যের ডি মন্টফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবট এথিকস বিভাগের ড. ক্যাথলিন রিচার্ডসন শার্কির প্রতিবেদনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, শিশু সেক্স রোবট নিষিদ্ধ করা উচিৎ। তবে সব ধরনের সেক্স রোবট নিষিদ্ধের দাবি তোলা ঠিক না। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে প্রধান সমস্যা রোবটগুলো নয়; সমস্যা যৌন বাণিজ্য। সেক্স রোবট আসলে এক ধরনের পর্নগ্রাফি।’ শিশু সেক্স রোবট দিয়ে শিশু পর্নগ্রাফি তৈরি হবে বলেও আশঙ্কা আছে।
তাছাড়া এ ধরনের রোবট মানুষের মধ্যে ‘সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়াবে’ বলেও মনে করেন এই নারী গবেষক। সেক্স রোবট হচ্ছে এমন রোবট যার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব। এর ভেতর এমন ধরনের ডিভাইস স্থাপন করা আছে যার মাধ্যমে রোবটটি তার সঙ্গীর মধ্যে সত্যিকারের যৌন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন সম্পর্ক বিষয়ক গবেষক শেলি রোনেন জানান, রোবটটি যাতে মানুষের মধ্যে যৌন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে সেজন্য অনেক কিছুই ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে হয়তো তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কও স্থাপন করা যেতে পারে।
কোনও জড়বস্তুর প্রতি দৈহিক আকর্ষণকে স্বাভাবিক মনে করেন না মনোবিজ্ঞানীরা। জড়বস্তুর প্রতি দৈহিক আকর্ষণ বা ভালোবাসা কিংবা অনুরাগকে এক ধরনের অটিজম হিসেবে দেখেন মনোবিজ্ঞানী এবং যৌন বিশেষজ্ঞরা। এই মানসিক সমস্যাকে তারা বলেন, ‘অবজেকটোফিলিয়া’। অনেক গবেষক একে বলেন- ‘অবজেক্ট সেক্সুয়ালিটি’ (Object sexuality)। তাদের মতে, কোনো জড়বস্তু, ভাস্কর্য বা মূর্তির প্রতি প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, অনুরাগ বা শারীরিক আকর্ষণ- এর সবই অবজেকটোফিলিয়া।
গো নিউজ২৪/ আরএস