কাশ্মীরে ফের গোলাগুলি: ৩ বিদ্রোহী ও ২ ভারতীয় সেনা নিহত


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০১৭, ০৫:৫৫ পিএম
কাশ্মীরে ফের গোলাগুলি: ৩ বিদ্রোহী ও ২ ভারতীয় সেনা নিহত

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে দেশটির সেনাবাহিনী ও স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে এক গোলাগুলির ঘটনায় দুই ভারতীয় সেনা ও তিন বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। অঞ্চলটির সোপিয়ান এলাকায় ওই গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে কাশ্মীরের পুলিশ প্রধান মুনির খান।

বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শনিবার রাতে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে আওনিরা গ্রামে বিদ্রোহীদের সন্ধান পেয়ে সেখানে যায় ভারতীয় সেনারা। তখনই কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে তাদের গুলিবিনিময় হয়। বর্তমানে গ্রামটি ঘিরে রেখেছে কয়েকশ ভারতীয় সৈন্য।

মুনির খান বলেন, ‘পাঁচ সন্ত্রাসীর উপস্থিতির খবর পেয়ে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই আমরা এলাকাটি ঘিরে রেখেছি। সকালে আমরা তিনজনের মৃতদেহ পাই।’ নিহতরা সবাই কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের সদস্য বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। মুনির জানান, দুই ভারতীয় সেনা নিহত ছাড়া আরো তিনজন ওই ঘটনায় আহত হয়েছে।

এদিকে বিদ্রোহীদের নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের গ্রামের শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। ভারতের সেনাদের লক্ষ্য করে তারা পাথর ছোঁড়ে এবং ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর হামলা করলে অন্তত এক ডজন সাধারণ মানুষ আহত হয়।

স্থানীয় যুবক ইরশাদ আহমেদ (২৯) বলেন, ‘গতকাল ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল মানুষ। কিন্তু শক্ত প্রতিরোধে তাদের আটকে রাখা হয়েছিল। আজ আবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ওরা অনেক লোককে আহত করেছে।’

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের এই পর্যন্ত কাশ্মীর সহিংসতায় অন্তত ১৩০ বিদ্রোহী ও ৩৯ সেনা নিহত হয়েছে। গত বছরের ৮ জুলাই যখন কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন নেতা বুরহান ওয়ানিকে গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় বাহিনী। তখন থেকেই ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে বেসামরিক লোকজনের অংশগ্রহণ বেড়ে চলেছে। তার মৃত্যুর পর কাশ্মীরীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। কয়েক মাস ধরে গণবিক্ষোভে শতাধিক লোককে হত্যা করে ভারতীয় বাহিনী। তাদের পেলেট গুলিতে অনেকেই অন্ধ হয়ে যায়। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কাশ্মীরের মানুষ।

এই সংগঠনটি ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইরত কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠি। ১৯৮৯ সালে উপত্যকাটিতে বিদ্রোহ শুরু হলে সশস্ত্র লড়াই শুরু করে হিজবুল মুজাহিদিন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেখানকার একটি ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলায় ১৮ সেনা নিহত হয়। বুরহানের মৃত্যুর পর তার সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের প্রধান হন সাবজার আহমেদ ভাট। পরে তাকেও হত্যা করা হয়।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে কাশ্মীর। দুই দেশই পুরো ভূখণ্ডটি দাবি করে। তবে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষ হয় স্বাধীনতা চায়, না হয় পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চায়। তিন দশক ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে কাশ্মীরের বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী সংগঠন।

গত বছর বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে অভিযান শুরু করে ভারত সরকার। এতে কাশ্মীরিদের মাঝে বিক্ষোভ আরো বেড়েছে। ইতিহাসে এই প্রথম ওই অঞ্চলের স্কুলগামী মেয়েরাও রাস্তায় নেমে এসেছে। চলতি বছর কাশ্মীরের স্থানীয় নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র সাত শতাংশ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারতের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে কাশ্মীর। বর্তমানে ৫ লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখে অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত।

ভারতের একমাত্র মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর ২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রতি অনুগত দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাথে এক অপ্রিয় জোটের দ্বারা শাসিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের বিরোধিতাকে আরও তীব্র করছে। ওয়ানির মৃত্যুর পর বিদ্রোহীদের সাথে প্রায় ১০০ জন কাশ্মীরি যুবক যোগ দিয়েছে। পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী থেকে অনেকেই অস্ত্র ছিনিয়ে নিতেও সক্ষম হয়েছে তারা।

গো নিউজ২৪/ আরএস

এ সম্পর্কিত আরও সংবাদ


আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর