ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের জনপ্রিয় বিদ্রোহী নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুবার্ষিকীতে স্থানীয় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে সরকারি বাহিনী। পুলিশ তাদের বিক্ষোভে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করলে জনগণও পাথর ছুড়ে তার জবাব দেয়। গত এক বছর ধরে চলা এই সংঘাতকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংঘাত’ বলে আখ্যায়িত করছেন বিশ্লেষকরা।
পুরো কাশ্মীরজুড়ে কারফিউ জারি করে রেখেছে ভারত। মোবাইল এবং ইন্টারনেট সেবাও সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত কয়েক হাজার সদস্য। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাদের চলাচলের ওপরও আরোপ করা হয়েছে ভয়ানক নিষেধাজ্ঞা। বাড়ির বাইরে গেলেই তাদের গুলি করছে সরকারি বাহিনী।
গত বছরের ৮ জুলাই যখন কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নেতা বুরহান ওয়ানিকে গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় বাহিনী। তখন থেকেই ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে বেসামরিক লোকজনের অংশগ্রহণ বেড়ে চলেছে। তার মৃত্যুর পর কাশ্মীরীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। কয়েক মাস ধরে গণবিক্ষোভে শতাধিক লোককে হত্যা করে ভারতীয় বাহিনী। তাদের পেলেট গুলিতে অনেকেই অন্ধ হয়ে যায়। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কাশ্মীরের মানুষ।
বুরহানের মৃত্যুর পর তার সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের প্রধান হন সাবজার আহমেদ ভাট। পরে তাকেও হত্যা করা হয়। এই সংগঠনটি ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইরত কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠি। ১৯৮৯ সালে উপত্যকাটিতে বিদ্রোহ শুরু হলে সশস্ত্র লড়াই শুরু করে হিজবুল মুজাহিদিন।
বুরহানের মৃত্যুবার্ষিকীতে কাশ্মীরি শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, ‘বুরহার একজন বীর হিসেবে আমাদের মনে স্থান করে নিয়েছে। তার মৃত্যুর পর অনেক তরুণই বিদ্রোহে যোগ দিয়েছে। তিনি আমাদের হৃদয়ে এখনও জীবিত।’
বুরহানের বাবা মুজাফফর ওয়ানি বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের প্রতিবাদ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কখনোই দমন করতে পারবে না। তার ভাষায়, ‘তারা আমাদের দমনের যত চেষ্টা করবে, আমরা ততই এগিয়ে যাবো। এখানে প্রত্যেকেই তাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। নিজের মায়েদের অপমানিত হতে দেয়ার চেয়ে জীবন উৎসর্গকেই পছন্দ করে কাশ্মীরিরা।’
এদিকে বুরহানের বাড়িতে যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে ভারতীয় বাহিনী। এ পর্যন্ত তারা কয়েক হাজার মোটরসাইকেল জব্দ করেছে।
ভারতের একমাত্র মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর ২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রতি অনুগত দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাথে এক অপ্রিয় জোটের দ্বারা শাসিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের বিরোধিতাকে আরও তীব্র করছে এবং ওয়ানির মৃত্যুর পর বিদ্রোহীদের সাথে প্রায় ১০০ জন কাশ্মীরি যুবক যোগ দিয়েছে। পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী থেকে অনেকেই অস্ত্র ছিনিয়ে নিতেও সক্ষম হয়েছে তারা।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে কাশ্মীর। দুই দেশই পুরো ভূখণ্ডটি দাবি করে। তবে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষ হয় স্বাধীনতা চায়, না হয় পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চায়।
তিন দশক ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে কাশ্মীরের বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী সংগঠন। গত বছর বুরহান নিহত হওয়ার পর থেকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই বিক্ষোভ শুরু হয় সেখানে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সেখানকার একটি ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলায় ১৮ সেনা নিহত হয়।
এরপর থেকে কাশ্মীরে অভিযান শুরু করে ভারত সরকার। এতে কাশ্মীরিদের মাঝে বিক্ষোভ আরো বেড়েছে। ইতিহাসে এই প্রথম ওই অঞ্চলের স্কুলগামী মেয়েরাও রাস্তায় নেমে এসেছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের স্থানীয় নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র সাত শতাংশ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারতের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে কাশ্মীর। বর্তমানে ৫ লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখে অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত।
গো নিউজ২৪/ আরএস