সরকারি তালিকায় গডফাদার বদি, মন্ত্রী বলছেন প্রমাণ নেই!


ইমতিয়াজ আমিন, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর: প্রকাশিত: মে ২২, ২০১৮, ০৭:১১ পিএম
সরকারি তালিকায় গডফাদার বদি, মন্ত্রী বলছেন প্রমাণ নেই!

ঢাকা : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সম্প্রতি দেশের মাদক গডফাদারদের একটি তালিকা প্রণয়ন করেছে। সেই তালিকায় দেশজুড়ে মাদক গডফাদারদের সংখ্যা ১৪১ জন। এতে ক্ষমতাধর অনেক রাজনীতিকের ভয়ংকর চেহারা বেরিয়ে আসে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ওই তালিকার দ্বিতীয় পৃষ্ঠার একটি প্যারায় বলা হয়েছে, মাননীয় সংসদ সদস্য (এমপি)  আবদুর রহমান বদি দেশের ইয়াবা জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী। তার ইশারার বাইরে কিছুই হয় না। দেশের ইয়াবা আগ্রাসন বন্ধের জন্য তার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।

আরও বলা হয়েছে, দেশের মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা। এদের মধ্যে ওয়ার্ড, থানা বা মহানগর নেতা থেকে সংসদ সদস্য পর্যন্তও রয়েছেন। মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ডে তারা ডন হিসেবে পরিচিত। আছেন সিআইপি খেতাব পাওয়া ধনাঢ্য ব্যবসায়ী থেকে সরকারি কর্মকর্তারাও।

এছাড়া ২০১৬ সালের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণলয়ের করা তালিকায় শুধু বদিই নয়, ইয়াবা চোরাচালানের গড ফাদার হিসেবে বদির ভাই, ভাগিনা ও ফুফাতো ভাই ও বেয়াইসহসহ তার পরিবারের অন্তত ১৫ জনের নাম রয়েছে। তালিকাটি তখন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়াসহ কয়েকটি থানায় পাঠানো হলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন।

এর পরেও মঙ্গলবার (২২ মে ২০১৮) সচিবালয়ে বদির বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ নেই বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের দেয়া বক্তব্য কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

এদিকে তালিকা প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ জানান, দুদক থেকে মাদক গডফাদারদের নাম তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাই তারা সেই তালিকা প্রণয়ন করেছেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিদ্যমান আইনে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ হাতেনাতে মাদক উদ্ধার ছাড়া তারা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেন না। এক্ষেত্রে দুদক আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।

তালিকায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি বলা হয়েছে। এতে বদির সঙ্গে তার পাঁচ ভাইয়ের নামও উঠে এসেছে। 

তারা হলেন- মৌলভী মুজিবুর রহমান, আবদুস শুক্কুর, মো. সফিক, আবদুল আমিন ও মো. ফয়সাল। তাদের মধ্যে সরকারের প্রায় সব সংস্থার তালিকায় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ছাড়া তার ৫ ভাইয়ের নাম রয়েছে। তবে আপন ভাই ছাড়াও তালিকায় বদির পিএস মং মং সেন ও ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপুসহ আরও বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠভাজনের নাম রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার হয়ে ভিআইপি প্রটেকশনে ইয়াবার বড় বড় চালান টেকনাফে নিয়ে আসার কাজটি করেন বদির ৫ ভাই। আর সেগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি ডিলারদের কাছে পৌঁছে দেন পিএস মং মং সেনসহ তার নিজস্ব অনুসারীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার জেলার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজেই মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের দর্শকের ভূমিকায় হাত গুটিয়ে বসে থাকার আর কোনো উপায় থাকে না। সবাই সবকিছু জানলেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল বেছে নিতে বাধ্য হন।


গো নিউজ২৪/আই

এ সম্পর্কিত আরও সংবাদ


এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর