গরীব শিশুদের মাঝে আলো ছড়ায় হেলাল


জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০১৭, ০৩:২৮ পিএম
গরীব শিশুদের মাঝে আলো ছড়ায় হেলাল

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে আলো ছড়াচ্ছে হেলালের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশার আলো শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের বিনা খরচে শিক্ষা দেয়াই এই প্রতিষ্ঠানের ব্রত। ২০১৪ সালে নিজের টিউশনির টাকায় ২০ জন গরীব শিক্ষার্থী নিয়ে গড়ে তোলেন এই প্রতিষ্ঠান।

শিশু থেকে ৩য় শ্রেণির এ শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থী সংখ্যা এখন ১শ জন।  প্রথম দিকে গরীব শিক্ষার্থীরা পড়লেও এখন কিছু সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরাও পড়তে আসে এখানে। এ কারণে নিয়োগ দিতে হয়েছে বাড়তি শিক্ষক। সচ্ছল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া ১শ টাকা মাসিক ফির টাকার উপর নির্ভর করে এসব শিক্ষকদের সামান্য বেতন দেয়া হয়।

হেলাল নিজেও একজন শিক্ষার্থী। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স শেষ বর্ষের অধ্যয়নরত।  হেলাল উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার দরিদ্র আব্দুল জলিলের সন্তান। জন্মের পর থেকেই দারিদ্র্যতার সাথে যুদ্ধ তার।  কখনো একমুঠো খাবার খেয়ে, আবার কখনো বা উপোস অবস্থায় যেতে হয়েছে বিদ্যালয়ে। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। ঠিকঠাক চালিয়ে নিয়েছেন লেখাপড়া। মাধ্যমিকে পড়ার সময় থেকেই প্রতিবেশীদের বাড়িতে টিউশনি করে চালিয়েছেন নিজের লেখাপড়ার খরচ। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থাভাবে হয়ে উঠেনি। পরে কুড়িগ্রামেই শুরু করেন লেখাপড়া। পাশাপাশি গড়ে তোলেন বিদ্যালয়টি।

হেলাল জানান, তার এলাকার দরিদ্র পবিবারের সন্তানরা যাতে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠা করেছেন আশার আলো শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দরিদ্র শিশুদের জন্য কিছু করার তাগিদেই এই প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে নিজের লেখাপড়ার খরচ এবং প্রতিষ্ঠানটির খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন হেলাল। প্রতিষ্ঠার পর হাসনাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান নূরুজ্জামান ৭টি বেঞ্চ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এরপর আর কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পাননি তিনি। তবে হাল ছাড়েননি। নিজের টিউশনির টাকা এবং সচ্ছল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া মাসিক ফি ১শ টাকায় চলছে প্রতিষ্ঠানটি।

শিক্ষার পাশাপাশি গ্রামের যুবকদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন যুব ফোরাম। এ সংগঠন বাল্য বিয়ে, মাদক ও যৌতুক বিরোধী আন্দলোন করে আসছে। এসব সমাজকর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ আর.ডি.আর.এস বাংলাদেশ ২০১১ ও ২০১২ সালে হেলালকে দিয়েছে উদ্যোমী তারুণ্য সনদ। ২০১৭ সালে দিয়েছে যুব নেতৃত্ব বিকাশ ও যুব সংগঠন ব্যবস্থাপনা সনদ।

উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মনজুর আলম বলেন, ‘বেশ কয়েকবার হেলালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি। সে দীর্ঘদিন থেকে অনেক ভালো কাজ করছে। তাকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করছি।’

গোনিউজ/এমবি
 

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর