অবরুদ্ধ হয়ে শতবর্ষপূর্তির তারিখ ঘোষণা করলেন অধ্যক্ষ


স্টাফ করেসপন্ডেন্ট প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০১৭, ০৭:৩১ পিএম
অবরুদ্ধ হয়ে শতবর্ষপূর্তির তারিখ ঘোষণা করলেন অধ্যক্ষ

রংপুর: কারমাইকেল কলেজের শতবর্ষপূর্তি উদযাপনে অংশ নিতে গত বছরের প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেন।  কথা ছিল ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান দেখবে তারা।  কিন্তু অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করা নিয়ে রাজনৈতিক চাপ আর দ্বন্দ্বের মুখে হঠাৎ করেই শতবর্ষের অনুষ্ঠান স্থগিত করে কলেজ প্রশাসন।  অনুষ্ঠান স্থগিত হওয়ায় চাপা পড়ে যায় আয়-ব্যয়ের হিসাব।

এদিকে বহুল প্রত্যাশিত শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান স্থগিত হওয়ার এগারো মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি কলেজ প্রশাসন।  এ কারণে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে কলেজের প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। তাদের আন্দোলনে এক কাতারে সামিল হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

রোববার (২২ অক্টোবর) দুপুরে বিক্ষুদ্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে কলেজটির অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ মিয়াকে প্রায় দুইঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।  পরে অধ্যক্ষ অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে নিজেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে এসে চলতি বছরের ডিসেম্বরের ১ থেকে ১৪ তারিখের মধ্যে শতবর্ষের অনুষ্ঠান করার ঘোষণা দেন।  এরপর অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী নাজমুল, রাসেল, স্মরণ, আফসানা, রাতুল, সুমন ও রেসি জানান, ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর কারমাইকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটি গত বছরই শতবর্ষ পূর্ণ করেছে। শতবর্ষ পালন উপলক্ষে ২০১০ সাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় ফরম পূরণের সাথে শতবর্ষের জন্য চাঁদা দিয়েছেন। কিন্তু কলেজ প্রশাসন অনুষ্ঠান স্থগিত করে শিক্ষার্থীদের বোকা বানিয়ে রেজিস্ট্রেশনের টাকা নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে। 

অন্যদিকে কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাভেদ ইকবাল জানান, গেল বছরও নতুন-পুরাতন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নতুন করে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন বাবদ সাড়ে ১৩ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিনশ থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কলেজে সাবেক অনেক ছাত্র যারা এমপি-মন্ত্রী আছেন তারাও মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান দিয়েছেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। বরং স্থগিত হওয়ার সুবাদে আদায় হওয়া টাকা কিছু শিক্ষক নিজের কাজে ব্যবহার করেছেন। ফলে নানা অজুহাতে অনুষ্ঠান করতে পারছে না তারা। 

জাতীয় ছাত্র সমাজের কলেজ শাখা সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘অনুষ্ঠান উপলক্ষে বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীরা কলেজে অনেক টাকা দিয়েছে। আমরা বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনছি ওই টাকা তছনছ হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষক তাদের ব্যক্তিগত কাজে ওই টাকা লাগাচ্ছেন। এমনকি এক শিক্ষক ৭৫ হাজার টাকা নিয়েছেন তা এখনো ফেরত দেননি।’

কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুজ্জামান সিজার জানান, অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ মিয়া নিজেই অনুষ্ঠানটি হবে এমন ঘোষণা দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।

কলেজটির অধ্যক্ষ মো. আব্দুল লতিফ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের দাবির সাথে আমি একমত। কিন্তু অতিথি চূড়ান্তসহ বিভিন্ন কারণে তা করা হচ্ছে না। ’

তিনি বলেন, ‘সাবেক অধ্যক্ষ বিনতে হুসেনে আরা বানু গত বছরের ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করেন। কিন্তু তিনি পারেন নি। পরে আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করি অধ্যক্ষ হিসেবে। অনুষ্ঠানের সব ফাইলপত্র আমরা হাতে নিয়েছি এবং অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছি। সোমবার এ নিয়ে স্টাফ কাউন্সিলে বৈঠক করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

গোনিউজ২৪/এমবি

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর