ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির ৭০ বছর উদযাপন করছে ভারত। ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার ওই বক্তব্যে প্রাধান্য পেয়েছে কাশ্মীর ইস্যু। ‘বুলেট এবং নিপীড়ন’ কাশ্মীরে শান্তি বয়ে আনবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
দিল্লিতে দেয়া ওই বক্তব্যে মোদি কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের ‘নীল নকশাকারী’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, শুধু ‘আলিঙ্গনই’ এই ভূখণ্ডের সমস্যার সমাধান করতে পারে। কাশ্মীরের ‘হারানো স্বর্গ’ ফিরে পেতে ওই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান এই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
কাশ্মীর ইস্যুতে শান্তির কথা বললেও সমলোচক এবং ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস বরাবরই অভিযোগ করে এসেছে, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভয়াবহ অবনতি হয়ে কাশ্মীরের শান্তি-শৃঙ্খলার।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে কাশ্মীর। দুই দেশই পুরো ভূখণ্ডটি দাবি করে। তবে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষ হয় স্বাধীনতা চায়, না হয় পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চায়। তিন দশক ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে কাশ্মীরের বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী সংগঠন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের এই পর্যন্ত কাশ্মীর সহিংসতায় অন্তত ১৩০ বিদ্রোহী ও ৩৯ সেনা নিহত হয়েছে। গত বছরের ৮ জুলাই কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন নেতা বুরহান ওয়ানিকে ভারতীয় বাহিনী গুলি করে হত্যা করার পর থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে বেসামরিক লোকজনের অংশগ্রহণ বেড়েই চলেছে। তার মৃত্যুর পর কয়েক মাস ধরে গণবিক্ষোভে শতাধিক লোককে হত্যা করে ভারতীয় বাহিনী। পেলেট গুলিতে অনেকেই অন্ধ হয়ে যায়। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কাশ্মীরের মানুষ।
গত বছর বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে অভিযান শুরু করে ভারত সরকার। এতে কাশ্মীরিদের মাঝে বিক্ষোভ আরো বেড়েছে। ইতিহাসে এই প্রথম ওই অঞ্চলের স্কুলগামী মেয়েরাও রাস্তায় নেমে এসেছে। চলতি বছর কাশ্মীরের স্থানীয় নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র সাত শতাংশ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারতের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে কাশ্মীর। বর্তমানে ৫ লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখে অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত।
ভারতের একমাত্র মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর ২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রতি অনুগত দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক অপ্রিয় জোটের দ্বারা শাসিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের বিরোধিতাকে আরও তীব্র করছে। ওয়ানির মৃত্যুর পর বিদ্রোহীদের সাথে প্রায় ১০০ জন কাশ্মীরি যুবক যোগ দিয়েছে। পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী থেকে অনেকেই অস্ত্র ছিনিয়ে নিতেও সক্ষম হয়েছে তারা।
স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্যে ভারতীয় মুসলিম নারীদের তিন তালাক প্রথারও সমালোচনা করেছেন মোদি। এতে তিনি ওই প্রথার বিরোধীদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। এছাড়া কথা বলেছেন নিজ দেশের ধর্মীয় সহিংসতা নিয়ে। ধর্মের নামে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের সমালোচনা করেন তিনি।
২০১৪ সালে মোদির দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে গো-হত্যাকারী সন্দেহে ভারতে বেড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর হামলার ঘটনা। হিন্দুরা গরুকে দেখে একটি পবিত্র প্রাণি হিসেবে। তাই গো রক্ষার নামে এসব হামলা করে আসছে উগ্র হিন্দুরা। এ পর্যন্ত দেশটির বেশ কয়েকটি রাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে গরু জবাই। গত দুই বছরে গো রক্ষার নামে হত্যা করা হয়েছে অন্তত এক ডজন মানুষকে। এর বেশিরভাগই হয়েছে গুজবের ওপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে টার্গেট করা হয়েছে মুসলিমদের।
গো নিউজ২৪/ আরএস