‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের’ অভিযোগে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী চারটি আরব রাষ্ট্র ১৩ দফা দাবির একটি তালিকা দিয়েছে দোহাকে। এতে আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ আরও কিছু দাবি পূরণের কথা বলা হয়েছে।
ওই চার দেশের এক কর্মকর্তার এক বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর এবং বাহরাইনের দেয়া ওই দাবির তালিকায় আরও আছে: কাতারে নির্মিত তুরস্কের সেনাঘাঁটি বন্ধ করা এবং যেসব ব্যক্তিকে তাদের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হয়েছে, তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া।
কুয়েতের মাধ্যমে এই তালিকা কাতারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে এসব শর্ত মেনে নেয়ার জন্যও বলা হয়েছে কাতারকে।
বার্তাসংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, আরব বিশ্বের ইসলামি আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুড, হিজবুল্লাহ, আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের সঙ্গেও সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বলা হয়েছে দেশটিকে। অবশ্য কাতার আগে থেকেই বলে আসছে, এসব সংগঠনের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।
এ ব্যাপারে কাতারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রও নীরব আছে। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন জানিয়েছিলেন, কাতারের প্রতি তার প্রতিবেশীদের দেয়া শর্ত অবশ্যই ‘যৌক্তিক এবং কার্যকর করার মতো’ হতে হবে।
কাতার শর্তগুলো মেনে নিলে প্রথম বছর প্রতি মাসে একবার দেশটির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হবে। দ্বিতীয় বছরে তিন মাস পরপর এটা করা হবে এবং পরবর্তী ১০ বছর বাৎসরিকভাবে কাতারকে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ মে কাতারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের কিছু তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যাওয়ার পর এ নিয়ে দেশটির সঙ্গে অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর বিরোধ শুরু হয়। ৫ জুন ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেয়ার অভিযোগ তুলে ছোট্ট এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব এবং তার মিত্র মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় মালদ্বীপ এবং লিবিয়া ও ইয়েমেনের পশ্চিমা সমর্থিত সরকার। ওই অভিযোগকে শুরু থেকেই ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে আসছে কাতারি প্রশাসন।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়, আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চাইলে কাতারের অবশ্যই ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন হামাস এবং আরব অঞ্চলের ইসলামি আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুডকে সহায়তা দেয়া বন্ধ করতে হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তার দেশ কোনও সংগঠনকে সহায়তা দেয় না। এছাড়া হামাসকে পশ্চিমা বিশ্ব সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করলেও আরবরা তাদের ‘বৈধ প্রতিরোধ আন্দোলন’ হিসেবেই বিবেচনা করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এরপরই কাতারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫৯ ব্যক্তি ও ১২ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী’ তালিকাভুক্ত করে সৌদি আরব, বাহরাইন, মিসর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই তালিকায় খ্যাতনামা আলেম ও মুসলিম ব্রাদারহুডের আধ্যাত্মিক নেতা ইউসুফ আল কারজাভিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কাতারের সঙ্গে বর্তমানে আরব দেশগুলোর মধ্যস্থতায় প্রধান ভূমিকা পালন করছে কুয়েত। এছাড়া মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে পাকিস্তান ও তুরস্ক।
আরব দেশগুলোও দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, কাতার ইসলামপন্থিদের সহায়তার দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখিয়ে আসছে দেশগুলো। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। ব্রাদারহুড রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাদের এই আদর্শকে হুমকি হিসেবে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো।
২০১২ সালে মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রাদারহুড নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলেও ২০১৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এরপর থেকে ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপর চালানো হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর নির্যাতন। এতে সমর্থন দেয় সৌদি সরকার।
গো নিউজ২৪/ আরএস