মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ইসলামি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডকে পুরোপুরি ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করতে সমস্যা আছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জটিলতা তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন।
বুধবার মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে হাজির হয়ে উপসাগরীয় সংকট নিয়ে কথা বলেন তিনি। ওই সময় মুসলিম ব্রাদারহুডকে কাতারের সমর্থন নিয়ে কথা ওঠে। সিনেট কমিটিকে টিলারসন বলেন, পুরো সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত’ করাটা সমস্যাপূর্ণ। বর্তমানে মুসলিম ব্রাদারহুডের ৫০ লাখেরও বেশি সদস্য আছে এবং অনেক দেশের সরকারেও তাদের অংশীদারিত্ব আছে।
বাহরাইন এবং তুরস্কের পার্লামেন্টের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেকেই এসব সরকারে অংশীদার হিসেবে আছে। তারা সব সময় সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানিয়েছে।’
মার্কিন এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, ‘তাই পুরো মুসলিম ব্রাদারহুডকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করতে আমার মনে হয়, আপনাদের এর জটিল দিকগুলো দেখা দরকার।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ কূটনীতিক জানান, ওয়াশিংটন সংগঠনটির কিছু অংশকে সহিংসতা সৃষ্টির জন্য দায়ী মনে করে। তবে পুরো সংগঠনকে এই তালিকায় আনা জটিল।
এর আগে গত ৫ জুন মুসলিম ব্রাদারহুডসহ কিছু সংগঠনকে সমর্থনের অভিযোগে কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিসর। যদিও আরব রাষ্ট্রগুলোর অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছে দোহা। ওইসব দেশের বক্তব্য, ব্রাদারহুড, ‘চরমপন্থি’ সংগঠন।
আরব বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ইসলামি রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড। অনেক দেশ এই দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রাখলেও, অনেক দেশেই আবার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তারা। কোনও কোনও সরকারেও অংশীদার হিসেবে আছে। ব্রাদারহুড বর্তমানে বাহরাইন, মিসর, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিরিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিষিদ্ধ।
১৯২৮ সালে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম মনিষী এবং শিক্ষক হাসানুল বান্না। সার্বজনীন ইসলামি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই তিনি দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ইসলামি মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্য ছিল তার। রাজনৈতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ব্রাদারহুড তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। তবে বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে দলটি তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। অনেকে এই দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে আলাদা সংগঠন করেছেন। তাদের কেউ চরমপন্থার সঙ্গেও যুক্ত হয়েছেন।
আরব দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, কাতার ইসলামপন্থিদের সহায়তার দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখিয়ে আসছে দেশগুলো। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। ব্রাদারহুড রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাদের এই আদর্শকে হুমকি হিসেবে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো।
২০১২ সালে মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রাদারহুড নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলেও ২০১৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এরপর থেকে ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপর চালানো হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নির্যাতন। এতে সমর্থন দেয় সৌদি সরকার।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, অংশীদারিত্বমূলক রাজনীতি এবং নির্বাচনী পদ্ধতির ক্ষেত্রে সুন্নি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুড সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটপূর্ণ সময় পার করছে দলটি।
গো নিউজ২৪/ আরএস
