ঢাকা শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে যেভাবে হত্যা করা হতো শিক্ষার্থীদের


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ১০, ২০১৭, ১১:২৮ এএম আপডেট: জুন ১৩, ২০১৭, ০৪:৪৫ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে যেভাবে হত্যা করা হতো শিক্ষার্থীদের

ঘটনার শুরু ১৮৭৯ সাল থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন অঙ্গরাজ্যে খোলা হয় চিমাওয়া ইন্ডিয়ান স্কুল নামের একটি আবাসিক স্কুল। স্কুলটি খুলেছিলেন দেশটির সাবেক সেনা কর্মকর্তা রিচার্ড এইচ প্র্যাট। বলা হয়েছিল, স্কুলটির উদ্দেশ্য হবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অসভ্য’ রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসীদের সভ্য করে তোলা। আর এ কারণেই স্কুলের নামের সাথে ‘ইন্ডিয়ান’ কথাটা জুড়ে দেয়া হয়েছে। 

তবে স্কুলটির সত্যিকারের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। এর রয়েছে এক অজানা উপাখ্যান। ২০০৩ সালে একবার আলোচনায় এসেছিল স্কুলটি। নেশাগ্রস্থ এক ছাত্রকে স্কুলের আটককেন্দ্রে আটকে রাখায় মৃত্যু হয়েছিল তার। তবে রহস্যটা সেখানে নয়।

স্কুলটিতে রয়েছে একটি বিশাল সমাধিক্ষেত্র। দেশটির মনটানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মার্শা স্মল তার মাস্টার্স গবেষণার অংশ হিসেবে ওই স্কুলটি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আবিষ্কার করেছেন সমাধিক্ষেত্রের অনেক রহস্য। তার মতে, এখানে গোপন কবরের সংখ্যা হাজার হাজার না হলেও শত শত হবে সন্দেহ নেই। ভূগর্ভে অনুসন্ধান চালাতে পারে এমন একটি রাডারের মাধ্যমে অনেকগুলো গোপন কবর আবিষ্কার করেছেন তিনি। 

অসংখ্য শিশুকে জোর করে তাদের পরিবার এবং পিতৃভূমি থেকে নিয়ে আসা হতো এখানে। সরকারি হিসাব অনুসারে, ১৯২৬ সাল পর্যন্ত এই স্কুলটির ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিল আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা। তাদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার কাজ চলত স্কুলটিতে। রাজি না হলে শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হতো শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতন। শেষ পর্যন্ত তাদের স্থান হতো ওই সমাধিক্ষেত্রের গোপন কবরে।

স্কুলে ১৮৯০ সালের একটি পুরানো নোট বইয়ে এক ছাত্রের একটি ছোট্ট লেখা খুঁজে পেয়েছিলেন স্মল। তাতে লেখা ছিল, ‘আমি যখন কবরে থাকব, দয়া করে আমাকে স্মরণ করো।’ স্মল মনে করেন, স্কুলটিতে সচরাচরই ঘটতো শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা।

তার মতে, অসভ্যদের সভ্য করার জন্য স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলেও আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, ‘কিল দ্য ইন্ডিয়ান, সেভ দ্য ম্যান’। অর্থাৎ, রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসীদের হত্যা করো আর মানুষদের বাঁচাও। এ থেকে বোঝা যায়, তৎকালীন মার্কিনিরা ছিল ভয়ানক বর্ণবাদী। তারা রেড ইন্ডিয়ানদের মানুষ মনে করতো না।

রেড ইন্ডিয়ানদের একটি স্কুল

স্মল নিজেও রেড ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের একজন সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের ভূমি থেকেই আমরা জীবনের সব কিছু শিখেছি। এখানে আমার জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পাই। যেসব ছেলেমেয়েদের এখানকার কবরগুলোতে সমাহিত করা হয়েছে, তাদের ভয়ানক ভাগ্যের কথা আমি ভাবতে পারি না।’

এখানকার রহস্যময় ঘটনা নিয়ে সাত বছর ধরে গবেষণা চালায় কানাডার ট্রুথ কমিশন। তাদের মতে, স্থানটিতে সাংস্কৃতিক গণহত্যা চালানো হয়েছিল। নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটির সহকারি অধ্যাপক ডেনিস লাজিমোদিয়ার বলেন, ‘এখানকার ঘটনা আসলেই আশ্চর্যজনক। অসংখ্য ছেলেমেয়েদের জাহাজে করে তাদের মা-বাবার কাছ থেকে নিয়ে আসা হতো। আর কখনোই তারা মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে পারত না।’

লাজিমোদিয়ার বাবাও ছিল এ ঘটনার ভুক্তভোগী। তাকেও জোর করে স্কুলটিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার বাবা বলেন, ‘একাকিত্ব, আর সবাইকে ছেড়ে আসার অনুভূতি আমাদের তাড়া করে বেড়াতো। শিশুরা এখানে থাকতো পুষ্টিহীনতায়। যৌন এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হতো তারা।’

লাজিমোদিয়া বলেন, ‘এটা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গোপন ইতিহাস। এটা ইতিহাসের কোনো বইতে লেখা নেই। কখনো কখনো আমরা আমাদের নিজেদের পরিবারের কাছ থেকেও এসব জানতে পারতাম না।’ 

এভাবেই একসময় বর্ণবাদী মার্কিনিরা তাদের দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর চালাতো নানা রকম বর্বরতা। তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হতো ভিন্ন সংস্কৃতি এবং বাধ্য করা হতো খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণে। আর তাদের কথা মানতে অস্বীকার করলেই স্থান হতো সমাধিক্ষেত্রের গোপন কবরগুলোতে।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও