ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্ল্যাট বাসায় এসব কী চলছে?


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৩, ০৮:২৪ এএম
ফ্ল্যাট বাসায় এসব কী চলছে?

“আমার পেশা যৌনকর্ম। বয়স ৩১। অনেক দিন এই লাইনে আছি। গত পাঁচ বছর ধরে অনলাইনে একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ভাইদের নাম ও ফোন নম্বরসহ রাস্তায় যে কার্ড ছিটানো থাকে, তারা আসলে দালাল। ওসব নম্বর দেখে কেউ কল করলে, তাকে বাসা বা হোটেলে নিয়ে আসা হয়। আমরা অফিসের মতোই ৯টা-৫টা ভাড়া করা রুম বা হোটেলে থাকি। খদ্দের এলে ৬-৮ জন করে মেয়ে দেখানো হয়। ধরেন, খদ্দের কাজ শেষে দেড় হাজার টাকা দিলো। সেই টাকা কিন্তু আমাদের হাতে দেয় না। যে বাড়ি বা হোটেলে কাজ হয়, সেখানকার টাকা অমুক-তমুকের খরচ দিয়ে, দালাল নিজেরটা রাখার পরে আমাকে হয়তো দেবে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আমরা সেটা নিয়েই বের হয়ে আসি। টাকা যেহেতু অগ্রিম দেয় না, কাজ শেষে দেয়— সেহেতু এর বেশি চাইতে গেলে হুমকি-ধমকি দেয়। এমনও হয়েছে মাইরধর করে পুলিশে ধরায়ে দিয়েছে।”

কথাগুলো বলছিলেন এক যুগ ধরে যৌন পেশায় কাজ করা সোনালী। একবার এই পেশায় আসার পর কীভাবে বাধ্য হয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হয়, সেসব নিয়ে কথা বলেন সোনালী, রেশমি ও জাহানারা। তাদের প্রত্যেকের দাবি—দালালেরা এখনকার মতো ক্ষমতাশালী কখনোই ছিল না। কেননা, আগে পেশাটা সরাসরি কর্মীরাই নিয়ন্ত্রণ করতো। এখন সবই হয় এই ‘ভাই চক্রের’ কথা মতো। তারাই খদ্দের জোগাড় করে, তারাই জায়গা বরাদ্দ করে, তারাই আয় করে, কেবল কাজটা আমরা করি।

অ্যাপার্টমেন্ট বাড়িতে ‘স্পা সেন্টারের’ আড়ালে যৌন ব্যবসা

রাস্তায় চলার পথে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় বিভিন্ন ভাইয়ের নামে ভিজিটিং কার্ড। কার্ডগুলোতে কেবল নাম ও ফোন নম্বর দেওয়া থাকে। থাকে না কোনও ঠিকানা। তেমনি এক ভাইয়ের কার্ড দেখে খদ্দের সেজে রিমন (ছদ্মনাম) কল দেন। তাকে রাজধানীর বনানীর কাকলী বাসস্ট্যান্ডে ডাকা হয়। বলা হয়—তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ও মডেল রয়েছে। কাকলী থেকে দালালের লোক রিমনকে বনানী কবরস্থানের গলির এক অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যায়। সেই অ্যাপার্টমেন্টের সব ফ্ল্যাটে বিভিন্ন অফিস। ওপরের দিকে একটি ফ্ল্যাটের ভেতর স্পা সেন্টারের মতো সাজানো। ৬-৭ জন মেয়ে দেখিয়ে তাকে পছন্দ করতে বলা হয়। রিমন অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘মেয়েগুলোর বয়স খুব কম এবং কোনোভাবেই তাদের শিক্ষিত শ্রেণির বলা যাবে না।’ মেয়ে পছন্দ হয়নি বলে তিনি বের হয়ে আসতে চাইলে ভেতর থেকে মূল দালাল হাজির হয়ে তাকে আটকানোর চেষ্টা করে ও নানাবিধ ভয় দেখায়। পরে নানা কৌশলে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হন রিমন। কিন্তু তারপরে বিভিন্ন নম্বর থেকে কল করে সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি পাবলিক করা হবে বলে রিমনকে ভয় দেখানো হয়।

মেয়েরা যে প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেটভুক্ত হয়

ঢাকার ভাসানটেক বস্তির ১৪ বছরের মেয়ে নাসিমাকে একদিন পাশের গলির রহিমা খালা বলেন কাজে যাওয়ার কথা। টানা এক মাস ধরে তাকে এই কাজে যাওয়া, কম সময়ে টাকা আয়ের নিশ্চয়তার লোভ দেখিয়ে অবশেষে রহিমা সফল হন। নাসিমা এখন যৌনকর্মী। তিনি কাজ পান দুই জন দালালের মাধ্যমে। তাদের কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চললে হতে হয় শারীরিক নির্যাতনের শিকার। এই ‘ভাইয়েরা’ এলাকা ভাগ করে নিয়ে কাজ করে। তাদের হাতে মেয়ে থাকে, এক মেয়েকে দিয়ে আরেক মেয়েকে টানার কৌশলও শেখানো হয়। কৌশলে নতুন নতুন মেয়েকে  কাজের কথা বলে হোটেলে এনে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে তারা কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আরেক যৌনকর্মী আয়েশা বলেন, ‘সাধারণত প্রেমের কথা বলে গ্রাম থেকে ভাগিয়ে আনা হয়—এমন অনেক মেয়ে নিয়ে একেকটি ভাইয়ের আস্তানা করা হয়। গার্মেন্টসে কাজ দেওয়ার নামে গ্রাম থেকে আনা হয় অভিভাবকহীন নারীদের।’ তবে তিনি এও বলেন, ‘‘এখন অনেক নারী অন্য ‘ভালো’ জীবনের সুযোগ থাকার পরেও এই পেশায় আসছে, স্বেচ্ছায়।’’

ঢাকার বাইরে থেকেও আসে

কেবল ঢাকার ক্ষেত্রে অনলাইন যোগাযোগটা বেশি উল্লেখ করে যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কর্মরত আয়েশা আকতার মিম বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসেন, তাদের বাসাবাড়ি ভাড়া করে রাখা হয়। এই মেয়েদের শুরুটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় না বুঝে। ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসেন, তাদের আনা হয় গার্মেন্টস বা বাসাবাড়িতে কাজের কথা বলে। এরপর তাদের কাজে নামানো হয়। ভিডিও করে পরিবারের লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তখন তারা বাধ্য হন কাজ চালিয়ে যেতে। এরা ১০-১৫ দিন একটা জায়গায় থাকেন, তারপর আবার গ্রামে ফিরে যান। আবারও হয়তো ডাক দিয়ে নিয়ে আসা হয় কিছু দিনের জন্য।’

একটি ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে মিম বলেন, ‘একবার ১২ বছরের একটি মেয়ে গ্রাম থেকে এসে এই কাজে জড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খদ্দের সেজে একজন গিয়ে তাকে একটা বাটন ফোন দিয়ে আসে। এরপর তাকে সেখান থেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হয়। সে কিন্তু আর গ্রামে ফিরে যেতে পারেনি। আমাদের সঙ্গেই এখন কাজ করে।’

১০-১৫ শতাংশ টাকা যৌনকর্মীদের হাতে যায়

যৌনকর্মীরা বলছেন, সময়ের ওপর ভিত্তি করে কাজপ্রতি খদ্দেরকে ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এরমধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পায় যৌনকর্মীরা। আর বাকি টাকা তাহলে কোথায় যায়, প্রশ্নে তারা বলছেন তিনটি গ্রুপের কথা—দালাল, বাড়ি বা হোটেল ভাড়া করে যে সে এবং ‘অমুক- তমুক’। এই ‘অমুক-তমুক’ টাকাটার মধ্যে পুলিশের টাকা আছে বলে তাদের দাবি। ‘জীবনের আলো’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শাহনাজ বলেন, ‘কে কোন এলাকায় কাজ করেন, পুলিশ তা সবই জানে। এদের মধ্যে বোঝাপড়া আছে। কখনও কখনও আমরা একটা কাজের জন্য যাওয়ার পর চারটে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। করতে না চাইলে পুলিশের ভয় দেখানো হয়। দালালদের যদি ধরেন, তাহলেই বেরিয়ে আসবে— কার সঙ্গে কার আঁতাত রয়েছে।’

খদ্দেরদের ঝুঁকি বেশি

যৌনকর্মী ও তাদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন শাহনাজ। তিনি বলেন, ‘‘কার্ড দেখে ‘ভাইদের’ সঙ্গে যোগাযোগ করে বাসাবাড়ি ও হোটেলে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ও খদ্দেরদের উভয়ের ঝুঁকি আছে। তবে রিস্ক বেশি খদ্দেরদের। আমাকে হয়তো জোর করে চারটি কাজ করিয়ে একটার টাকা দিয়ে বঞ্চিত করবে। কিন্তু অনেক দালাল আছে, যারা এভাবে লোক টেনে এনে সর্বস্ব রেখে দেয়। সেই খদ্দেররা থানা বা অন্য কোথাও অভিযোগও করতে পারবে না। সামাজিক বাধা-নিষেধের কারণে তারা কোথাও গিয়ে বলতে পারে না তাদের সঙ্গে কী ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে। আগের সময়ে যখন দালালদের হাতে পুরো সিস্টেমটা ছিল না, তখন এ রকম হতো না।’’

তবে ‘ভাইদের’ আস্তানা খুঁজে পাওয়া গেছে যেসব এলাকায়, সেসব এলাকার থানা-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই এ বিষয়ে স্বীকার করতে চাননি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন বাসাবাড়ি এবং হোটেলে পতিতাবৃত্তির ঘটনা ঘটে, এমন বেশ কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয়। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারাই সম্পৃক্ত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে।’

মেয়েদের কম টাকা দেওয়া, নানা ধরনের নিপীড়ন করার অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মিরপুর এলাকার দাপুটে এক ‘ভাই’ প্রথমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘এ লাইনে পরিচিত হয়ে যাওয়া মেয়েরাই উল্টা আমাদের ঝামেলায় ফেলে। আমরা কোনও মেয়েকে আটকে রাখা বা কম টাকা দেই না। তারা আগে থেকেই জানে কয় টাকা পাবে। এমনকি পুলিশের সঙ্গেও আমাদের চেয়ে ওদের সেটিং বেশি থাকে।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

বিচিত্র সংবাদ বিভাগের আরো খবর
ফ্ল্যাট বাসায় এসব কী চলছে?

ফ্ল্যাট বাসায় এসব কী চলছে?

মা হতে ভালো লাগে তাই গর্ভ ভাড়া দেন তরুণী!

মা হতে ভালো লাগে তাই গর্ভ ভাড়া দেন তরুণী!

স্ত্রীকে পর্নো তারকার মতো পোশাক পরতে বলায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা

স্ত্রীকে পর্নো তারকার মতো পোশাক পরতে বলায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা

বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই আমের কেজি সাড়ে ৩ লাখ টাকা

বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই আমের কেজি সাড়ে ৩ লাখ টাকা

‘তোমার মা-বাবার উদ্বেগ না থাকলেও আমাদের আছে’, বাইকারকে পুলিশ

‘তোমার মা-বাবার উদ্বেগ না থাকলেও আমাদের আছে’, বাইকারকে পুলিশ

চলন্ত বাইকে তরুণ-তরুণীর অদ্ভুত কাণ্ড!

চলন্ত বাইকে তরুণ-তরুণীর অদ্ভুত কাণ্ড!