ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যে দেশে কন্যাশিশুদের যৌনতার কাজে বিক্রি করে দেয় মায়েরা


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০১৭, ০৫:২৩ পিএম আপডেট: জুলাই ২৫, ২০১৭, ১১:২৯ এএম
যে দেশে কন্যাশিশুদের যৌনতার কাজে বিক্রি করে দেয় মায়েরা

যৌনতার কাজে সেফাককে যখন তার মা বিক্রি করে দেয়, তখন তার বয়স ছিল ১৩ বছর। তাকে প্রথমে একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে কুমারিত্বের সনদ সংগ্রহ করা হয়। এরপর নেয়া হয় একটি হোটেলে। সেখানে টানা কয়েকদিন ধর্ষণ করা হয় মেয়েটিকে। তিনরাত হোটেলে কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসে সেফাক।

কম্বোডিয়ার দরিদ্র গ্রাম স্ভে পাকে বেড়ে উঠেছে এই মেয়ে। রাজধানী ফুনম পেনের পাশেই অবস্থিত জেলে অধ্যুষিত গ্রামটি। যৌনতার কাজে শিশুদের বেচাকেনার জন্য কুখ্যাতি আছে এই গ্রামের।

সেফাকের মা অ্যান জানান, কঠিন সময় পার করছে তার পরিবার। তিনি একটি ঋণ নিয়েছিলেন। সুদে-আসলে তা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ডলারে। ঋণদাতারাও বারবার হুমকি দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এক নারীর কাছ থেকে মেয়ের কুমারিত্ব বিক্রির বিনিময়ে বড় অংকের অর্থ পাওয়ার প্রস্তাব পান অ্যান।

সেফাক জানায়, তার কুমারিত্বের বিনিময়ে ৮০০ ডলার দেয়া হয় তার মাকে। বাড়ি ফিরে আসার পর যৌনপল্লিতে কাজ করার জন্য সেফাককে চাপ দিচ্ছেন অ্যান। এদিকে অ্যানের ভাষ্য, তিনি তার সিদ্ধান্তের জন্য দুঃখবোধ করেন। এখন তিনি যা জানেন, তা আগে জানলে মেয়েকে কখনোই বিক্রি করতেন না।

২০১৩ সালে প্রথম সেফাকের সঙ্গে কথা বলে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। কম্বোডিয়ায় যৌনতার উদ্দেশ্যে বেচাকেনার শিকার শিশুদের নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়ে গণমাধ্যমটিকে কথা বলতে হয়েছিল আরও কিছু ভুক্তভোগী শিশুর সঙ্গে। সেফাককে অবশ্য শেষ পর্যন্ত রক্ষা করেছিল অ-লাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অ্যাজেপ ইন্টারন্যাশনাল মিশন’ (এআইএম)। এখন সেফাক এই সংস্থার পরিচালিত একটি কারখানায় কাজ করে। সেখানে ব্রেসলেট এবং জামাকাপড় তৈরি করে সে।

এই তরুণীর ভাষায়, ‘এখন আমি আগের চেয়ে অনেক স্থিতিশীল। যথেষ্ট স্থিতিশীল। এখন আমার ভালো একটি চাকরি আছে। আমি চাই, আমার মতো ভুক্তভোগী অন্যরাও যেন এখানে কাজ করতে আসে।’

শিশুপাচারের বিরুদ্ধে লড়তে ২০০৫ সালে সেফাক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মার্কিন নাগরিক ডন ব্রিউস্টার। সাবেক এই ধর্মযাজক জানান, এ পর্যন্ত তার সংস্থা সাতশোর বেশি শিশুকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে। তিনি তার প্রচেষ্টার বেশিরভাগই ব্যয় করেছেন স্ভে পাক গ্রামে। এই গ্রামে দারিদ্র্য অকল্পনীয়। এমনও পরিবার আছে, যাদের দৈনন্দিন উপার্জন এক ডলারেরও কম। বাসিন্দাদের একটি বড় অংশই ভিয়েতনাম থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। অনেকেই নদীর ওপর নৌকায় বাস করেন। আর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

ব্রিউস্টার বলেন, ‘যখন আমরা শিশুদের যৌনতার কাজে পচার সম্পর্কে কথা বলি, তখনই একটা অস্তত্বি তৈরি হয়। আমরা যখন স্ভে পাক গ্রামে আসি, তখন ১০০ ভাগ নিশ্চিত ছিল যে কেউ মেয়ে হয়ে জন্ম নিলেই তাকে পাচারের শিকার হতে হবে। এখন এই হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ৫০ ভাগে দাঁড়িয়েছে।’

তবে তিনি এটাও জানান, যদিও এই গ্রামের মেয়েরা আর যৌনপল্লিতে বিক্রি হচ্ছে না, তবু হোটেলগুলোতে পাচারের ব্যবসা থেমে নেই। সেখানে এটা ধরা কঠিন এবং প্রতিরোধ করা আরও কঠিন।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন মতে, পাচার ঠেকাতে ন্যূনতম শর্তগুলো পূরণ করতে পারেনি কম্বোডিয়া। তবে এ ব্যাপারে তাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে পাচারের দায়ে মামলার সংখ্যা বেড়েছে।

এআইমের তদন্ত বিষয়ক পরিচালক এরিক মেলড্রাম পাচারকারী অপরাধীদের ধরতে কম্বোডিয়ার পুলিশের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, গত তিন বছরে ১৩০টি মেয়েকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছেন তারা। এজন্য ৫০টিরও বেশি অভিযান চালাতে হয়েছে তাদের। এ কাজে পুলিশের সহায়তা ছিল অপরিহার্য।

এরিক বলেন, ‘পুলিশ খুবই ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে দারুণ সহায়তা পেয়েছি। অপরাধীদের ধরতে তাদের সদিচ্ছা অনেক কাজ করেছে। কম্বোডিয়া এখনও একটি দরিদ্র দেশ। এখানকার মানুষের টাকা দরকার। দুর্ভাগ্যবশত শিক্ষা এবং কাজের অভাবে তাদের অর্থ উপার্জনের একটি উপায় হয়ে উঠছে যৌনতা বিক্রি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারগুলো তাদের মেয়েদের এ কাজে দিতে চায় না। কিন্তু তাদের কোনও বিকল্পও থাকে না। বোঝা খুব কঠিন যে কেন মায়েরা তাদের মেয়েদের এই কাজে দিয়ে দিচ্ছে। তাদের কোনও অর্থসম্পদ নেই। টাকা উপার্জনের জন্যই মেয়েদের এই কাজে দিয়ে দেয়া হয়।’

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও