ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বনেতাদের যেভাবে হত্যা করে মার্কিন গোয়েন্দারা


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০১৭, ১১:৫২ এএম
বিশ্বনেতাদের যেভাবে হত্যা করে মার্কিন গোয়েন্দারা

চলতি বছর উত্তর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা শুরুর পর থেকেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি’ (সিআইএ) হত্যার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে আসছে দেশটি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে বিশ্বনেতাদের হত্যার পেছনে সিআইএ’র কালো হাত থাকার ঘটনা কম নয়। ভিন্ন মতাবলম্বীদের শেষ পর্যন্ত দমাতে না পারলে তাদের চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার পথই অবলম্বন করে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দেশ রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অভিযোগে এর আগে বেশ কয়েকজন নেতাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত এবং হত্যার অভিযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিউবার সাবেক নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্র বারবার নস্যাৎ করে দেয়া এই নেতা একবার বিদ্রুপ করে বলেছিলেন, ‘গুপ্তহত্যা থেকে বাঁচার কোনও প্রতিযোগিতা অলিম্পিক গেমসে থাকলে, আমি স্বর্ণ পদক জিততাম।’

গত মে মাসে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগ তাদের এক বিবৃতিতে জানায়, সিআইএ তার পুরোনো সেই গুপ্তহত্যার পথ ত্যাগ করেনি। প্রেসিডেন্ট কিম জং উনকে হত্যার ষড়যন্ত্রে হাত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যুক্ত একজন নাগরিক এই হত্যার প্রচেষ্টায় সরাসরি জড়িত বলেও জানায় দেশটি।

কিমকে হত্যায় এক ধরণের জৈবরাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যাতে তেজষ্ক্রিয় ও বিষাক্ত উপাদান রয়েছে। এই বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশের ছয় থেকে বারো মাস পরে কাজ করে। অবশ্য এই দাবি অস্বীকার করে সিআইএ’র একজন মুখপাত্র।

তা সত্ত্বেও অভিযোগটি উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। কারণ বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতাকে হত্যা এবং উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) তৎপরতা অনেকটা সর্বজনবিদিতই বলা যায়।

যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি হত্যা প্রচেষ্টা চালিয়েছিলো ফিদেল কাস্ত্রোর বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে ৯০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কিউবার সমাজতান্ত্রিক এই নেতাকে হত্যাচেষ্টাগুলোও ছিলো বেশ অভিনব। গোয়েন্দা চলচ্চিত্রগুলোকেও যেন তা হার মানিয়ে দেয়! এরমধ্যে ছিলো ক্যাস্ত্রোর প্রিয় চুরুটে বিস্ফোরক গুজে দেয়া এবং স্কুবা ডাইভিং স্যুটে বিষ মাখিয়ে দেয়ার মতো চমৎকৃত পন্থা। খোদ যুক্তরাষ্ট্রই তাকে আটবার হত্যা চেষ্টার কথা স্বীকার করে। আর কিউবার দাবি কয়েকশবার এমন চেষ্টা করা হয়েছিল।

বহু বিদ্রোহের পর ১৯৫৯ সালে কিউবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়া কাস্ত্রোকে ৬৩৮ বার হত্যার চেষ্টা করে সিআইএ- এমন দাবি কাস্ত্রোর ৪৯ বছরের শাসনামলের পুরো সময় তার নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ফেবিয়ান এসকালান্তের। কাস্ত্রোকে হত্যার চেষ্টা বেশির ভাগই হয় ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক চ্যানেল ফোর কাস্ত্রোকে হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়ে ‘৬৩৮ ওয়েজ টু কিল কাস্ত্রো’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে, যা ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যে সম্প্রচার করা হয়।

কাস্ত্রোর ক্ষেত্রে বিফল হলেও ১৯৪৫ সাল থেকে বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতাকে হত্যায় ও ক্ষমতা থেকে উৎখাতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সফল হয়। কখনও এই তৎপরতা সরাসরি চালানো হলেও অধিকাংশ সময়ই তা পরিচালিত হয় স্থানীয় সেনাবাহিনী, ভাড়াটে সন্ত্রাসী বা বিদ্রোহীদের মাধ্যমে। তবে সত্তরের দশকে সিনেটের পরিচালিত এক তদন্তের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এই কার্যক্রম অনেকটাই হ্রাস করে। তদন্তে সিআইএ’র অভিযানের মাত্রা প্রকাশ করা হয়।

এই তদন্তের পর তৎকালিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড ১৯৭৬ সালে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। সেখানে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনও কর্মচারী রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা বা এর ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত হবে না।’ নির্বাহী আদেশটির ফলে সিআইএর কর্মকাণ্ড অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, যা সংস্থাটির জন্য নিঃসন্দেহে ছিলো অস্বস্তিদায়ক। এছাড়া তা কেন্দ্রীয় সরকারের এক ধরনের স্বীকারোক্তি যে যুক্তরাষ্ট্র অনুপ্রাণিত অভ্যুত্থান বা গুপ্তহত্যা অনেক সময় উল্টো ফল দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র কখনও তার এই নীতি থেকে সরে আসেনি। শুধু তাদের এই তৎপরতার নামকরণ ‘গুপ্তহত্যা’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘পরিকল্পিত হত্যা’। তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে ছিলো অভিযুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ নেতাদের উপর বোমা হামলা বা ড্রোন হামলা চালানো। ১৯৮৬ সালে মার্কিন বিমান হামলার শিকার হয়েছিলেন লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি। ১৯৯৯ সালে সার্বিয়ার স্লোবোদান মিলোসেভিক এবং ২০০৩ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ওপর একই হামলা হয়েছিল।

এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতার যেসব ইতিহাস বেশ তথ্যসমৃদ্ধ, তার মধ্যে রয়েছে কঙ্গোর প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিক লুমুম্বা। তাকে রাশিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৬০ সালে সিআইএ তাকে হত্যার জন্য প্রাণঘাতী ভাইরাসসহ একজন বিজ্ঞানীকে পাঠায়, যদিও তা ছিলো নিষ্প্রয়োজন। কেননা ১৯৬০ সালেই তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন।

সিআইএর প্রধান কার্যালয়

এছাড়াও ১৯৬০ এর দশকে মার্কিন গুপ্তহত্যার টার্গেট হন ডোমিনিকান রিপাবলিকের শাসক রাফায়েল তুজিলো। ১৯৬১ সালের মে মাসে গুপ্তহত্যার শিকার হন তিনি। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকর্নকে ১৯৬৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত ও ১৯৭০ সালের জুনে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গৃহবন্দী রাখা হয়। দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগো দিন দিয়েম ১৯৬৩ সালের নভেম্বরে গুপ্তহত্যার শিকার হন।

১৯৭৩ সালে সিআইএ চিলির বামপন্থি প্রেসিডেন্ট সালভাদোর আলেন্দেকে উৎখাত প্রচেষ্টা সংগঠনে সহযোগিতা করেছিলা। অভ্যুত্থানের দিনই নিহত হন আলেন্দে।

উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে হত্যার ষড়যন্ত্র অনেকটাই স্থুল মনে হতে পারে। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যকলাপ এমনই। এই ষড়যন্ত্র ২০০৬ সালে রাশিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদী আলেক্সান্ডার লিটভিনেনকোকে গুপ্তহত্যার কথাই মনে করিয়ে দেয়। একটি ব্রিটিশ তদন্ত থেকে বেরিয়ে আসে, তাকে হত্যা করেছিলো রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা। চা পাত্রে পোলোনিয়াম (অতিশয় তেজস্ক্রিয় মৌলিক পদার্থবিশেষ) লুকিয়ে রেখে তাকে হত্যা করা হয়।

চা পাত্রে পোলোনিয়াম রাখার চেয়ে আরও অনেক অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষত এই ইলেকট্রনিক ও সাইবার যুগে। এই বছরের শুরুতে উইকিলিকসের ফাঁস করা এক নথিতে দেখা যায়, ২০১৪ সালের অক্টোবরে সিআইএ গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হ্যাক করার চেষ্টা করেছিলো। এই ক্ষেত্রে সফল হলে তারা অনায়াসেই গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটাতে পারবে।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও