ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কীভাবে উৎপত্তি হয়েছিল চুমুর?


গো নিউজ২৪ | রাশেদ শাওন প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৭, ১২:০৭ পিএম
কীভাবে উৎপত্তি হয়েছিল চুমুর?

‘চুমু’ বিষয়টি নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছেন কি? অনেকটা অদ্ভূত। আবার কখনও কখনও কিছুটা অপ্রীতিকর। বিশেষ করে রোম্যান্টিক চুমুর ক্ষেত্রে। লম্বা সময় ধরে চুমু খেলে প্রতিবার একজনের মুখ থেকে অন্যজনের মুখে চলে যেতে পারে ৮০ কোটি ব্যাকটেরিয়া। আর এসব ব্যাকটেরিয়ার বেশিরভাগই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

এরপরও চুমু খাওয়াটা মানুষের স্বভাবজাত। প্রত্যেকেই তার জীবনের প্রথম রোম্যান্টিক চুমুটির কথাটি অবশ্যই স্মরণ করতে পারেন। আসলে প্রতিটি রোম্যান্সের ক্ষেত্রেই চুমুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সব সমাজ এবং সংস্কৃতিতে বিষয়টি খোলাখুলি না হলেও অনেক সমাজেই এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। পাশ্চাত্য দেশগুলোর মানুষ মনে করে, রোম্যান্টিক চুমু হচ্ছে মানুষের সার্বজনীন একটি আচরণ। তবে নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের অর্ধেকরও কম সংস্কৃতির মানুষই রোম্যান্টিক চুমুতে অভ্যস্ত। প্রাণিরাজ্যেও কিন্তু চুমু একটি বিরল আচরণ।

এদিক থেকে চুমুকে একটি অস্বাভাবিক আচরণ বললেও ভুল হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অস্বাভাবিক আচরণটির পেছনে কারণ কী। যদি এটা সহজাত এবং মানুষের জন্য উপকারী কিছু হয়ে থাকে তবে অন্য প্রাণিরা কেন এই আচরণটি করে না। আর কিছু মানুষই বা কেন এ আচরণ করে? আবার অনেক মানুষ কেন চুমুতে অভ্যস্ত নয়? একটা বিষয় অবশ্য প্রমাণিত, মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণি চুমু না খেলেও দুই একটা প্রাণি এই তালিকার বাইরে।

পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতির মানুষই রোম্যান্টিক চুমুতে অভ্যস্ত নয়

এ বিষয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বের ১৬৮টি সংস্কৃতির মধ্যে ৪৬ শতাংশ সংস্কৃতির মানুষ তাদের রোম্যান্টিক সময়ে চুমু খায়। এর আগের একটি গবেষণায় অবশ্য চুমু খাওয়ার হার ছিল ৯০ শতাংশ। তবে এবারের গবেষণায় সন্তানকে মা-বাবার চুমুর বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে। ধরা হয়েছে শুধু কোনও যুগলের রোম্যান্টিক চুমুর বিষয়টি।

অনেক শিকারজীবী মানবগোষ্ঠির ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা পরস্পর পরস্পরকে কখনও চুমু খায় না; এমনকি ইচ্ছাও পোষণ করে না। অনেকে এটাকে বিরক্তিকর বলেও মনে করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্রাজিলের মেহিনাকু উপজাতির কথা। চুমুকে অরুচিকর বিষয় বলে মনে করে তারা।

মানবজাতির ইতিহাসে মানুষ বেশিরভাগ সময়ই ছিল শিকারি। ১০ হাজার বছর আগে কৃষি যুগে প্রবেশের আগ পর্যন্ত পশু শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করতো মানুষ। বলা যায়, রোম্যান্টিক চুমু যদি আধুনিক শিকারি উপজাতিগুলোর আচরণ না হয়ে থাকে, তবে আমাদের পূর্ব-পুরুষরাও এ আচরণে অভ্যস্ত ছিলেন না। কারণ আমরা সবাই শিকারজীবী মানুষদেরই উত্তরসূরি।

অনেক উপজাতির মধ্যে নেই চুমুর স্বভাব

সাম্প্রতিক গবেষণাটি চুমুর ব্যাপারে মানুষের সার্বজনীন আচরণকে ভুল প্রমাণ করে বলে মনে করেন গবেষণা প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক উইলিয়াম জোয়াঙ্কোইক। তিনি বলেন, হতে পারে এটা পশ্চিমা সমাজের উদ্ভাবন। এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে স্বভাবটি প্রবাহিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক গবেষক রাফায়েল লোদারস্কিও একমত জোয়াঙ্কোইকের সাথে। তিনি বলেন, মনে হয় চুমু একটি সাম্প্রতিক উদ্ভাবন। এ বিষয়ে তিনি বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণও ঘেঁটে দেখেছেন বলেও জানান লোদারস্কি।

চুমুর সবচেয়ে প্রাচীন উদাহরণ পাওয়া যায় ৩ হাজার ৫০০ বছর আগে লেখা হিন্দু বৈদিক শাস্ত্রতে। সেখানে চুমুকে দুইজনের আত্মার মিলন বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মিশরীয় চিত্রলিপিতে দেখা যায়, নিজেদের রোম্যান্স বোঝাতে প্রাচীন মিশরীয়রা খুব কাছাকাছি আসতো। তবে তারা ঠোঁটে ঠোঁট মিলাতো না।

তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়ালো? চুমু মানুষের প্রাকৃতিক স্বভাব? তাহলে অনেক সংস্কৃতিতে কেন এটাকে বর্জন করা হয়েছে? তবে এটা কি মানুষের সাম্প্রতিক উদ্ভাবন?

৪৬ শতাংশ সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে আছে রোম্যান্টিক চুমুর স্বভাব

বিষয়টি নিয়ে প্রাণিজগতে প্রবেশ করা যাক: মানুষের সবচেয়ে কাছের প্রজাতি শিম্পাঞ্জি এবং বেবুন পরস্পর পরস্পরকে চুমু খায়। স্তন্যপায়ী প্রাণি বিষয়ক গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রান্স ডি ওয়াল জানান, তার কাছে শিম্পাঞ্জিদের চুমু খাওয়া এবং মারামারির পর আলিঙ্গন করার অনেক উদাহরণ আছে।

নিজেদের পুনর্মিলনের জন্য চুমু খায় শিম্পাঞ্জিরা। এটা নারী শিম্পাঞ্জির চেয়ে পুরুষ শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এটাকে আসলে তাদের রোম্যান্টিক আচরণ বলা যায় না। একই প্রজাতিভুক্ত বেবুনেরাও সঙ্গীর সাথে প্রায়ই চুমু খেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করে তাদের জিহ্বা। এর কারণ বেবুনদের যৌন অনুভূতি অনেক বেশি।

মানুষেরা সাধারণত একজনের সাথে আরেকজনের দেখা হলে করমর্দন করে। কিন্তু বেবুনদের যৌন অনুভূতি বেশি থাকার কারণে তারা সাক্ষাতের সময় যৌন আচরণই করে থাকে। এটা তাদের স্বভাবজাত। তাই তাদের চুমুকেও ঠিক রোম্যান্টিক চুমু বলা যায় না। এটা হয় যৌনতার কারণে।

এই আচরণ দেখা যায় আরও অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণির বেলায়ও। এরমধ্যে বনমানুষ, বন্য শূকর, ইঁদুর এবং মাকড়সাও রয়েছে। এসব প্রাণি গন্ধ শুঁকে সঙ্গীর অবস্থান বুঝতে পারে। মানুষেরও রয়েছে তীব্র ঘ্রাণশক্তি। সঙ্গীকে কাছে টানতে এটা কাজে লাগে। যদিও এটাই একমাত্র পথ না। তবে ঘ্রাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

১৯৯৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা যায়, নারীরা তাদের থেকে জিনগতভাবে আলাদা পুরুষের গন্ধ পছন্দ করে। চুমুর সময়ই তারা তাদের সঙ্গীর গন্ধটা বুঝতে পারে। এই স্বভাবটা আছে ইঁদুরেরও। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায়, জিনগতভাবে আলাদা কাউকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিলে সুস্থ সন্তান জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। সুতরাং বলা যায়, যোগ্য সঙ্গী বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে চুমুর একটি ভূমিকা অবশ্যই আছে।

মারামারি শেষে চুমু খায় শিম্পাঞ্জিরা

বিষয়টি নিয়ে ২০১৩ সালে একটি বিস্তারিত গবেষণা করেন লোদারস্কি। কয়েকশ লোককে তিনি জিজ্ঞেস করেছেন- চুমুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে। এই গবেষক জানান, সঙ্গীর বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য ঘ্রাণটা জরুরি এবং নারীদের গর্ভধারণের জন্য এটা আরও বেশি দরকার। আসলে পুরুষদের ঘামের মধ্যে ফেরোমোনস নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা দ্বারা নারীদের যৌন অনুভূতি আরো তীব্র হয়।

পুরুষের বেলায়ও দেখা যায় তারা নারীর ফেরোমোনস দ্বারা উত্তেজিত হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণিদের সঙ্গী বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে এই ফেরোমোনস খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান লোদারস্কি। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পূর্বসূরীদের কাছ থেকে সব বৈশিষ্ট্য ধারণ করি। শুধু বিবর্তনের সময় আমাদের সাথে কিছু নতুন জিনিস যুক্ত হয়েছে।’

সুতরাং এই গন্ধ শোঁকার বিষয়টিও আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে পেয়েছি। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বোঝা যায়, চুমু আসলে এই গন্ধ শোঁকার একটি সাংস্কৃতিক উপায়, যার মাধ্যমে আমরা নিজেদের কাছাকাছি এসে সঙ্গীর ফেরোমানস শনাক্ত করতে পারি। লোদারস্কি বলেন, অনেক সংস্কৃতিতে গন্ধ শোঁকার এই স্বভাবটি শারীরিকভাবে চুমুর মধ্য দিয়ে হয়। এক্ষেত্রে দুই সঙ্গীর লক্ষ্য একটাই।

যদি আপনি একটি যোগ্য সঙ্গী খুঁজে পেতে চান তবে চুমুর স্বভাবটি ত্যাগও করতে পারেন। এর পরিবর্তে লোকজনের গন্ধ শুঁকতে শুরু করতে পারেন। তাতে আপনি একজন যোগ্য সঙ্গীও পেয়ে যাবেন। এতে অন্তত কোনো ব্যাকটেরিয়া আপনার মুখে যাবে না। তবে এখন থেকেই শুরু করে দিন।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও