ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহাসিক যে তিন ভুলের খেসারত দিচ্ছে রোহিঙ্গারা?


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭, ০৮:১৫ পিএম
ঐতিহাসিক যে তিন ভুলের খেসারত দিচ্ছে রোহিঙ্গারা?

ঢাকা: মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে জাতিগত নিধন আর নারকীয় নির্যাতনের শিকার লাখ লাখ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান স্রোতের মতো ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে। আশ্রয় নিচ্ছে কক্সবাজারে সীমান্ত এলাকায়।

বাংলাদেশ মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের দিকে। গোটা বিশ্বও দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে। তাদের দুঃখ আমাদের স্পর্শ করছে; কাঁদছে প্রাণ-মনও। তবে রোহিঙ্গাদের আজকের এই চরম দুর্দশার জন্য দায়ী মূলত তাদের পূর্বপুরুষরা। তাদের করা ইতিহাসের তিনটি ভয়াবহ ভুল রোহিঙ্গাদের এই প্রজন্মকে ঠেলে দিয়েছে সর্বনাশা রাস্তায়। কী ছিল সেসব ভুল?

প্রথম ভুল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিয়ানমারের জনসমর্থন ব্রিটিশদের প্রতি থাকলেও রোহিঙ্গারা সমর্থন করে বসেছিল জাপানকে। যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিল জাপান। তবে জাপান মিয়ানমার ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রোহিঙ্গারা হয়ে পড়ে একঘরে। তারপর থেকেই দেখা দেয় মিয়ানমার-রোহিঙ্গা দ্বন্দ্ব। এক সময় মিয়ানমারের ভূ-খণ্ড দখল করে নেয় ব্রিটিশরা। পরে তারা সেখানকার ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা তৈরি করে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই তালিকায় স্থান পেতে ব্যর্থ হয় রোহিঙ্গারা।

দ্বিতীয় ভুল
স্বাধীনতা অর্জনের এক বছর আগে (১৯৪৭ সালে) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা জানায়। পরের বছর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে মিয়ানমার। সে সময় পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। রোহিঙ্গারা পদস্থ সরকারি দায়িত্বও পালন করতেন। তবে পরে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ‘কায়েদে আযম’ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রোহিঙ্গাদের পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

বলা বাহুল্য, সেদিন জিন্নাহ যদি রোহিঙ্গাদের পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করতেন তাহলে আজ হয়তো আরকান রাজ্যটি বাংলাদেশেরই হতো। কিংবা নতুবা আরেকটি ‘কাশ্মীর’ হতে পারতো। রোহিঙ্গাদের দেশ বিভক্ত হওয়ার ওই সিদ্ধান্তই ছিল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভুল। যার খেসারতই দিতে হচ্ছে ধুঁকে ধুঁকে। মিয়ানমারের লোকজনের কাছে রোহিঙ্গারা এক বিশ্বাসঘাতক জাতি।

এমন পরিস্থিতিতে ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে দেশটির যাত্রাপথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। রোহিঙ্গাদের কপালে নেমে আসে অমাবশ্যার অন্ধকার। তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়। নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এরপর থেকেই মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের দেশের লোক হিসাবে অস্বীকার করতে লাগলো। বিশ্ব দরবারে রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের ‘বহিরাগত’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডের অনেকের কাছেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ‘কালা’ নামে পরিচিত। এ পরিচয়ে প্রকাশ পায় সীমাহীন ঘৃণা।

তৃতীয় ভুল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যখন পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ঠিক সে সময়েই রোহিঙ্গারা করে বসলো আরেকটি ঐতিহাসিক ভুল। রোহিঙ্গারা মুসলমানরা সমর্থন করে বসলো পাক হানাদার বাহিনীকে। এর মধ্য দিয়ে বাঙালিদের সহানুভূতিও হারিয়ে ফেললো রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ জন্মের পর এই রোহিঙ্গারা একূল অকূল দু’কূলই হারায়। 

ইতিহাসের ঘূর্ণিপাকে দু’কূল হারিয়ে অথৈ সাগরে ভাসতে লাগলো রোহিঙ্গারা। মায়ানমার মানুষের কাছে তারা পরিচিত হতে থাকলো এক ‘বেঈমান জাতি’ হিসেবে। আধুনিক বিশ্বে লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে গেছে পশ্চাৎপদ এই জাতিগোষ্ঠী। শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে বাঁচে তারা। যার কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অশিক্ষিতের হার সবচে বেশি। অনেকেই এখনো জন্মনিন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জানে না।

মিয়ানমারের ১৪ লাখ রোহিঙ্গার প্রায় ৭ লাখই এখন বাংলাদেশে। যা কক্সবাজার, উখিয়া এলাকার জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। বাকিরা মায়ানমার, সৌদি, লন্ডন, কানাডা, মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ইতিহাসের সেই নদী পার হয়ে এভাবেই ভাসতে ভাসতে রোহিঙ্গারা আজ বাংলাদেশের শরণার্থী। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, যে বাংলাদেশ জন্মের বিরুদ্ধে ছিল ওরা; আজ সেই বাংলাদেশই বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়স্থল। তথ্যসূত্র: মিয়ানমার ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিস্টোরি পেইজ, উইকিপিডিয়া।

গোনিউজ২৪/এন

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও