ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিজের শখকে চ্যালেঞ্জ বানিয়ে জয়ী নির্মা !


গো নিউজ২৪ | ফারজানা আক্তার প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০১৭, ০৫:২৪ পিএম আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০১৭, ০৯:০৭ এএম
নিজের শখকে চ্যালেঞ্জ বানিয়ে জয়ী নির্মা !

নির্মা যিনি বাংলাদেশের একজন সফল অনলাইন নারী উদ্যোক্তা। জীবনের অনেক কঠিন ধাপ পেরিয়ে আজ তিনি সফল। বিজনেস করা তার একটি শখ। শখের এই চ্যালেঞ্জটি তিনি খুব সুন্দরভাবেই সত্যি করেছেন। গোনিউজ২৪ এর সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন তার ছোটবেলার কথা, বিজনেসের শুরুর কথা, নারী হিসেবে নিজের চ্যালেঞ্জের কথা এবং জানা অজানা আরো অনেক কথা । 

গোনিউজ ২৪:  আপনি বেশ কয়েকটি অনলাইন বিজনেসের উদ্যোক্তা। শুরুতেই এই  বিজনেসগুলো  নিয়ে কিছু কথা শুনবো। 

নির্মা : শুরুটা তো কারো সুখের হয় না। ২০০৮-৯ এর দিকে তো অনলাইনে তেমন একটা সাড়া পাওয়া যেত না। গেলেও অনেক রিস্ক থাকতো। কেউ অ্যাডভান্স করতে চাইতো না। পেমেন্ট সিস্টেম খুব ভালো ছিল না। আমার তো ইম্পোর্ট বিজনেস ছিলো যার কারণে আমার ক্যাশ অন ডেলিভারি ছিল না। কেউ বলতো আপু আপনি ওই প্রোডাক্টটা এনে দিন আমি ১০০% নিবো।  

দেখা যেত এই ১০০% শিওর দেয়া ১০ টা ক্লায়েন্টের মধ্যে ৭জনই রিফিউজ করতো। কেউ ঢাকার বাইরে, কারো হাতে টাকা নেই বা কারো কেউ না কেউ মারা গেছে। ওরা অনলাইনে প্রোডাক্ট কিনতে ভয় পেত। অনেক প্রোডাক্ট গ্রুপে সেল করেছি। অনেক চড়াই উৎরাই পার করে মোটামুটি একটা পরিচয়ে চলে এসেছি । প্রথম দিকে আমি আমার বিজনেসটাকে কয়েকটা বিভাগে নিয়ে কাজ করেছি।  যেমন, লিলাবালীতে শাড়ি নিয়ে কাজ করেছি , ব্রাইডাল নিয়ে কাজ করেছি, "নাইওরিতে ইন্ডিয়ান বুটিক ড্রেস নিয়ে কাজ করেছি, নাইওরিতে ব্রাইডালে জুয়েলারি নিয়ে কাজ করেছি ইত্যাদি। ফেসবুকে অনেকগুলো সেলিং গ্রুপ খুলেছি। পাবলিকলি সবাইকে ফ্রীতে সেলিং পোস্ট দেয়ার জন্য খুলেছিলাম। সেখান থেকেও আমার কিছু পরিচিতি আসলো। আমার একটা গ্রুপ ছিলো 'ঘরে বসে কেনাবেচা'। এটা খুব বিখ্যাত গ্রুপ ছিলো। সেখান থেকেও  অনেকে আমাকে খুব ভালোভাবে চিনলো। আমার বেশির ভাগ ক্লায়েন্ট দেশের বাইরের এবং ঢাকার বাইরের। 

গোনিউজ ২৪:  আপনার উদ্যোগের শুরুর গল্প জানতে চাই !

নির্মা : আমি ১৭বছর জব করেছি। আমি ৩টা অফিসে কাজ করেছি এবং তিনটাই  নতুন অফিস ছিল।  নতুন অফিসে কাজ করতে হয় খুব বেশি এবং একজনকেই নানা দিকে কাজ করতে হয়। প্রতিটা অফিসেই অনেক বেশি পরিশ্রম করেছি কিন্ত যোগ্যতা অনুসারে বিন্দুমাত্র সম্মানটুকুইও পাইনি। নতুন অফিসে দেখা যায় ওই পোস্টের লোক নাই, আপনাকে নিজের কাজের পাশাপাশি ওই পোস্টও দেখতে হয়। 

লাষ্ট জবটাতে আমি মার্কেটিং ম্যানেজার ছিলাম। কিন্তু আমাকে কাস্টমার কেয়ারও দেখতে হতো। অপারেশন ডিপার্টমেন্টও দেখতে হতো। কাজ অনুসারে নিজের সম্মানটা কোথাও পাই নাই। তখন রাগ করে জব ছেড়ে দিয়ে বাসায় বসে গেলাম।  

যারা কাজ করে তারা কিন্ত পেছনে ফিরে যেতে পারে না। কিছু একটা তো করতে হবে। অনেকেই বুদ্ধি দিলো ঘরে বসে অনেক কাজ করছে তুমিও করো। কয়েকজন বুটিক নিয়েই কাজ করার বুদ্ধি দিলো। বুটিকের কয়েকজন লোকের সাথে কথা বললাম , কিছু খোঁজ খবর নিলাম। আশেপাশে যারা কাজ করে তেমন কিছু মহিলা জোগাড় করলাম। নিজে কিছু কাপড়ের ডিজাইন করলাম। আমি আবার আগে থেকেই স্ক্রাচ করতাম। আমার বাচ্চার নিজের জামা নিজে বানাতাম। আম্মু যখন জামা সেলাই করতো তখন ছবি একে আম্মুকে দিতাম আমাকে সেই রকম জামা বানিয়ে দেবার জন্য। তো কাজে নামলাম।  

এক মহিলাকে ২০টা হাতের কাজের শাড়ি করতে দিলাম , বোধহয় ১০টা ড্রেস আর কিছু ম্যাটেরিয়াল দিলাম আর আরো কিছু টুকিটাকি কেনার জন্য ১৯হাজার টাকা দিলাম। এই মহিলা বললো এক সপ্তাহ পর সব কাজ বুঝিয়ে দিবে।  আসলে তখন বুঝি নাই বিজনেস কিভাবে শুরু করতে হবে , কিভাবে কি করতে হবে! যে যেভাবে বলছে সেভাবেই এগোতে চেয়েছি। তখন তো মাত্র জব ছাড়ছি হাতে কিছু টাকা পয়সা ছিলো। হিসাব করে চলি নাই। 

মহিলার ১ সাপ্তাহ পর দেওয়ার কথা তিনি দিচ্ছেন না।  ১০দিন পর তার বাসায় যেয়ে দেখি তিনি বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি এলাকা ছেড়ে সব নিয়ে পালিয়ে গেছেন। তখন ভেঙ্গে পড়লাম। আমার বড় মেয়েটা আমার বিয়ের ৫বছর পর হয়েছিলো। ওকে রেখেই আমি জব করতাম।  যেহেতু আমি সবসময় বিজি থাকতাম তাই সামার ভ্যাকেশনে ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতাম। আমি ঘুরতে সবসময় দেশের বাহিরে যাই, ইন্ডিয়াতে যাই। ইন্ডিয়াতে তখন অনলাইন বিজনেস খুব জনপ্রিয়। তখন দাদারা আমাকে অফার করলো - আপনি তো প্রতি বছরই এই দেশে ঘুরতে আসেন আপনি এই বিজনেসটা নিজের দেশে চালু করেন।

আমাদের লোক যায় বাংলাদেশে আপনার কিছু লাগলে আমরা দিতে পারবো। আপনার কি কি লাগবে সেগুলোর ছবি দেন বা কিভাবে কি চান আমাদের বলেন। প্রতিবছরই তো পরিবারের সবার জন্য ৪০-৫০তা ড্রেস নিয়ে আসি , ওইবার ৭০টার মতো ড্রেস আনলাম। লেহেঙ্গা আনলাম ১০টা, বাকি শাড়ি আর ২০-২৫টার মতো ড্রেস আনলাম। দাদারা বললো যে সেল না হলে আমাদের লোক যাবে তখন ফেরত দিয়ে দিয়েন। আমি যখন নিয়ে আসলাম দেখলাম ভালোই রেসপন্স পাচ্ছি । আশেপাশের ২-১জন আসলো দেখলো আমি ইন্ডিয়া থেকে ড্রেস নিয়ে এসেছি। অনেকে ড্রেস নিলো। ওই মুহূর্তে একটা পেইজ খুলে কিছু লেহেঙ্গা , শাড়ির ছবি আপলোড করলাম। 

ও আমি কিছু বেলেরিনা সু নিয়ে এসেছিলাম। বেলেরিনা সু থেকে আমি বেশ কিছু সাড়া পাই। এই সু থেকেই আমার বেশ কিছু পরিচিত ক্লায়েন্ট হয়। এই ক্লায়েন্টগুলোই পরবর্তীতে আমার কাছ থেকে জিনিসপত্র নেওয়া শুরু করে। তারা কখনো অ্যাডভান্স দিতেও দ্বিধা করে না। এখন যেমন ডেলিভারি বয় পাওয়া যায় তখন তো তেমন কাউকে পাওয়া যেত না।  আমি নিজেই যেতাম প্রোডাক্ট নিয়ে যখন তারা অর্ডার করতো। তখন আমার ক্লায়েন্টগুলো বেশ অবাক হতো যে আমি প্রোডাক্ট নিয়ে গেছি। তারা আমাকে আপ্যায়ণও করতো। বিজনেসটা একটা শখ। আমি শখের একটা চেলেঞ্জ নিয়ে আগাচ্ছি দেখি কতদূর যাই। এখনো সেই ক্লায়েন্টগুলো আমার সাথে আছে। 
বিজনেস শতভাগ সততা আর লক্ষ্যের। এই দুইটা ঠিক থাকলে সাফল্য আসবেই। 

গোনিউজ ২৪:  বাঁধা-বিপত্তি কেমন পেয়েছেন একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ?

নির্মা : প্রথম বাধা তো ঘর থেকেই আসে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না (হাসি)। বলতে লজ্জাও লাগে না এখন হয়তো আমার বেশ কোটি টাকা। যখন আমি বিজনেসে নামি তখন লস খাওয়ার পর আবার একটা গ্যাপে আমি বিজনেসটা শুরু করি। তখন অনেকের কাছেই আমি ধার চেয়েছিলাম। আসলে আমি একটা হ্যান্ডসাম মূলধন নিয়ে নামতে চেয়েছিলাম। অনেকদের কাছে হেল্প চেয়েছি কেউ বিলিফ করে নাই।  

নিজের কাছে যা ছিল সেটা নিয়েই কিন্ত আমি নামি। যখন আমি ইন্ডিয়াতে যাই কেনাকাটার জন্য মাত্র ১লাখ টাকা রেখেছিলাম। সেখানে যাওয়ার পর এক বন্ধুর সাথে দেখা। ওর হাসব্যান্ডের ক্যান্সার ছিলো। ও আবার আমার কাছ থেকে ৩০হাজার লোন নিলো।  আমার কাছে ৭০হাজার রয়ে গেলো। এটুকু নিয়েই আমি বিজনেসে নামি। অনেক লস -লাভ তো ছিলোই। প্রথম প্রথম খুব লাভ হতো। 

পরে দেখলাম অনেক প্রোডাক্ট ঘরে জমা হয়ে গেছে। তখন আমি একটা প্রোডাক্টের সাথে অন্য  কটা প্রোডাক্ট ফ্রি দেওয়া শুরু করলাম। যেমন একটা লেহেঙ্গার সাথে এক জোড়া জুতা অথবা শাড়ির সাথে গহনা। এতে দেখলাম অনেকেই প্রোডাক্ট কিনছে। বোস্টিং করেও পেইজের কিছু পরিচিত নিয়ে এসেছি। এখন আমার নাইওরীর এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট লাইসেন্স করা আছে। এটা ট্রেড মার্ক একটা লোগো।  আমিই বাংলাদেশের একমাত্র নাইওরীর লোগো ওনার যেটা আর কেউ এখনো পায় নি। 

গোনিউজ ২৪:   অন্যান্য অনলাইন পোশাকের বিজনেস থেকে আপনার গুলো কেন আলাদা ?

নির্মা : এটা একটা করুণ কাহানি (হাসি)। আমার বিয়ে কিন্ত একদিনেই হয়। সন্ধ্যাবেলা আমাকে দেখতে আসে রাতের বেলা বিয়ে হয়। আমার বিয়েতে হলুদ বা বউ সাজানোটা হয় নাই। ছোটবেলা থেকে মানুষের একটা শখ থাকে না ! যে আমার বিয়েতে আমি এমন করে তেমনভাবে সাজবো।  

ছোটবেলা বাবার সাথে যখন কোনো বিয়েতে যেতাম তখন বাবাকে বলতাম আমাকে এমন করে বিয়ে দিবা, আমি এমন করে সাজবো। এই যে আমার একটা আক্ষেপ এটা থেকেই আমি ইন্সপায়ার্ড যে আমি বাইডাল নিয়ে কাজ করবো। আমার জীবনের একটা স্বপ্ন ছিলো যে আমি বিয়ের জিনিসপত্র নিয়ে কাজ করবো। 

আমি যখন বাইডাল নিয়ে কাজ করি তখন আমার ফার্স্ট ক্লাইন্ট ছিলো ইউকের। মেয়েটা ইউকে থাকে আর তার হাসব্যান্ড থাকে সিলেট। ওই মেয়েটা অনালাইনে অন্য একটা ইন্ডিয়ান পেইজ থেকে প্রোডাক্টের ছবি এনে আমাকে দিলো আমি যেন ওকে এই প্রোডাক্ট গুলো দেই। আমি প্রোডাক্টগুলো সিলেটে পাঠিয়ে দিলাম। ওর শশুড়বাড়ির লোকজনও খুব পছন্দ করেছিলো ও নিজেও খুব খুশি ছিলো প্রোডাক্টগুলো পেয়ে।  এই থেকে আমার সিলেট থেকো ক্লায়েন্ট বাড়লো এবং ইউকে থেকেও। অনেকে বলে না তীর ছুড়তে ছুড়তে কাজে লাগে আমার প্রথমটাই কাজে লেগেছিলো। যার কারণে আমার এই ভয়টা পেতে হয় না যে 'আমার দ্বারা কিছু হবে না,  আমার দ্বারা কিছু হবে না। '

আমি আসলে কোয়ালিটির ব্যাপারে কোনো কম্প্রোপ্রাইজ করি না। সেটা আমার ডিলারও জানে। আমাকে যেটা দিতে হবে অরিজিনাল দিতে হবে। আমি যদি বলি আমাকে এই রেইটে এই প্রোডাক্ট দিতে হবে , সেটাই দিতে হবে।  দি সে দিতে না পরে তাহলে স্ট্রেইট না বলে দিতে হবে। আমি স্ট্রেইট কাট খুব পছন্দ করি। এটা আমার ক্লায়েন্ট রাও জানে আবার ডিলারও জানে। 

অনেকে বলে আপু ওই পেইজে এটা কম রেইট আছে। আমি তখন বলি তাহলে কোয়ালিটি বুঝতে হবে। একটা লেহেঙ্গার দাম এক পেইজে ৬হাজার আর আমার পেইজে ১০হাজার। তাহলে নিশ্চয় বুঝতে হবে দুইটার কোয়ালিটি দুই রকম। একজন রেপুটেড বিজনেস ওমেন হিসেবে বলি আমি অনেক স্ট্রাগল করে এখানে এসেছে।  আমি তো চাইবো না খারাপ কোয়ালিটির প্রোডাক্ট দিয়ে নিজের বদনাম করতে। আর অল্প কয়টা টাকা আয় করে আমি নিশ্চয় কোথাও উধাও হয়ে যাবো না। অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে আমি এখানে এসেছি।  অনেক জায়গায় লস দিয়েছি , অনেক জায়গায় লাভও হয় নাই আবার লসও হয় নাই। আমি কিন্ত বিজনেস ছাড়ি নাই। ধরে রেখেছি। 

গোনিউজ ২৪:  পোশাকের ডিজাইন কি নিজে করেন না অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করেন ?

নির্মা : আমরা তো বড় বড় ডিজাইনারদের ফলো করি যেমন সব্যসাচী , মানিষ মালহোত্রা ইত্যাদি। আমি চাই বাংলাদেশে এমন ড্রেসগুলোকে প্রমোট করতে। আমাদের দেশের মানুষ সত্যি কথা বলতে অল্প দামে ভালো জিনিস চায়। কম দামে যে ভালো জিনিস হয় না এটা তাদের বুঝানো যায় না। অনেকে বুঝেই না। 

গোনিউজ ২৪:   খারাপ ফিডব্যাকে  মন খারাপ হয় ?

নির্মা : আমি কয়েকদিন আগের কথাই বলি। গতমাস থেকে আমি দেশি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করার জন্য নেমেছি। আমি আসলে আমার নাইওরিকে একটা ব্র্যান্ড করতে চাই।  সেই হিসেবেই আমি এগোচ্ছি। নিজেই কিন্ত আমি সব করছি। এখানে পরিবার থেকে খুব একটা সাপোর্ট পাইনি। আমি ইন্ডিয়ান কাপড় বিক্রি করি। এটা কিন্ত একটা মানসিক চাপ , অনেক বড় একটা চাপ। 

আমি কিন্ত নিজে প্রোডাক্ট কেরি করি। কেউ আসতে না পারলে আমি নিজে দিয়ে আসি বা কুরিয়ারে পাঠায়। কুরিয়ারে অনেক টাকা চলে যায়। নিজেকে নিজে ইন্সপায়ার করি, নিজে নিজেকে শক্তি জুগিয়ে আবার সামনে যাই । খারাপ রিভিউ আসলে ঐটাকে মোকাবেলা করতে তেমন প্রবলেম হয় না। আমি তো জানিয়ে আমি ১০০% সৎ। আমার প্রোডাক্ট কেউ কিনে থাকলে সে খারাপ বলতে পারবে না। যারা আমাকে চিনে তারা জানে আমার প্রোডাক্টের কোয়ালিটি। আপনি নিজে না কিনে অন্যের কথা শুনে আমাকে খারাপ রিভিউ দিলে সেটা কিন্ত ভিত্তিহীন। 

আমি স্পনসরের ক্ষেত্রেও অনেক লস খেয়েছি। গ্রুপের বিভিন্ন গেট টুগেদারের জন্য তারা স্পন্সর কল করে। প্রোডাক্টদের মার্কেটিংয়ের জন্য তারা হিউজ একটা এমাউন্ট নেয়  কিন্ত আশাতীত মার্কেটিং করে না।  আমি এখানেও লস খেয়েছি । 

আমি হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে বাংলাদেশে যারা কাজ করে তাদের ৮০-৯০% ব্যবসায়ী কেনা দাম থেকে কয়েকগুন বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন।যেমন ধরেন : আমি ৫০০০ টাকায়  হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি সেল করছি। মিনিমাম একটা প্রফিট রেখেই আমি সেল করি।  অনেকে ৮০০০, ১০০০০, ১৫০০০ দিয়ে সেল করছে।  যারা আমার তিনগুন দিয়ে সেল করছে তারা তো আমার ঘাড়ে পারা দিবেই। তারা আমার পেইজে যেয়ে ব্যাড রিভিউ দিছে। তারা আমার ফ্রড ইত্যাদি বলে রিভিউ দিছে। আমরা একটা কথা আমি যদি ফ্রড হই তাহলে আমি এতদূর আসতে পারতাম না। যারা আমার প্রোডাক্ট কিনছে তারা আর্মি, ডক্টর , প্রফেসর।  যারা এখন আমার প্রোডাক্ট কিনে তারা কিন্ত এই স্টেজের মানুষ । আমি যদি ফ্রড হতাম তারা কিন্ত আমার থেকে প্রোডাক্ট নিতো না। 

গোনিউজ ২৪:  ছোটবেলার কথা একটু জানতে চাই!

নির্মা : ছোটবেলা আমি একটু অগোছালো ছিলাম। বাবা মায়ের বড় মেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনচেতা ছিলাম। কোনোকিছুর প্রতি কোনো এট্ট্রাকশন তেমন একটা ছিলো না।  সারাদিন খেলাধুলা আর বাহিরে ঘুরাঘুরি করতাম। মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেছি। মোটামোটি নিয়মের মধ্যেই বড় হয়েছি। তবে বাসায় লক্ষী হয়ে থাকা বা সংসারী কিছু করা এসব ছিলো না। শান্ত ছিলাম না একদম।  খুব প্রতিবাদী ছিলাম। খাবারের প্রতি অনীহা ছিলো। পোশাকের প্রতি একটা আলাদা টান ছিলো। নিজে নিজে ছবি এঁকে মাকে বললাম বানিয়ে দিতে। 

গোনিউজ ২৪:  ছোটবেলা বড় হয়ে কি হতে চেয়েছিলেন ?

নির্মা :আমি ডাকাত হতে চেয়েছিলাম। কেন চেয়েছিলাম জানি না! তবে ডাকাত হয়ে চেয়েছিলাম। কিন্ত এডুকেশনালি পাইলট হতে চেয়েছিলাম কিন্ত আমার হাইট এ আসে নাই। 

গোনিউজ ২৪: বাংলাদেশের মেয়েদের নিয়ে কতটুকু আশাবাদী!

নির্মা: এইতো আপনার সাথে কথা বলার আগে একজন মেয়ের সাথে কথা বললাম।  বাংলাদেশে যে মেয়েরা অনলাইনে কাজ করে তারা অনেকেই আমাকে আইডল মানে।  যে কোনো প্রয়োজনে , যে কোনো সাহায্যে তারা আমাকে নক করে। আপু হেল্প লাগবে। অনেকে বলে বিজনেস এগোতে পারছি না কি করবো ? আমি তাদের গাইডলাইন দেই। আনকমন কিছু নিয়ে কাজ করার জন্য সবাইকে বলি।  মানুষ আনকমন বেশি পছন্দ করে।  আমি মেয়েদের নিয়ে খুব আশাবাদী। অনেক ডাক্তার, প্রফেসর মেয়ে আমার সাথে কাজ করতেও আগ্রহ প্রকাশ করছে। 

তরুণ যারা আছে তাদের বেশ ভালো ফিউচার আছে অনলাইন বিজনেসে।  সরকারকে এই সেক্টরে একটু মনোযোগ দিতে হবে।  যারা ভালো করছে তাদের কিছু কাজগপত্রের ব্যবস্থা করে দিতে হবে যেন তারা সহজেই জিনিসপত্র আনা নেয়া করতে পারে।  বিশেষ করে মানি ট্রান্সফারের বিষয়টা দেখতে হবে।  আজকাল বিকাশে অনেক ভরসা করতে চায় না।  বিকাশে ফ্রডের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। 

গোনিউজ ২৪:  পরিবার, সংসার , বিজনেস কীভাবে ম্যানেজ করেন?

নির্মা : আমার তিনটা মেয়ে। বড় মেয়েটা ভালোই বড়। ও ব্রাকে বিবিএ পড়ছে। ও আমাকে অনেক হেল্প করে। অনেক বলতে অনেকটাই। ওর জন্যই আমি বাইরে শান্তিতে কাজ করতে পারি। 

গোনিউজ ২৪:  যারা আপনার মতো নারী উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি ?

নির্মা : নারী উদ্যোক্তা হতে চাইলেই তো হওয়া যায় না।  আমি আগেই বলছি লক্ষ্য এবং নীতি থাকলে সাফল্য আসবেই। আগে নিজের লক্ষ্যটা  ঠিক করতে হবে। আমি কোথায় যেতে চাই , কোন পজিশনে নিজেকে দেখতে চাই। কি নিয়ে কাজ করতে চাই। কোন প্রোডাক্ট কোথায় থেকে কমে কিন্ত ভালো মানের নিয়ে এসে ক্লায়েন্টকে দেওয়া যাবে।  মানুষ কিন্ত আনকমন সব প্রোডাক্ট পছন্দ করে তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে আনকমন কিছু দেয়ার।  

গোনিউজ ২৪:  গোনিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। 

নির্মা: গোনিউজকেও অনেক ধন্যবাদ।

বি.দ্র: অনলাইনে বিশ্বত কেনাকাটার জন্য অবশ্যই ঘুরে আসুন নির্মার পেইজ।

"নাইওরি"

লিলাবালী

Nirma style

গোনিউজ২৪/ফাআ/এআর

ওমেন`স কর্নার বিভাগের আরো খবর
আপনার বাচ্চাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে যেসব খাবার!

আপনার বাচ্চাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে যেসব খাবার!

পিরিয়ডকালীন দুর্বলতা কমাবে যেসব খাবার

পিরিয়ডকালীন দুর্বলতা কমাবে যেসব খাবার

মেয়েদের যেসব সমস্যা ক্যান্সারের লক্ষণ!

মেয়েদের যেসব সমস্যা ক্যান্সারের লক্ষণ!

ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে টেন মিনিট স্কুল

ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে টেন মিনিট স্কুল

উইগুর নারীদের জরায়ুতে বিশেষ ডিভাইস বসিয়েছে চীন

উইগুর নারীদের জরায়ুতে বিশেষ ডিভাইস বসিয়েছে চীন

করোনা প্রতিরোধে হিজাব কার্যকরী, মার্কিন গবেষণা!

করোনা প্রতিরোধে হিজাব কার্যকরী, মার্কিন গবেষণা!