বাংলাদেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
করোনা মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ধৈর্য, দায়িত্বশীলতা ও দেশপ্রেম নিয়ে একযোগে সবাইকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। ঘরে ঘরে সচেতনতা ও সতর্কতার দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।’
শুক্রবার (২৭ মার্চ) দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনটি কেবল বিটিভিতে রেকর্ড করা হয় এবং ফেসবুক লাইভ করা হয়। এছাড়া লিখিত বক্তব্য ইমেইলে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো হয়।
বিশ্ব করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘মানবসভ্যতা আজ এক সংকটের মুখোমুখি। সারাবিশ্ব আজ প্রাণঘাতী নোভেল করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত। প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। পরম করুণাময়ের অসীম কৃপায় বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলনামূলক এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিবিড়ভাবে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন এবং সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। জনগণকে রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করে চলেছেন।’
করোনা মোকাবিলায় বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো এগিয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র থেকেও সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও চীন বাংলাদেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সামগ্রী ঢাকায় এসে পৌঁছেছে এবং কয়েক দিনের মধ্যে চীন থেকে আরও চিকিৎসা সামগ্রী বাংলাদেশে পৌঁছাবে। আমরা চিকিৎসক, নার্স ও জনগণ সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, শেখ হাসিনার সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করে চলেছে। আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। ধৈর্য, দায়িত্বশীলতা ও দেশপ্রেম নিয়ে একযোগে সবাইকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই মারাত্মক ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে সারাবিশ্বে কোটি কোটি মানুষ গৃহবন্দি রয়েছেন। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ধনী-গরিব, উন্নত-উন্নয়নশীল সব জাতিরাষ্ট্র পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য একে অপরের সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ করছে।’
কাদের বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা হুমকির পাশাপাশি দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে অনেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে পরবর্তী অর্থনৈতিক বৈশ্বিক মহামন্দার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আমি বিশ্বের এই সংকটকালীন মুহূর্তে সমাজের ধনী ও বিত্তবানদের প্রতি আমাদের চারপাশে খেটে খাওয়া দিনমজুর-অসহায় মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এসব দরিদ্র জনগণের কষ্ট লাঘবে বিশেষ প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু করেছেন এবং তাদের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।’
সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী, বিশেষ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের গৃহীত কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা কোনও প্রকার গুজবে কান দেবেন না। সঠিক তথ্যের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যম তথা টেলিভিশন-রেডিও-সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রচারিত সরকারি নির্দেশনা মেনে চলুন। প্রয়োজনে সরকার নির্দেশিত হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন। মতলববাজ, গুজব সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে অবহিত করুন। এ ধরনের গুজব শুধু আমাদের সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।’
গোনিউজ২৪/এন