ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার ২ মাসে মানুষের জীবনাচরণে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন


গো নিউজ২৪ | মো: আব্দুল কাদের খান প্রকাশিত: মে ৭, ২০২০, ০৪:৪১ পিএম আপডেট: মে ৭, ২০২০, ১০:৪১ এএম
করোনার ২ মাসে মানুষের জীবনাচরণে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবকিছু থমকে আছে। লম্বা সময় ধরে মানুষ ঘরবন্দি। গত দুই মাসে মানুষের জীবনাচরণে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। করোনার কারণে সবখানে দেখা যাচ্ছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই চলছে অনলাইনে শিক্ষা  কার্যক্রম। বাসায় বসে অনেকে অফিসের কাজ সারছেন। শরীর চর্চাও চলছে বাসায় বসে। কেনাকাটায় নির্ভরতা বেড়েছে অনলাইনের ওপর। প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। করোনাভাইরাস একদিন বিদায় নেবে। সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে। 

পর্যটন ও ভ্রমণে আসতে পারে পরিবর্তন
করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পরিবর্তন চোখে পড়তে পারে পর্যটন ও ভ্রমণে। মানুষ একসময় প্রয়োজনের তাগিদে বাসা থেকে বের হবে ঠিকই; কিন্তু খুবই সচেতনভাবে চলাচল করবে। পর্যটন এলাকায় যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। ফলে পর্যটন এলাকাকে ঘিরে যেসব আবাসিক হোটেল গড়ে উঠেছে, সেখানে মন্দাভাব থাকতে পারে দীর্ঘসময়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভালমানের  হোটেল এবং এয়ারলাইন্স ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে শহরের হোটেলগুলোতে মানুষ ভয়ে ঢুকতে চাইবে না। সচেতনতার অংশ হিসেবে হোটেলের খাবার খাওয়া থেকে অনেকে বিরত থাকবে। তবে অনলাইনে খাবার গ্রহীতার সংখ্যা বাড়বে। তখন হয়তো কিছুটা হলেও শহরের হোটেলগুলো ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হবে। করোনার ভ্যাকসিন যতদিন আবিষ্কার না হবে, ততদিন ব্যক্তি পর্যায়ে সরাসরি সাক্ষাৎ কম থাকবে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো শিখতে বাধ্য হবে কীভাবে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়।  ব্যবসা পরিচালনা করতে আগামী দিনগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বিস্তার ঘটবে। আমরা বুঝতে সক্ষম হবো যে, সরাসরি সভা করা তেমন প্রয়োজন নেই। চাইলে যার যার জায়গায় বসেই সভা (মিটিং) করা যায়। এতে সময় বাঁচবে। 

মানুষের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়বে
করোনা পরবর্তী সময়ে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে চারা রোপণ হতে শুরু করে উৎপাদন, ধান উঠানো, মাড়ানো পর্যন্ত আমূল পরিবর্তন আসবে। কৃষি মন্ত্রণালয় আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানোর কাজ করছে। এর ফলে কৃষি কাজে তুলনামূলক কম মানুষের প্রয়োজন হবে। ফলে অনেকটা নিরুপায় হয়ে গ্রামের অনেকে চেষ্টা করবে শহরমুখী হওয়ার। তাই সরকারের এখনই উচিত হবে গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করা। 

শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন
করোনার প্রভাবে উন্নতবিশ্বে ইতোমধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষা কার্যক্রমে অনলাইন বা ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বেড়েছে। উন্নত বিশ্বে সামাজিক মাধ্যম জুম অ্যাপ ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। বাংলাদেশ সরকার এরইমধ্যে সংসদ টিভির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। আমাদের দেশেও ভার্চুয়াল আলোচনায় জুম অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে। যেহেতু সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে তাই আমাদের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের উচিৎ হবে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার উপর আরো জোর দেওয়া। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ভবিষ্যতে বাড়বে। 

অনলাইন ব্যবসার পরিধি বাড়বে
আমাদের দেশে ইতোমধ্যে অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে দেশে ভোগ্যপণ্য, প্রসাধনি সামগ্রী, গাড়ীর ব্যবসা, হাউজিং, চাকুরীর পরীক্ষা, অফিসের কার্যক্রম, প্রাথমিক চিকাৎসার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি সেবার পরিধি দিন দিন বাড়বে।

পারিবারিক নির্যাতন
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, করোনার প্রভাব পড়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পারিবারিক নির্যাতনের হার বেড়েছে তিন গুণ। যদিও বাংলাদেশে এই বিষয়ে এখনো কোনো গবেষণা প্রকাশ হয়নি। তবে পুরুষের আগের চেয়ে এখন ঘরে অনেক বেশী সময় দেওয়ার কারণে এবং কাজ না থাকার কারণে বা অতিরিক্ত ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর নির্ভর হওয়ার কারণে পারিবারিক নির্যাতন বাড়তে পারে। করোনার প্রভাবে দেশে বেকারত্ব বাড়বে। তখন দেশে চুরি, ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে।  

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা
করোনাভাইরাসের তথ্য গোপন করায় এরইমধ্যে চীনের ওপর চটেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্সসহ ইউরোপের দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের যে বিনিয়োগ চীনে রয়েছে তা পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে বাংলাদেশে একটা বড় অংশের বিনিয়োগ চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ আকর্ষণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারের উচিৎ এ বিনিয়োগ আর্কষণে নীতি কৌশল তৈরি করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) আরো সহযোগিতা করা। প্রয়োজনে বিনিয়োগকারীদের জন্য আরোও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা। বিদেশে বাংলাদেশের দুতাবাসগুলোকে বিনিয়োগ আকর্ষণে বেজার সঙ্গে এক হয়ে কাজ করা। আমরা এরইমধ্যে জেনেছি যে, জাপান সরকার চীন হতে তাদের শিল্প স্থানান্তরে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশী লাভবান হতে পারে। কারণ, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য পৃথক একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে। ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠার কাজ করছে জাপানেরই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সুমিটোমো করপোরেশন। আমার বিশ্বাস, জাপানি কম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসবে। 

লেখক : উন্নয়নকর্মী ও পরামর্শক, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)

গোনিউজ২৪/এন

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ