ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি পেতে পারো তুমি, তবুও তোমায় বানাব না স্বামী!


গো নিউজ২৪ | আব্দুস ছালাম প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০১৯, ১২:৪৬ পিএম আপডেট: এপ্রিল ২৫, ২০১৯, ১২:৪৭ পিএম
চাকরি পেতে পারো তুমি, তবুও তোমায় বানাব না স্বামী!

সম্প্রতী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সেশনজট নিরসন, ত্রুটিপূর্ণ ফল সংশোধন এবং ফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রতা দূর করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। আর সেখানে দেখা যায় বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে শিক্ষার্থীদের।তার মধ্যে একটি প্লাকার্ড বেশ ভাইরাল হয়েছে।

সাত কলেজের এক শিক্ষার্থীর হাতের প্লাকার্ডে দেখা যায়, ‘বেলা তুমি বিয়ে করে ফেলো, আমি শেসন জোটে আটকে গেছি’! কিন্তু কে এই বেলা? সন্ধানে নেমে গেলাম।খুঁজে পাওয়াটা মোটেই কঠিন হয়নি।কারণ টেবিলের উপরেই আছে চার্লজ ব্যাবেজের কম্পিউটারখানা।

প্রথমে ফেসবুকে, পরে ইউটিউব থেকে শুনে নিলাম ‘বেলা বোসে’র আসল রহস্য।শুনে আমিও একটু থমকে দাঁড়ালাম। বুকের মধ্যে এক অজানা টান অনুভব করলাম।মনে হলো বাস্তবতার কথাই বলেছেন শিল্পী।

অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত গানটিকে ঘীরেই এমন প্লাকার্ড তৈরি করেছে আমার সহযোদ্ধা।গানটি শুনে জানতে পেরেছি ফোনের ওপাশে থাকা প্রিয় ‘বেলা বোস’কে উদ্দেশ্যে করে অঞ্জন দত্ত বলেছিলেন, হৃদয় নিংড়ানো কিছু কথা।
অঞ্জন দত্তের গানটি হুবহু তুলে ধরা হল।

চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো
এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা
সম্বন্ধটা এই বার তুমি ভেস্তে দিতে পারো
মা-কে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো না
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি
আর মাত্র কয়েকটা মাস ব্যাস।

স্টার্টিংয়েই ওরা ১১০০ দেবে তিন মাস পরে কনফার্ম
চুপ করে কেন বেলা কিছু বলছো না,
এটা কি 2441139?

বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে?
১০-১২ বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি
দেবো না কিছুতেই আর হারাতে।

হ্যালো, 2441139

দিন না ডেকে বেলাকে একটিবার!
মিটারে যাচ্ছে বেড়ে পাবলিক টেলিফোনে
জরুরি খুব জরুরি দরকার ।

স্বপ্ন এবার হয়ে যাবে বেলা সত্যি!
এতোদিন ধরে এতো অপেক্ষা।
রাস্তার কতো সস্তা হোটেলে
বদ্ধ কেবিনে বন্দী দুজনে
রুদ্ধশ্বাস কতো প্রতীক্ষা
আর কিছু দিন তারপর বেলা মুক্তি।

কসবার ঐ নীল দেয়ালের ঘর
সাদাকালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে
তোমার আমার লাল-নীল সংসার ।

চুপ করে কেন একি বেলা তুমি কাঁদছো?
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি সত্যি
কান্নাকাটির হল্লাহাটির সময় গেছে পেরিয়ে
হ্যালো, তুমি শুনতে পাচ্ছো কি?

ধুর ছাই 2441139

কিন্তু বেলা বোস উত্তরে কী বলেছিলেন, সেটা কি কেউ জানে? এমনকি অঞ্জন দত্ত-ও তার উত্তর শুনলে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন! 

বেলা বোস হয়ত উত্তরটা এভাবে দিয়েছেন-

‘চাকরি পেতে পারো তুমি, তবুও তোমায় বানাব না স্বামী
১১০০ টাকা  তুমি পাও মাইনে,
এ দিয়ে কি করবে শুনি? 
চাইনিনজে যেতে ২২০০ লাগে, তারপর আমায় কে চালাবে?’

প্লাকার্ড হাতে যারা দাঁড়িয়ে আছে আমিও তাদের কাতারের একজন।ঢাকা কলেজের, অর্থনীতি বিভাগের ফল প্রত্যাশিত একজন ছাত্র।প্লাকার্ড হাতে আমার যে বন্ধুর হাতে ‘বেলা তুমি বিয়ে করে ফেলো, আমি শেসন জোটে আটকে গেছি’ লেখা প্লাকার্ডটি সে কি জানে যে, এত অল্প মাইনেতে চাকুরি করলে প্রিয়জন আসবে না!

আমার কাছে মনে হয়, চাকরিটা নিশ্চিত হওয়ার পরেও ‘বেলা বোস’ বিয়ে করবেন না! এর পেছনেও তো যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দেখুন বেলা বোসকে নিয়ে টেলিফোন যা বললেন, তার মধ্য অন্যতম হলো এগারোশত (১১০০) টাকা মাইনে পাবে! আবার তার মধ্যে হলো দোকোনি থেকে ফোন নিয়ে প্রিয় জনকে ফোন দেয়া।মিনিটের হিসেব কষা।

বন্ধু হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। এমন অনেক উদাহরণ আছে বেলা বোসরা তোমাদের জন্য কাঁদছে।পড়া-লেখার পাশাপাশি সবারই একটা স্বপ্ন থাকে ভালো চাকুরির।শেসন জোটসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিশ্চিত হবে।তবে, আমাদের শুধু চাকরি নির্ভর হওয়া যাবে না।নতুন কিছু নিয়ে ভাবতে হবে।নতুন কিছু করতে হবে।যার একটা সুস্থ্য শরীর আছে, সে শুধু চাকরির জন্য বসে থাকতে পারে না।

একজন ছাত্র শুধু নিজেকে একটা চাকুরির সীমানায় বন্দি করে রাখতে পারে না।রাখা যায় না।প্রিয় মাতৃভূমিকে কিছু দিতে হবে।আয়তন, চাকরি সর্বোপরি সুযোগের তুলোনায় সুযোগ নেই এমন সম্ভাবনাটাই আমাদের বেশি। তাই উদ্যোত্তা বিকল্প কিছু হতে পারে না।আমিও একজন ছাত্র।সবার একটাই ভিশন থাকা চাই, “আমি উদ্যোক্তা হতে চাই, আপনিও হোন”

আজ যে মাধ্যমে আমার লেখাটি পড়ছেন, তাদের মনে রেখতে হবে, ফেসবুকের জনক মার্ক জাকারবার্গ কথা। তিনি তার ক্লাসের কজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে নিজের বাসার গ্যারেজে বসে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। ক্লাসের লেকচারগুলো কীভাবে সহপাঠীদের সঙ্গে শেয়ার করা যায়, তার একটা উপায় উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেন। ডিজিটাল পদ্ধতির একটা সুন্দর ব্যবস্থাও তারা তৈরি করেন। কালক্রমে এর বিকাশ সাধন করেন। সেটাই আজকের ফেসবুক। 

বিলাত-আমেরিকায় বেশির ভাগ তরুণই নতুন কিছু করতে চায়। সেখানে উদ্যোক্তা হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ তরুণই চায় চাকরি করতে। উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা সবার নেই। 

এর কারণ কিছুটা প্রচলিত সামাজিক ধ্যানধারণা, আর কিছুটা তরুণদের উদ্যমের অভাব। ব্যবসার চেয়ে চাকরি ভালো, সম্মানজনক। আর ব্যবসা-বাণিজ্য করলে টাকার পেছনে ছুটতে হয়। ঘুষটুস লাগে। ওসব খারাপ। তাই সময় এসেছে, বাংলাদেশকে কিছু দিতে চাও? বেলাকে পেতে চাও? 

সুতরাং উদ্যোক্তা হয়ে যাও। তার মানে এই না যে চাকরি করাটা খারাপ। কেউ চাকরি করবেন, কেউ উদ্যোক্তা হবেন। এই দুয়ের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। 

মনে রেখো আগামী দিন উদ্যোক্তাদেরই। বিশেষভাবে এই ডিজিটাল যুগে একটা ল্যাপটপ নিয়ে যে কোনো জায়গায় বসে অনায়াসে একজন ভালো উদ্যোক্তা হয়ে যেতে পারেন আপনি। অথচ মাস্টার্স পাস করেও মাসের পর মাস ইন্টারভিউ দিতে দিতে আপনার স্যান্ডেলের তলা খসে গেছে, চাকরি জোটেনি। 

তবে উদ্যোক্তা হতে আপনার খুব দৃঢ় ভিশন থাকতে হবে। একটা স্বপ্ন থাকতে হবে। একাগ্র সাধনা থাকতে হবে। প্যাশন থাকতে হবে। থাকতে হবে জেদ। আর বিশেষভাবে দরকার আজকের যুগের জ্ঞানভিত্তিক চিন্তাভাবনা। 

বেলা ফিরে এসো বন্ধুর জীবনে।

লেখক ও সাংবাদিক

গোনিউজ২৪/এএস

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ