ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানবতাকে রক্তে রঞ্জিত করছে যারা, দুঃখ প্রকাশও করছে তারা!


গো নিউজ২৪ | আব্দুস ছালাম, সাংবাদিক প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০১৯, ০৪:০৩ পিএম আপডেট: এপ্রিল ২২, ২০১৯, ১০:০৩ এএম
মানবতাকে রক্তে রঞ্জিত করছে যারা, দুঃখ প্রকাশও করছে তারা!

একবিংশ শতাব্দি তো মানবতার বিজয়ের শতাব্দি হওয়ার কথা। নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকি সভ্যতার সোনালী যুগের সন্তান হিসেবে। কিন্তু পরিসংখ্যানটা অনেকটা সেই কাজী সাহেবের গোয়ালের মতোই। গরুর হিসাব কিতাবে আছে কিন্তু গোয়ালে নেই। মানবতার সোনালী দিনে নির্মমতার জয়ধ্বনির মিছিলটা মোটেও ছোট নয়। প্রতিনিয়তই বড় হচ্ছে। আমরা যারা নবীন তাদের চোখের সামনে যা ঘটছে, এমন বিভীষিকাময় সময়টাকে কীভাবে বলি আমার জম্ম সভ্যাতার যুগে?

এই তো বেশি দিন হয়নি। ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের একটি পৃষ্ঠা উল্টালেই দেখা মিলবে ভয়াবহ এক হত্যাযগ্যের ঘটনা। কারো বুঝতে দেরি হওয়ার কথা নয়। শান্তি প্রিয় দেশ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে নিকৃষ্ট হামলরা কথা। ঠিক তার ৩৫ দিনের মাথায় আবার প্রার্থনারত মানুষের রক্তে ভাসল বিশ্ব। 

দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কায় রোববার (২১ এপ্রিল) খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সকালটি শুরু হয়েছিল উৎসবমুখর পরিবেশে। খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাসীদের জন্য খুবই আনন্দের ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন ‘ইস্টার সানডে’। সে উপলক্ষে গির্জায় সমাগম ঘটেছিল বহু মানুষের। অথচ পবিত্র এই দিনটি রক্তাক্ত হলো সহিংসতার হিংস্র থাবায়। সেখানে একাধিক বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত ২৯০ জন নিহত হওয়ার খবর জানা গেছে। মৃত্যুর এই মিছিল থামবে কখন, তার জন্য অপক্ষো করতে হবে। চাপা উত্তেজনায় কেটেছে প্রতিটি মুহূর্ত, উদ্ধার হয়েছে একের পর এক লাশ। বিশ্বজুড়ে চলছে নিন্দার ঝড়, আক্রান্ত শ্রীলঙ্কার প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছে পুরো পৃথিবী। এর আগেও সিংহলীদের দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে চলতি ঘটনাটি ছাপিয়ে গেছে অতীতের সব কিছুকে।

১৯৯৫ সালে গৃহযুদ্ধ চলাকালে অনুরূপ আরেক বোমা হামলায় দেশটিতে ১৪৭ জন খ্রিষ্টানকে হত্যা করা হয়েছিল। ২৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে চলা ওই যুদ্ধে দেশের জনসংখ্যা, পরিবেশ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের ক্ষতির সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রাথমিক হিসাব অনুসারে ৮০,০০০-১,০০,০০০ জন মানুষের জীবনহানির কারণ হয়েছে।

সেটা বিংশ শতাব্দিতে। এবার একবিংশ শতাব্দি। আমাদের হাতে আছে চৌকস বাহিনী। যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগে আমরা আঁচ পাই। কিন্তু কীভাবে অপরাধীরা আমাদের বিচক্ষণতাকে ফাঁকি দেয়? উত্তর খুঁজতে হবে, উত্তরের সন্ধানে চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে এমনটা আমার যারা ভালো আছি তাদের ‍উপরেও আসলে কেমন হবে? তাহলেই মিলবে সমাধান। 

এই ধরনের একটি বড় আকারের সন্ত্রাসী হামলার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তো অনেক সময় লেগেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দারা তা আঁচ করতে পারলেন না, যা তাদের ব্যর্থতারই প্রমাণ। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ১১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার পুলিশপ্রধান দেশের সর্বত্র পাঠানো একটি অভ্যন্তরীণ ‘গোয়েন্দা সতর্কবাণী’তে দেশের উল্লেখযোগ্য গির্জাগুলোয় আত্মঘাতী বোমা হামলার আশঙ্কা করেছিলেন। একই কাণ্ড ঘটেছিলো নিউজিল্যান্ডেও। কিউই প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্নও সন্ত্রাসী হামলার পূর্বাভাস জানতেন। কিন্তু তিনিও কোনো পূর্ব ব্যবস্থা নেননি। হামলার পর তার চলনে-বলনে সবাই বেশ খুশি হয়েছিল। আমি হতে পারিনি। কারণ তিনি যা-ই করুণ না কেন, তিনি দোষ এড়াতে পারেন না। কারণ তিনি পূর্বেই ওয়াকিফহাল ছিলেন। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীও পূর্বেই জানতেন। কিন্তু কি করলেন তিনি...

হামলার পর প্রধানমন্ত্রী রানিল ভিক্রামাসিংহে বলেছেন, তার সরকারের কাছে এই ধরনের হামলার আগাম তথ্য ছিল। কিন্তু সরকার এই বিষয়ে নির্বাক (প্রিভেন্টিভ) কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তার কাছে যে তথ্য ছিল, তাতে হামলাকারীরা স্থানীয় বলে বলা হয়েছিল। কেন নিবারক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

ছোট্ট, সুন্দর দেশটিতে এমন নৃশৃংস হত্যাযজ্ঞ আমাদের কিসের বার্তা দেয়? এমন প্রশ্ন করলেও আমাদের ভাবনায় কিছু যায়-আসে না। কারণ মানবতার কল্যাণে কাজ করায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন আমাদের প্রতিবেশী দেশের প্রধান অং সন সুচি। মানবতার কল্যাণে পুরস্কার পাওয়া এই ফেরিওয়ালা কি করেছেন? তাহলে কি এমনটাই ঘটে যাবে প্রতিনিয়তই? হ্যাঁ, বিশ্বকে একীভূত করার জন্য যে জাতি সংঘটিত হলো তারাও তো নির্বিকার! বিশ্ব মোড়লরাই তো সব করছেন নিজের মতো করে।

হিংসা, দ্বন্দ্ব ও লোভের মত্ততায় ক্রমেই বাড়ছে মানুষের ওপর মানুষের এমন নানা অমানবিক নির্যাতন। ইংরেজি Humanism বা বাংলায় মানবতাবাদ। একটি সাঁতার না জানা শিশু পানিতে পড়লে, সে কোন ধর্মের, কোন বর্ণের, কোন গোত্রের, কোন দেশের? এ সব বিবেচনা না করে, প্রথম যে কাজ তা হলো আগে শিশুটিকে বাঁচাতে হবে। 

শুধু শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া এই বিষয় নিয়েই বলছি না। মানবতা নষ্টের ইস্যু ইতিহাস হয়ে আছে গোটা বিশ্বজুড়ে। হিটলার যে ইহুদিদের মেরে ফেলেছেন সেখানে মানবতা লঙ্ঘিত হয়েছে তখন। 

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল সেখানে মানবতার বিরুদ্ধাচরণ করা হয়েছে নিঃসন্দেহে। হালাকু খাঁ যখন বাগদাদ আক্রমণ করে নৃশংসভাবে কত মানুষ মেরেছিল তা মানবতার মধ্যে পড়তে পারে না। বর্তমান ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে অবিরত যা ঘটছে তা অবশ্যই মানবতাবাদের দর্শন নয়। জম্মু ও কাশ্মিরের এতদিন ধরে বিরোধের জেরে যা ঘটছে বা যে ভাবে মানুষ মরছে তা মানুষ কখনো প্রত্যাশা করে না, যদি সে মানুষ হয়ে থাকে। 

যা বলতে চাই, পৃথিবীতে কোনো হত্যাকাণ্ডই বৈধ নয় কাঙ্খিতও নয়। কেউ যদি মানুষ হত্যা করে তো সে গোটা মানবজাতিকে হত্যা করে। প্রতিটি ধর্মের একটি দর্শন- হত্যা চলবে না। তাহলে প্রশ্ন সঙ্গত- ‘কেউ যদি তোমাকে বা তোমার ভাইকে হত্যা করে, তাহলে কী হবে?’ সোজা উত্তর কেউ অন্যায় করলে আইনি বিচারে তার সমাধানের ব্যবস্থা আছে এবং সেটা মেনে নিতে বাধ্য থাকবে মানুষ। কিন্তু শক্তি আছে তাই অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা কেউ কখনো সমর্থন করতে পারে না। 

শ্রীলঙ্কার এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বনেতারা সবাই শোক প্রকাশ করবেন, করছেন। এই তালিকায় থাকবেন অং সন সুচি,  ট্রাম্প, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং পুতিনরা। নামগুলো আপনাদের সকলে পরিচিত। অবাক হয়ে যাই এখানে এসে, যে যারা প্রতিনিয়ত মানবতার গলা টিপে ধরছে তারাই তো ফের দু:খ প্রকাশ করছে!

লেখক: সাংবাদিক

গো নিউজ২৪/আই

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ