ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে শব-ই-বরাত বিদআত নয়


গো নিউজ২৪ | গোনিউজ ডেস্ক: প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০১৯, ০১:২৪ পিএম আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০১৯, ০২:২১ পিএম
যে কারণে শব-ই-বরাত বিদআত নয়

শুরুতেই বলে নিই, আমি কোনো ইসলামি গবেষক নই, পবিত্র কোরআন, হাদিস নিয়েও গবেষণার সৌভাগ্য কিংবা পরিপূর্ণ জ্ঞান আমার এখনো হয়নি। কিন্তু পবিত্র শব-ই-বরাত নিয়ে কিছু সংখ্যক আলেম আর মুসলিমের মন্তব্যের পর আসলে ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে কিছু না বলে পারছি না। কিছু আলেমদের মতে, শব-ই-বরাতের কোনো ভিত্তি নেই। এই রাতে ইবাদত করাও নাকি বিদআত। আবার কারো মতে ঠিক আছে।

যারা বিদআত দাবি করেন তাদের কোরআন হাদিসের আলোকে জবাব দিতে না পারলেও সুক্ষ্ম জ্ঞান থেকে বলতে চাই, আসলে আমরা মুসলিমরাই পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কঠিন করে ফেলছি। ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিন্তু এই ধর্মের বিভিন্ন বিষয় কিছু মানুষ এমনভাবে উপস্থাপন করছেন যে ইসলামের চেয়ে কঠিন ধর্ম আর কিছুই নেই। যারা শব-ই-বরাত কিংবা এই রাতের ইবাদতকে বিদআত বলে দাবি করেন, তারা নিশ্চয়ই বর্তমান যুগ সম্পর্কে ধারণা রাখেন।

শেষ জমানায় ঈমান ধরে রাখা আর আগুনের ফুলকি হাতে রাখা প্রায়ই সমান। যে সম্পর্কে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ও সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছিলেন। চারদিকে যে পরিমাণ গুনাহের ছড়াছড়ি। হাতেগুনা কয়েকজন ছাড়া আর কোনো মুসলিমই তো পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ পাকের ইবাদত করি না কিংবা হুকুম পালন করি না। তারপরও মহান আল্লাহ পাক পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি নিশ্চয়ই সবকিছু জানেন এবং বুঝেন। তাই তিনি ক্ষুদ্রতম একটি ঈমান আমলের জন্যও বান্দাদের মাফ করে দিতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ উনার এখতিয়ার।

কিন্তু যারা বলেন, শব-ই-বরাতের ইবাদত সম্পর্কে কোথাও নির্দিষ্ট করে বলা নেই। তাই এই রাতে ইবাদত করা বিদআত। সেই ক্ষেত্রে তাদের কাছে প্রশ্ন তাহলে কোথায় সুনির্দিষ্ট করে বলা আছে যে, এই রাতে ইবাদত করা যাবে না। এমনিতেই তো আমরা হুজুগে মুসলিম। আল্লাহ পাক যা পালন করার জন্য হুকুম করেছেন সেটা পালনে খামখেয়ালি করি। কিন্তু যা পালনের জন্য হুকুম করেননি সেটা পালনে সবাই খুব পারদর্শী।

এক তাফসিরের বয়ানে শুনেছিলাম। কেউ যদি কোনো তাফসির মাহফিলে হামলা করার জন্য বোমা নিয়ে আসে। তারও নাকি সওয়াব আছে। কারণ হামলার আগে তাফসিরের একটা বাণীর উচিলায় আল্লাহ পাক ওই ব্যক্তিকে তো হেদায়েতও দিয়ে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ইবাদতবিমুখ মানুষগুলো যদি এই একটি রাতের উছিলায় আল্লাহ পাকের ইবাদতে মশগুল থাকেন তাহলে ক্ষতিটা কোথায়। আল্লাহ পাকের ইবাদত নিয়েও কেন এত দ্বিধাদ্বন্দ্ব।

ইসলামে জন্মদিন পালনের বিষয়ে নির্দেশনা নেই, মঙ্গল শোভাযাত্রার বিধান নেই। কিন্তু নিজেদের মনগড়াভাবে সেগুলো ঠিকই পালন করে যাচ্ছি। কই সেগুলোকে তো অনেকেই বিদআত বলছি না। তাই ইসলামের পরিপন্থী বিষয় ব্যতীত ইবাদত সংক্রান্ত বিষয়ে বিদআত বলা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটার ভার প্রকৃত মুমিনদের কাছেই ছেড়ে দিলাম।

আল্লাহ পাক সরাসরি হুকুম করেছেন, তোমরা নামাজ পড়, মিথ্যা বলো না, সুদ-ঘুষ খেয়ো না। অন্যের হক মেরে খেওনা। কই কেউই তো পরিপূর্ণভাবে এই হুকুমগুলো মানছি না। কিন্তু যে বিষয়ে আদেশও দেননি কিংবা নিষেধও করেননি। সেগুলো নিয়ে কিছু মানুষের নানান ধরনের মত। তবে হ্যাঁ অনেকেই আবার এই ধারণা নিয়ে থাকেন যে, এই রাতে ইবাদত করলেই সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। বেহেস্তে চলে যাওয়া যাবে। যা চাইবেন আল্লাহর কাছে তাই পেয়ে যাবেন। এই ধারণা পোষণ না করে শুধুমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করাটাই শ্রেয়। আর এই ইবাদতের উচিলায় তিনি বান্দাদের কী পুরস্কার দিবেন সেটা শুধুমাত্র তিনিই ভালো জানেন।

আল্লাহ পাক বলেছেন, তোমরা আমার হুকুম পালন কর। ইবাদত কর। কিন্তু কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে সারাদিন ইবাদত করার হুকুম করেননি। এরপরও কিছু মুমিন আছেন যারা দিনের অধিকাংশ সময়ই ইবাদতের পেছনে ব্যয় করেন। এর কারণ তাদের মনে আল্লাহ পাকের ভয় আছে। তারা মহান আল্লাহ পাককে ভালোবাসেন। আর এমন মুমিনকে আল্লাহ পাকও তো অপছন্দ করেন নি।

তিনি তো বলেননি, ২৪ ঘন্টাই তোমাদের ইবাদত করার হুকুম দেইনি। তারপরও তোমরা কেন করতেছ? বরং যে ব্যক্তি বাড়তি সওয়াবের আশায় বেশি বেশি ইবাদত করে তাদেরও আল্লাহ নিরাশ করেন না। ঠিক তেমনই যারা বলেন আজকের রাতের ইবাদতের কোনো নির্দেশনা নেই, তাই এটা বিদআত। তারাও আজকে একটু নামাজ-কালাম পড়েন। ইনশাল্লাহ আল্লাহ পাক হেদায়েত দিলেও দিতে পারেন। হয়তো বলতে পারেন। সারা বছর ইবাদত করি না। এই রাতে ইবাদত করলেই কী একদম ঈমানদার হয়ে যাব? না, সেটা না হলেও মন থেকে ইবাদত করলে আল্লাহ পাক যে সওয়াব দিবেন না সেটার গ্যারান্টিও তো কেউ দিতে পারি না।

মো. আতিকুর রহমান (মিঠু)। শিক্ষার্থী ও প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর অনুসারী।

গোনিউজ২৪/এআরএম

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ