ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে মাশরাফী ও পূর্বাপর ভাবনা


গো নিউজ২৪ | হাশিম রেজা প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০১৮, ০৩:০৬ পিএম আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০১৮, ০৯:২৮ পিএম
রাজনীতিতে মাশরাফী ও পূর্বাপর ভাবনা

মাশরাফী রাজনীতিতে পা রাখার পর স্বভাববিরুদ্ধ গিয়ে দুইটা সাময়িক পোস্টে দুইটা মধ্যম মানের বাজে শব্দ ব্যবহারের কারণে #স্যরি বলার দায়বদ্ধতা থেকেই লিখছি। আজ বেশ কিছু দিন পর তার পেজে দেওয়া একটা পোস্টে কমেন্টগুলা পড়ে এবং অবশেষে ঐ পোস্টে কমেন্ট সিস্টেম ডিজেবল দেখে (এমন দিনও তার পেজে আসলো) মনে হলো, আসলেই কিছু লেখা উচিৎ। যেহেতু, ক্রিকেটার প্লাস রাজনীতিবিদ মাশরাফীকে নিয়ে কিছু লিখছি, তাই এখানে অবধারিতভাবেই খেলা ও রাজনীতি ২ টাই আসবে।

মাশরাফীর রাজনীতিতে আসায় হঠাৎ অনেক বেশি বিক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ ছিলো, একই সাথে সাকিবের নামটাও আসার কারণে-যার সামনে কিনা এখনো ৮/৯ বছরের ক্যারিয়ার পড়ে আছে।মাশরাফী অবসর নিয়ে রাজনীতিতে আসলে তাকে স্বাগত জানানোর মেন্টালিটি আমার আছে, পরিষ্কাররূপেই আছে।তার রাজনীতিক আদর্শ আমার পছন্দ না, কিন্তু সেই আদর্শের বিরোধী আদর্শে আসলেই যে স্বাগত জানাতাম ব্যাপারটা এমন না।কারণ, আমার কাছে দেশের ক্রিকেট দেশের বাকি সব কিছুর চেয়ে বড়।এটা যারা আমাকে চেনে তারা ভালোভাবেই জানে।

একটা দীর্ঘ সময় ভেবেছি, মাশরাফী যেদিন অবসর নিবে- সেদিন কী হবে? সারা দেশে অদ্ভুত এক নিরবতা বিরাজ করবে, ফেসবুকে কোটি কোটি মাশরাফীনামা স্ট্যাটাস আসবে,বিশাল মানের পেটুকেরও হয়তো খেতে ইচ্ছে করবে না, রিকসাওয়ালা মামাটা হয়তো শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে কোথাও যেতে চাইবে না, মোড়ের চাওয়ালা হয়তো ডায়াবেটিস আক্রান্ত এলাকার মুরুব্বীর চায়ে ভুলে তিন চা চামচ চিনি দিয়ে ফেলবে,ভাই-বোনের মিষ্টি খুনসুটিটা ঐ দিন আর নতুন মাত্রা পাবে না, লাখো তরুণ চোখে আনন্দ বেদনা মিশ্রিত অশ্রু লুকাবে।কেমন হবে সে দিনটা?অন্য রকম একটা দিন।যে রকম দিনটা এ দেশে আর কখনও আসেনি।

আক্ষেপ সেই দিনটা আর আসবে না।এখন তিনি যেদিন অবসর নিবেন, সেদিন যতটানা প্রশংসা আসবে, তারচেয়ে বেশি হয়তো স্ল্যাং আসবে।স্বপ্নের সেই দিনটা হারানোর আক্ষেপটা করতে চাইনি বলেই তাকে এখন রাজনীতিতে দেখতে চাইনি।

বাংলাদেশ এই প্রথম একটা বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখছে।সেই যার হত ধরে স্বপ্নটা দেখছে, তার মনোযোগ অন্যদিকে দেখেই মনে কষ্ট পেয়েছে অসংখ্য ভক্ত যাদের কাছে রাজনীতিক দর্শন কোনো ব্যাপারই নয়।বরং, যারা তাকে ব্যবহার করে সারা বাংলায় একটি নির্দিষ্ট প্রতীকের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে-ব্যক্তি মাশরাফী অপেক্ষা ঐ নির্দিষ্ট প্রতীকটাই তাদের কাছে বড়।

হুমায়ন আহমেদ, সালমান শাহ, হানিফ সংকেতের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করেই বলছি গত দুই-তিন দশকে দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন মাশরাফী।দল, মত, বিতর্কের উর্ধে তার জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশছোঁয়া। এমন একটা মানুষ, যার কোনো হেটার ছিলো না।সেই মানুষটার জনপ্রিয়তা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় আমার মনে হয়েছে এই মুহুর্তে তার রাজনীতিতে না আসাটাই উচিত ছিলো।আত্মনিবেদন, পরিশ্রম,দেশপ্রেম, সততার যে উদাহরণ তিনি ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ দলে তৈরি করেছেন, হয়তো নিজের অজান্তে অনেক ক্রিকেটারকেই এটাও শিখিয়ে গেলেন যে, খেল না ছেড়েই তোমরা অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থে বিভিন্ন দলের রাজনীতিতে আসতে পারবে।আবার এমন উদাহরণ আর কখনোই নাও আসতে পারে, সেটাও তার আগামী দিনের পরিণতির কারণেই হতে পারে।

তিনি সরকারী দলে যোগ দিয়েছেন,সেই অর্থে সরকারের গত এক দশকের ভালো কাজের দায় যেমন তার উপর বর্তায় তেমনি খারাপ কাজগুলার ভারও সমর্থক সূত্রে তাকে বইতে হবে।রাজনীতিক কারণে খুন বা গুম হওয়া অসংখ্য বাবা বা ভাইয়ের সন্তান বা ভাই বা বোন বা স্ত্রীর বা বাবা-মার কান্নার ভারও তার উপর আংশিক বর্তায়।গুম হওয়া বাবার যে সন্তানটি শুধু তাকে দেখেই আনন্দে মাততো-জানি না, সেই সন্তানটি তাকে দেখে এখন কতটা ভালোবাসা আর কতটা ঘৃণা প্রকাশ করে।

দেশের রাজনীতিতে এখনও একটা জবরদস্তি, স্বাধীনতাহীনতা, স্বেচ্ছাচারের ভাব রয়েছে,ভোটিং সিস্টেমে দৃশ্যমান নগ্ন পক্ষপাতিত্ব রয়েছে, আর এই অবস্থাতেই কি না তাকে রাজনীতিতে আসতে হল!!"আর কিছুদিন কি অপেক্ষা করা যেতো না?যদি কেউ ভাবে, খেলা ছাড়ার পর তার এই ক্রেজ থাকতো না, তবে সেই ধারণার সাথে আমি একমত নই।মাশরাফী এমন একটা উচ্চতায় ছিলেন, যেখান থেকে তিনি নিজে না নামলে কেউ তাকে নামাতে পারতো না।

তার পক্ষে কি ইমরান খানের মত দল গঠন করে বড় কিছু করা সম্ভব ছিলো?হয়তো ছিলো হয়তো নয়।তবে এ দেশে যদি কারো পক্ষে দুই দলের রাজনীতিক আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার মত অবস্থান থাকতো, সেটা মাশরাফীরই ছিলো, আর কারো নয়।তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবের সবেধন নীলমণি সম্ভাবনা হারানোটাই এ দেশের অন্যতম বড় ক্ষতি।

মাশরাফীর পক্ষে কি একা রাজনীতিতে পরিবর্তন আনা এখনও সম্ভব? না।। যে দেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের মতো কালো আইন আছে, সেখানে দলীয় রাজনীতি মানেই হলো জ্বী হুজুর টাইপ রাজনীতি।নিজ দলের তোষণ আর অপর দলকে শোষণের বাহিরে যাওয়ার ন্যুনতম সূযোগও নাই।নয়তো সোহেল তাজের মতো বিতারিত হওয়াটাই নিয়তি।

মাশরাফীর পেজে হাজারো স্ল্যাংকে হয়তো কেউ কেউ বিরোধীদের অন্তর্জালা বলেই পালটা স্ল্যাং ঝারবেন। মাশরাফীর পেজ মানেই এখন আর দশটা সাধারণ পেজের মত পরস্পর বিরুদ্ধ স্ল্যাং চর্চা কেন্দ্র, অথচ, কতই না আবেগী ভালোবাসাময় ছিলো পেজটা ।বাট, আমি এটা চাইনি।কি এমন ক্ষতি ছিলো যদি এমন একটা মাশরাফী থাকতো, এমন একটা মাশরাফী, সারা বাংলাতেও যার একটা হেটার থাকবে না।আক্ষেপ,সরকারীভাবে ড. ইউনুসের কোটি হেটার্স সৃষ্টির পর সর্বজন জয়ী অবশিষ্ট উদাহরণটিও আর থাকলো না।অনেক পরের প্রজন্মের কাছে ষোলো কোটি মানুষের চোখের মণি বলার মতো আর কেউ রইলো না।

কার কি মনোভাব আমি জানি না, মাশরাফী অন্য দলের রাজনীতিতে আসলেও সহজে মানতে পারতাম না।দ্বিধা বিভক্ত এই দেশটার ঐক্যের একমাত্র প্রতীক বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম।সেই টিমের ক্যাপ্টেন থাকা অবস্থায় তিনি যে কোনো একটি বিশেষ দলের প্রতীক হয়ে উঠবেন- এমনটা প্রত্যাশিত ছিলো না।আমার তো মনে হয় সাংসদ হওয়ার জন্য মাশরাফী নামটাই যথেষ্ঠ ছিলো, কোনো মার্কা নয়।আবারো বলি, তা অবশ্যই দেশকে নির্দলীয় থেকে আরও কিছু দেওয়ার পর।

মাশরাফীর একটা বিশাল ফ্যানবেজ কমে যাওয়াটাই আমার দুঃখ।তার অবসরের দিনে যে কোটি পোস্টে বক্রোক্তি আসবে এটাই আমার দুঃখ।যদি কোনো দিন ফুটবলার আমিনুল ইসলামের মতো তাকে পুলিশ ভ্যানে দেখতে হয়-সেটাই আমার আগাম দুঃখ।ষোলোকোটি লাভার্স থেকে হঠাৎ আবির্ভুত কোটি কোটি হেটার্স ই আমার দুঃখ।কী এমন হতো- যদি মাশরাফী নামক একটা নাম থাকতো,সারা দেশের মানুষের ঐক্য, ভালোবাসার প্রতীক হয়ে? আক্ষেপ....

শুভ কামনা মাশরাফী।রাজিনীতিক পথ চলা শুভ হোক।আগামীর প্রতিটি দিন সুন্দর হোক আপনার।

বি.দ্র : লেখকের একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। 

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ